ঢাকা: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে কালো রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত গণহত্যার নানা চিহ্ন পরিদর্শন করেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত দল। পরিদর্শনের শুরুতেই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালুমনাই এসোসিয়েশনের শাপলা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ-উপাচার্য হারুন-উর-রশীদ, ৭১‘ এ পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।
মঙ্গলবার তদন্ত দল প্রথমে জগন্নাথ হলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যার শিকার শহীদের স্মরণে নির্মিত দু’টি স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেন। তারা সৌধে নামাঙ্কিত শহীদদের সম্পর্কে নানা খোঁজ খবর নেন।
তদন্ত দলের নেতৃত্ব দেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু। এদের সঙ্গে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ-উপাচার্য হারুন-উর-রশীদ, ৭১‘ এ পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত ঢাবি শিক্ষক আ ন ম মনিরুজ্জামানের ছেলে জাকারিয়া মাসুদ এবং মধুর ক্যান্টিনের স্বত্বাধিকারী শহীদ মধু দে’র ছেলে অরুণ কুমার দে।
পরে পরিদর্শক দল শামসুন্নাহার হলে থাকা গণকবর পরিদর্শন যান। এরপর আসেন রোকেয়া হলে। রোকেয়া হল থেকে তারা আসেন জহুরুল হক হলে।
জহুরুল হক হলে ঢুকে তারা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মো. শামসুদ্দিন ও মো. জলিলের কবর পরিদর্শন করেন।
এখানে ঢাবি উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর এবং তদন্ত কর্মকর্তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে এসেছেন। তারা এখানে অবস্থিত বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করলেন। শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে কথাও বলেছেন। ’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের যে দাবি রয়েছে সেটার কথাও বলেছি। ’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আপনাদের দাবি কী এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘৭১’ এর ২৫ মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যে গণহত্যা ও বর্বরতা চালিয়েছিল আমরা তার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। পাক হানাদর বাহিনীকে সাহায্যকারী রাজাকার, আলবদর, আলশামস সবার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি। ’
এ বিচার দ্রুত সম্পন্ন হোক সেই দাবিও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষকদের সহায়তায় পাক হানাদার বাহিনী এ গণহত্যা চালিয়েছিল বলে প্রশ্ন করলে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি ক্ষুদ্র একটা অংশ তাদের সহায়তা করেছিল। ’
এসব সহায়তাকারী শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে সহায়তা করেছিল তাদের চিহ্নিত করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘কালের বিবর্তনে তাদের অনেকেই মৃত্যবরণ করেছেন আবার অনেকে দেশের বাইরে আছেন। যারা দেশের বাইরে আছেন তাদের দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। ’
ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘যে ধরনের সহযোগিতা প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তারা চাইবেন আমরা সে ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করবো। সাহায্য সহযোগিতায় কোনও কার্পণ্য থাকবে না। ’
অন্যদিকে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, ‘আমরা যা দেখতে এসেছিলাম তা যথার্থভাবে দেখেছি এবং সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, শিক্ষিকা ও কর্মচারীদের সহযোগিতায় আমরা অভিভূত। ’
বিচার কাজের দ্রুততা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘কত দ্রুত নয়, কত সঠিকভাবে কাজটা করতে পারি সেটাই হচ্ছে বিবেচ্য বিষয়। ’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘দেশের ভেতরে আমরা বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি। দেশের বাইরে যে তথ্য প্রমাণ আছে তা সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ’
এরপর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি ফলকে এসে যাত্রা বিরতি করেন পরিদর্শক দল।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১০