মধ্য লন্ডনের হোটেল হিলটন থেকে: লন্ডন সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার লন্ডন সময় সকাল ১১টা ও বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় লন্ডনের হোটেল হিলটনের নিজ স্যুটে ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক টেলিগ্রাফকে একটি সাক্ষাৎকার দেন।
সাক্ষাৎকারে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ, সাম্প্রতিক সময়ে র্যাবের কর্মকান্ড নিয়ে বিতর্ক নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা।
সাক্ষাৎকারটি আগামী সপ্তাহের কোনো এক সময় টেলিগ্রাফে প্রকাশ হওয়ার কথা থাকলেও এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন হিসেবে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এটি আগেই প্রকাশ করার অনুমতি পায় ডেইলি টেলিগ্রাফ এর লন্ডন এডিটর চ্যানেল ফোর খ্যাত, চরমপন্থা বিরোধী সাংবাদিক অ্যান্ড্রু গিলিগানের কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় গিলিগানের সঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর লন্ডন প্রতিনিধি সৈয়দ আনাস পাশা। টেলিগ্রাফকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখন পর্যন্ত অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন ‘চরমপন্থী জঙ্গিদের কোনো ধর্ম নেই, সীমানা নেই’।
এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিক কাউন্সিলার টিউলিপ সিদ্দিকী। অন্যান্যের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, রেহানার ছোট মেয়ে রুপন্তী ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরীও এসময় উপস্থিত ছিলেন। প্রায় চল্লিশ মিনিটের এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র, ধর্মের নামে সৃষ্ট চরমপন্থাবিরোধিতা এবং শান্তি ও প্রগতির পক্ষে তাদের অবস্থানের বিষয়টিও অবহিত করেন ব্রিটিশ ওই সাংবাদিককে।
আলোচনার শুরুতেই উঠে আসে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিছু তরুণের ইসলামিক চরমপন্থী সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গটি। এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, চরমপন্থি জঙ্গিদের কোনো ধর্ম নেই, কোন সীমানা নেই। এদের ধর্ম সন্ত্রাস। সারা পৃথিবী এদের ভৌগলিক সীমানা। সুতরাং ব্যক্তি বা গোষ্ঠি পর্যায়ে কারো কারো উগ্র চরমপন্থা-সংশ্লিষ্টতা কোনো জাতিগত বা
ধর্মগত পরিচয়ের মধ্যে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। এদের পরিচয়, এরা সন্ত্রাসী, এদের অপকর্মের কোন সীমানা নেই। এদের অপকর্মের জন্যে কোনো দেশ বা কোনো ধর্মকে দায়ী করা মোটেই ঠিক নয়।
ব্রিটেন থেকে সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশে গিয়েও তাদের কর্মকান্ড চালানোর চেষ্টা করতে পারে, সম্প্রতি লন্ডনে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীর করা এই মন্তব্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছি চরমপন্থি জঙ্গিদের কোনো ধর্ম নেই, সীমানা নেই। এরা যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় তাদের তৎপরতা চালাতে পারে। এর জন্যে কোনো দেশ দায়ী হতে পারে না, দায়ী হতে পারে না কোনো ধর্মও। ব্রিটেনের সন্দেভাজনদের বাংলাদেশে বিস্তৃতি বিষয়ে তিনি চিন্তিত কি না, এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিটেন-বাংলাদেশ উভয় দেশ পারষ্পরিক সহযোগিতায় এই সমস্যাটি মোকাবেলায় সম বলে আমি মনে করি। ’
জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ থেকে এখানে বেশি সক্রিয়। এর কি কারণ থাকতে পারে?-- সাংবাদিক অ্যান্ড্রু গিলিগানের এই প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকারের, আমাদের নয়। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঐ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী ব্রিটেনে এসে আশ্রয় নিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে হয়তো এই অবস্থান তৈরি করেছে।
অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ শন্তি ও প্রগতির চেতনায় পরিশুদ্ধ বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই মৌলবাদী শক্তি (জামায়াত) বাংলাদেশে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারছে না।
উগ্র চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের নেওয়া চলমান পদক্ষেপ তিনি সন্তুষ্ট কি না, এ প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পারষ্পরিক সহযোগিতায় এই সমস্যাটি মোকাবেলা করার চেষ্টা করছি। তথ্যের আদান প্রদানের ফলে উভয় দেশই এক্ষেত্রে লাভবান হচ্ছে।
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন যুদ্ধাপরাধী ব্রিটেনে রয়েছে। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য এদের ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো চেষ্টা হবে কি না। জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবেই কাজ করছে। তারা কাকে কোন সময় ট্রাইব্যুনালে তলব করবে এটি তাদের এখতিয়ার। ট্রাইব্যুনালের কাছে আমাদের সরকারের শুধু একটাই চাওয়া—বিচার যেন হয় স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের।
যুদ্ধাপরাধ বিচার কার্যক্রম চালাতে গিয়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমস্যাতো কিছু থাকবেই। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত এই শক্তির পেছনে আমাদের বিরোধী দলেরও মদদ রয়েছে। তবে এই বিচারের পক্ষে বাংলাদেশের জনগণের যে দৃঢ় অবস্থান তাতে আমি আশা করছি, বিচারটি যথাসময়েই শেষ হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ব্রিটেনে আশ্রয় নেওয়া যুদ্ধাপরাধী সমর্থকরাও বিচারটিকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা করছে, এমন অভিযোগও রয়েছে। এই শক্তি ব্রিটেন-বাংলাদেশ দুদেশেই সক্রিয়। ’
