ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ

বিশ্বকাপে রাজধানীবাসীকে অন্য রকম ঢাকা উপহার দেব

সাঈদুর রহমান রিমন, সিনিয়র করেসপন্ডন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১১
বিশ্বকাপে রাজধানীবাসীকে অন্য রকম ঢাকা উপহার দেব

ঢাকা: বিশ্বকাপে রাজধানীবাসীকে অন্যরকম ঢাকা উপহার দিতে চায় ঢাকা মহানগর পুলিশ  (ডিএমপি)। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হয়েছে ।

ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।


ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপনের প্রাক্কালে শনিবার বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান বেনজীর আহমেদ।

লন্ডন, নিউইয়র্ক, প্যারিসসহ বিশ্বের বিখ্যাত শহরগুলোতে পুলিশের কাছ থেকে মানুষ যে আচরণ, সহযোগিতা ও নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন ঠিক একই রকম সেবা ডিএমপি’র পক্ষ থেকে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে পুলিশ নানা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারণকে উন্নত সেবা দিতে পারে, আমরা কেন পারব না?’

তিনি বলেন, জানি, আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা আছে। আছে অযুত সমস্যা। কিন্তু এসবের পাশাপাশি দৃঢ় মনোবলও তো আছে পুলিশ বাহিনীর। সুতরাং আমরাও সাধ্যমতো সেবা ও নিরাপত্তা দিতে পারবো ইনশা আল্লাহ। ’

পুলিশ কমিশনার জানান, বাংলাদেশের বহু পুলিশ কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত। অতি সম্প্রতি আরও বেশ কিছু সংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন দেশ থেকে অত্যাধুনিক কারিকুলামে প্রশিক্ষণ করিয়ে আনা হয়েছে।

এছাড়া জাতিসংঘের মিশনগুলোতে দায়িত্ব পালনের সুবাদে আরও কয়েক হাজার কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য উপযুক্ত দক্ষতা নিয়ে এর আগেই বাংলাদেশে ফিরেছেন। এদের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ-দক্ষতা কাজে লাগিয়ে পুলিশের বিশাল একটি টিম পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে আছে।

পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছিল না। বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে সামনে রেখে সরকারের ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সাজ-সরঞ্জাম এরই মধ্যে দেশে আনা হয়েছে। ’

বেনজীর আহমেদ জানান, নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি মেগাসিটি ঢাকার যানবাহন নিয়ন্ত্রণেও ব্যতিক্রমী সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাজানো হয়েছে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থাপনা।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে বিদেশি অতিথি ও নগরবাসীকে অন্য রকম ঢাকা উপহার দেবো, ইনশাআল্লাহ। ’

পুলিশ বাহিনীর প্রধান চ্যালেঞ্জ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বেনজীর আহমেদ বলেন, অপরাধ বরাবরই বাড়ে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে অপরাধীর সংখ্যাও। এ চিত্র বিশ্বজুড়েই অভিন্ন।

তবে অপরাধ আর অপরাধী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকেও তার পরিকল্পনা পাল্টাতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, বদলাতে হয় অভিযান ও কাজের ধরণ।

তিনি বলেন, মেগাসিটি ঢাকায় বিশাল জনগোষ্ঠীর বসবাস। অথচ এর বিপরীতে পুলিশের জনবল খুবই অপ্রতুল। এমনকি প্রতিবেশী ভারতের কলকাতা শহরেও প্রতি ২০৬ জনের বিপরীতে একজন করে পুলিশ রয়েছে। অথচ ঢাকায় প্রতি সাড়ে ৬ শ’ জনের বিপরীতে মাত্র একজন পুলিশ।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের এ সঙ্কট অনুধাবন করে আরও ৩২ হাজার জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।

কমিশনার বলেন, ‘এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে পুলিশ বাহিনীর প্রধান সমস্যাটি অনেকাংশেই দূর হবে। ’

তিনি বলেন, ঢাকায় অত্যধিক মানুষ বাস করে। চলাফেরা আর যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা বস্তিতে লাখ লাখ মানুষের বসবাস। এরপরও প্রতিদিনই ঢাকায় যোগ হচ্ছেন আট হাজার নতুন মানুষ। এদের মধ্যে অনেককেই এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি এক পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন সার্ক ফোয়ারা মোড়টাতেই প্রতিদিন আড়াই লাখের বেশি মানুষ রাস্তা পারাপার করেন। অথচ উন্নত বিশ্বের অনেক বড় বড় মহানগরীতে অনেকগুলি সিটি ব্লক মিলিয়েও আড়াই লাখ লোক বাস করে না। তাই এখানে পুলিশকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।  

