ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

পুঁজিবাজার কারসাজি: গোয়েন্দা নজরদারিতে ৫৭

আহমেদ রাজু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১১
পুঁজিবাজার কারসাজি: গোয়েন্দা নজরদারিতে ৫৭

ঢাকা: পুঁজিবাজার কারসাজিতে জড়িত ৫৭ জনকে নজরদারিতে রেখেছেন গোয়েন্দারা। এদের অনেকেই দেশ ত্যাগের চেষ্টা করছেন।

গত সোম ও মঙ্গলবার দু’ই ব্যবসায়ীকে বিমান থেকেও নামিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র।

এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে প্রধান বিরোধী দলের সাবেক এমপিদের নাম রয়েছে। আরো রয়েছে রাজনীতিক, ব্যাবসায়ী নেতা, শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা, বড় বিনিয়োগকারী, বেসরকারি টিভি চ্যানেল চেয়ারম্যান, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকের নামও।

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, এটা দ্বিতীয় পর্যায়ের নজরদারি। প্রথম পর্যায়ে ১০৭ জনের চলাচলে নজর রাখা হয়েছিলো। দু’সপ্তাহ নজরদারির পর শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে ৫৭ জনের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া গেছে।   তাদের নামের তালিকা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও তদন্ত কমিটি প্রধান ড. খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

তদন্তকাজে জড়িত এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, শেয়ারবাজার কারসাজির নেপথ্য নায়করা অনেকেই নজরদারির বিষয়টি টের পেয়ে দেশ ত্যাগের চেষ্টা করছেন। গত সোম ও মঙ্গলবার এরকম দু’টো প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছেন গোয়েন্দারা। সোমবার চট্রগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বির্তকিত ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদলকে ও মঙ্গলবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইয়াকুব আলীকে বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয়।  

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নজরদারিতে থাকা অনেকেরই নিজের নামে বিও অ্যাকাউন্ট না থাকলেও  বিভিন্ন নামে শ’ শ’ একাউন্ট রয়েছে। এ সব একাউন্টে ৫ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু কোনো শেয়ারই কেনা হয়নি। এদের অনেকেই মাত্র বছর দুয়েকের মধ্যে মিলিওনিয়ার বনেছেন। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় কিনেছেন বিলাসবহুল বাড়ি, ফ্যাট। একাউন্ট খুলেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

লুৎফর রহমান বাদলসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে  শেয়ারবাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। লতিফ সিকিউরিটিজের কর্ণধার বাদল ক’বছর আগেও বিএনপির মোসাদ্দেক আলী ফালু আর বর্তমান সরকারের সময়ে প্রভাবশালী এক  নেতার হাত ধরে দেশের অন্যতম ব্যাবসায়ী হয়ে ওঠেন। ২০ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম মালিক বনে যান মাত্র দু’বছরে।

শেয়ারবাজার থেকে শ’ শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে একের পর এক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। অন্যতম মালিক হন বিজনেস ক্যাপিটাল শেয়ার ও সিকিউরিটিজ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, এলআর এ্যাগ্রো ফার্ম, ঢাকা-সাংহাই সিরামিক, এনটিভি, আরটিভি, নুরানী হিমাগার, আইএফআইসি ব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের।

এদিকে বাদলের কোম্পানি মেসার্স লতিফ সিকিউরিটিজ লিমিটেড জাল শেয়ার দিয়ে ৮৯ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণ হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিক প্রামাণ পেয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক আবু নাছির।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শেয়ারবাজার কারসাজি নিয়ে বুধবার কথা বলেছেন সংসদে।

শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক দরপতনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দু:খ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘শেয়ারবাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।