‘দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর কেন এই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল?’-- এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের প্রণীত যুদ্ধাপরাধ আইনে ৭১ এর মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের দায়ে অভিযুক্তদের কারো কারো বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। কিন্তু ’৭৫ এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সামরিক সরকার মতায় আসে। এরপর সে বিচারটি আর অগ্রসর হয়নি। শুধু তাই নয়, ঐ সময় ’৭১ এর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত অনেককে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেওয়া হয়। সংগঠিত হতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি। দেশে বাড়তে থাকে হত্যা ও ধ্বংসের রাজনীতি। গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় নামে বেনামে সামরিক শাসন। হরণ করা হয় জনগণের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা। গণতান্ত্রিক ইন্সটিটিউশনগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ফলে দীর্ঘ আত্মত্যাগের ফসল দেশটিতে চলতে থাকে এক অরাজক অবস্থা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘ চল্লিশ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনকাল মাত্র ১০ বছর। আজকের প্রধান বিরোধী দলের জন্মদাতা সামরিক শাসকের (জিয়ার) প্রত্য ও পরো মদদে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয় মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি। এদের এই ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের কারণে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশটিকে সঠিক ধারায় ফিরিয়ে আনতেই স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিতে হয়েছে বর্তমান সরকারকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পে জনগণ, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের যে অভূতপূর্ব রায় বেরিয়ে এসেছে, সেটি প্রমাণ করে দেশ ও জাতির সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। তারা খুঁজে নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাসের ইতিহাস। তারা জানতে পেরেছে ’৭১ সালে সংঘটিত পৃথিবীর ইতিহাসের নিকৃষ্টতম, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের কথা। এর বিচারের দায়িত্ব দিয়ে তারাই আমাদের মতায় পাঠিয়েছে ।
তিনি বলেন, ‘একটি জাতির বিরুদ্ধে সংগঠিত যুদ্ধাপরাধ চল্লিশ বছর পর কেন, কোনো সময়ই তামাদি হয় না। ’ তিনি এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়েও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনার কাছে জানতে চাওয়া হয়, যুদ্ধাপরাধের বিচার সমাপ্ত করতে কত সময় লাগবে? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি নির্ভর করছে ট্রাইব্যুনালের ওপর। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা বলেছি, জনগণ এমন একটি বিচার চায়, যে বিচার হবে স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের। সুতরাং এটি নিশ্চিত করতে ট্রাইব্যুনালের যে সময় প্রয়োজন, সেই সময়ই লাগবে এই বিচার শেষ করতে। ’
‘সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম বিশ্বের কয়েকটি দেশসহ বিভিন্ন দেশে উগ্রপন্থিদের নাশকতার হুমকি যে পরিমাণ চলছে, সে তুলনায় বাংলাদেশে এখনও এই ধরনের তৎপরতা কম। অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশ কেন ব্যতিক্রম?’ সাংবাদিক গিলিগ্যানের এই প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য। শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে বাঙালির পরিচয় রয়েছে। সব ধর্মের মানুষের পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান সম্বলিত কোন উদার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে কোন অপশক্তিই প্রশ্রয় পায় না। বাংলাদেশ এরকমই একটি দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির অপকর্মের জন্যে কোনো দেশ বা ধর্মকে দায়ী করা ঠিক নয়। তিনি বলেন উগ্র চরমপন্থী কার্যক্রমের দায় ব্যক্তি বা গোষ্ঠি বিশেষের, কোনো রাষ্ট্র বা ধর্মের নয়।
চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্রিটেনের প্রতি বাংলাদেশের কি পরামর্শ, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পারস্পরিক তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমেই যৌথভাবে আমাদের এধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। ’
সরকারের সামনে এই মূহূর্তে চ্যালেঞ্জ কি? টেলিগ্রাফের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রধান শত্রু চিহ্নিত করেছি। আমরা বলেছি আমাদের প্রধান শত্রু দারিদ্র। এই দারিদ্রের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। এটি আমাদের সামনে একটি চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করা, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন এবিষয়গুলোকেও আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। ’
তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সমাজে দল-মত থাকতেই পারে। তবে জাতীয় স্বার্থে দলমতের উর্ধ্বে উঠেই আমাদের কাজ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তার সরকারের বিগত কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোগ করছে। ৩৩৫টি সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে আমাদের দেশটিতে। নতুন নতুন টিভি চ্যানেলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিডিয়ার ব্যাপক প্রসার জনসচেতনতা সৃষ্টি করে। ভিন্নমত সমস্যা চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগে দেশের মানুষ এখন আলো অন্ধকারের পার্থক্য বুঝতে পারছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার কমিশন, বিচার বিভাগ, তথ্য কমিশন ও দুর্র্নীতি দমন কমিশন ইত্যাদি সংস্থাগুলো এখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে। আইনের শাসন বজায় রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োজনীয় প্রশিণ সন্ত্রাস দমনে ব্যাপক ভ’মিকা রাখছে।
বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির সাম্প্রতিক অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথা বর্ণনা করে টেলিগ্রাফকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ আজ প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে গরীব কৃষকদের নির্দিষ্ট সময়সীমায় ব্যাংকঋণ পাওয়া, স্বচ্ছতা রায় অন লাইন পদ্ধতিতে টেন্ডার গ্রহণ, গ্রাম পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি সরবরাহ আজ বাংলাদেশে আর স্বপ্ন নয়, একটি বাস্তবতা।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে শান্তির পে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও দণি এশিয়াসহ সারা বিশ্বকেই আমরা একটি নিরাপদ শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে দেখতে চাই। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ মতায় আসার পর বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি ফিরিয়ে আনতে তাই প্রথমেই আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কোনো তৃতীয় পরে সহযোগিতা ছাড়াই আমরা সফল হয়েছিলাম ঐ কাজে। বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বারের মাধ্যমে দণি এশিয়ায় শান্তির সুবাতাস আমরাই প্রথম বইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
র্যাব-এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘র্যাবের জন্ম ২০০৪ সালের দিকে বিএনপি-জামায়াত জোটের সময়ে। জন্মের শুরুতেই সবচেয়ে বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের অভিযোগ ওঠে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। আমিই তখন র্যাবের এধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলাম। ’
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে কোনো কোনো পত্রিকা র্যাবের কর্মকান্ডের যে কঠোর সমালোচনা করছে। র্যাবের জন্ম-পরবর্তী সময়ে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সময় তাদের এমন সমালোচনা আমরা দেখিনি। ’
তিনি বলেন, র্যাব বা অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিচ্ছিন্নভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ২/১টি ঘটনা যে ঘটছে তা আমরা অস্বীকার করছি না। একটি বিষয় সবাইকে বুঝতে হবে যে, কোনো একটি বাহিনীর অভ্যাস পরিবর্তন করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জন্ম নেওয়া র্যাব মানবাধিকার লংঙ্ঘনের যে পাহাড়সমান অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল, তা থেকে এই বাহিনীকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে আমাদের সরকার। পর্যায়ক্রমে এখন তা প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। এজন্য সময়তো দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে টেলিগ্রাফকে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ব্রিটিশ সরকার র্যাবকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। র্যাবের বিরুদ্ধে আনা মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগ খতিয়ে না দেখেই কি ব্রিটেন এই সহযোগিতা দিচ্ছে? নিশ্চয়ই নয়। ’
‘বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ কি সবার জন্যে উন্মুক্ত?’ এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার প্রত্যেকটি দেশের জন্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগের দুয়ার খুলে করে রেখেছে।
দেশে বিনিয়োগের সুযোগ সুবিধা দানে সরকারের কিছু পদপে সম্পর্কে বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক টেলিগ্রাফকে বলেন, ব্রিটেন বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বিনিয়োগ সহযোগী। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক।
প্রশ্ন রাখা হয়,‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে তিগ্রস্ত দেশ হিসেবে এ সমস্যা মোকাবেলায় কি চিন্তা করছে বাংলাদেশ?’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ সবচেয়ে তিগ্রস্ত, অথচ এই সমস্যা সৃষ্টির জন্যে আমরা দায়ী নই। ’
তিনি বলেন, ‘জলবাযূ পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে তিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশের দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ। আমরা এই সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের সীমিত শক্তি অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। ’
জলবাযু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট য়তি কাটিয়ে ওঠা বাংলাদেশের একার পে সম্ভব নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার জন্যে প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, আমাদের প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপসহ অন্যান্য দেশও জলবায়ু পরিবর্তনে তিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ নিজেদের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর তির কথাও আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরছে। ’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ কিছু কিছু সহযোগিতা পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশসহ তিগ্রস্ত দেশগুলো এই সমস্যা কতটুকু কাটিয়ে উঠতে পারবে তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাহায্যের যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তা সঠিকভাবে পূরণ করার ওপর। ’
এ প্রসঙ্গে তিনি কানকুন সম্মেলনে গৃহীত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তহবিল গঠনের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ শুরু করেছি, বাকিটা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতি রার উপর। ’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপদ বসবাসের জন্যেও জলবাযু পরিবর্তন সৃষ্ট সমস্যার সমাধানের দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ’
উল্লেখ্য, লন্ডন সফরের তৃতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোকে সাক্ষাৎকার দিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান। শুক্রবার তিনি বিবিসি, আল জাজিরা ও টেলিগ্রাফকে সাাৎকার দেন। শনিবার প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। বিকেলে একটি সূধী সমাবেশেও বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। আগামী কাল রোববার বিকেলে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে লন্ডন ত্যাগ করবেন।
বাংলাদেশ সময় ০৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১১