ঢাকার এ বিশাল জনস্রোত ও জনবসতির ভিড়ে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের গা-ঢাকা দিয়ে থাকার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। এক এলাকায় অপরাধ ঘটিয়েই অজ্ঞাত ঠিকানার অপরাধীরা মুহূর্তেই আরেকটি মহল্লায় গিয়ে অবস্থান নেয়। ফলে তাদের চিহ্নিত করাটা পুলিশের জন্য খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বলে জানান তিনি।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রায়ই অপরাধ করে এমন চিহ্নিত অপরাধীদের পুলিশ চেনে-জানে। কিন্তু তাৎক্ষণিক অপরাধ ঘটিয়ে অন্য স্থানে বসবাস শুরু করা ভ্রাম্যমাণ, ভাসমান, অজ্ঞাত ঠিকানাধারী অপরাধীরাই রাজধানীর জন্য বড় সমস্যা।

জাতীয় পরিচয়পত্রধারী হলে অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা তেমন কঠিন হতো না বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, তারপরও পরিচয়পত্রের জন্য পুলিশ তো আর বসে থাকতে পারে না। এজন্য বিকল্প পরিকল্পনা ও কর্মতৎপরতা নিয়েই পুলিশকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ডিএমপিভুক্ত এলাকায় পুলিশের উদ্যোগে এরই মধ্যে ৮৯২টি কমিউনিটি পুলিশ ইউনিট করা রয়েছে। ইউনিটগুলো নিজ নিজ এলাকার অপরাধ নির্মূল ও অপরাধীদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করার ব্যাপারে ডিএমপি’র সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে চলছেন।

এছাড়াও নতুনভাবে ‘বিট পুলিশ’ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লার ছোট ছোট এলাকাকে বিট হিসেবে ভাগ করে একেকটি বিটের দায়িত্বে একজন করে পুলিশ অফিসার রাখা হবে।

ওই অফিসার সংশ্লিষ্ট বিট এলাকার ভালো-মন্দসহ সব ধরনের মানুষকে ব্যক্তিগতভাবেও চিনবেন-জানবেন। ফলে যে কোনও অপরাধ সংঘটনের আগে ও পরে দ্রুত পুলিশি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।

বিট পুলিশ ব্যবস্থাপনায় জনসাধারণ অনেক দ্রুতগতিতে অপেক্ষাকৃত নির্ভুলভাবে পুলিশি সেবা লাভ করবেÑএমনটিই আশা করছেন পুলিশ কমিশনার।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, গত ৫-১০ বছরে পুলিশ অনেক আধুনিকতার ছোঁয়া নিয়ে আমূল পাল্টেছে। জাতিসংঘের বদান্যতায় প্রশিক্ষণ-দক্ষতা ও পরিকল্পনার দিক থেকে বাংলাদেশ পুলিশ এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়ে উঠতে শুরু করেছে।

এসব কিছুর সুফল পাবেন নাগরিক সমাজ পাবে বলে মনে করছেন বেনজীর আহমেদ।

তবে এসব আধুনিকতার সেবা নিশ্চিত করতে ১৯৭৬ সালের প্রণীত ডিএমপি অর্ডিন্যান্সের কিছু কিছু ধারা-উপধারার সংযোজন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলেও মনে করছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

এ সময় নিয়মিত অপরাধ পর্যালোচনা বিষয়ক মাসিক বৈঠক নিয়েও কথা বলেন পুলিশ কমিশনার।

তিনি বলেন, ডিএমপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অপরাধ পর্যালোচনার মাসিক বৈঠকটি এখন একদিনের বদলে দু’দিন ব্যাপী করা হয়েছে। তাছাড়া মহানগরীর ৮টি অপরাধ বিভাগে আলাদাভাবেও নিয়মিত অপরাধ পর্যালোচনা বৈঠক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এতে সেবা ও অপরাধ নির্মূলের পরিকল্পনা আরও কার্যকর করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।