ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

লন্ডন সফরে প্রধানমন্ত্রীর শিডিউল অব্যবস্থাপনা

চিফ অব প্রটোকল ব্রিগেডিয়ার সাঈদকে অব্যাহতি

সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১১
চিফ অব প্রটোকল ব্রিগেডিয়ার সাঈদকে অব্যাহতি

লন্ডন: পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘চিফ অব প্রটোকল’ ব্রিগেডিয়ার সাঈদকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সেনাসদরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওই পদে ব্রিগেডিয়ার সাদেক সোবহানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।



বাংলানিউজের কাছে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার সাঈদকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে কেন তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক লন্ডন সফরে ব্রিটেনের তিন শীর্ষ কমিউনিটি সংগঠনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক না হওয়ায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগে ব্রিগেডিয়ার সাঈদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ না নেওয়া তিন সংগঠন লন্ডন বাংলা প্রেসকাব, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স’ নেতারা ব্রিগেডিয়ার সাঈদকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

প্রসঙ্গত, ওই তিন সংগঠনের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক লন্ডন সফরে তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। সাক্ষাতের শিডিউলও দেওয়া হয় তাদের। কিন্তু সেই শিডিউল দু’দফা পেছানোর পর তৃতীয় অ্যাপয়েন্টমেন্টে আর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসেননি তারা।

বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় লন্ডনের বাঙালি কমিউনিটিতে। সরব হয়ে ওঠে ব্রিটেনভিত্তিক বাংলা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াও।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, তিন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের সময়সূচি দফায় দফায় পরিবর্তন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে কিছুই জানানো হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রী খুবই আগ্রহী ছিলেন। তিনি দু:সময়ে ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটি, বিশেষ করে মিডিয়ার সমর্থন ভুলতে পারেন না। আর তাই যতবারই তিনি ব্রিটেন এসেছেন, ততবারই ব্যস্ত কর্মসূচির মধ্যেও বাংলা মিডিয়ার সঙ্গে বৈঠক করতে ভোলেননি।

কিন্তু তিন শীর্ষ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় বার বার বদলানোর বিষয়টি প্রটোকল অফিসাররা প্রধানমন্ত্রীকে জানাননি। প্রধানমন্ত্রী যখন বিষয়টি জানতে পারেন তখন তার দেশে ফেরার প্রস্তুতি চলছিলো।

সংশ্লিষ্ট অপর এক সূত্রমতে, ৩০ জানুয়ারি লন্ডন ছাড়ার আগ মুহূর্তে আরো ২/১টি  সংগঠনের সঙ্গে কথা বলার সময়ে বাংলা মিডিয়ার সঙ্গে বৈঠক নিয়ে এতোসব কাণ্ডের কথা তাকে কেন জানানো হয়নি সে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

লন্ডন বাংলা প্রেসকাব সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘জনসম্পৃক্ততাই একজন রাজনীতিকের অলঙ্কার। মতাসীন হওয়ার পরও জনগণের সঙ্গে রাজনীতিকদের সম্পর্ক রা করা প্রটোকল বিভাগের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা অবশ্যই মার অযোগ্য হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত। ’

বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পাশা খোন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বিশেষকে পরিবর্তন করেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। পুরো সিস্টেমকেই বদলাতে হবে, যাতে কোনো রাজনীতিক মতায় যাওয়ার পর এই সিস্টেমের কারণে জনসম্পৃক্তহীন না হন। ’

প্রাচীনতম বাংলা সাপ্তাহিক ‘জনমত’ সম্পাদক নবাব উদ্দিন ‘চিফ অব প্রটোকল’ পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি প্রবাসীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সম্মান প্রদর্শন বলেই আমি ধরে নিচ্ছি। দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে প্রবাসীদের সম্পর্কহীন করার  যে কোনো ভবিষ্যৎ-চেষ্টা এই পদেেপ অবশ্যই নিরুৎসাহিত হবে। ’

উল্লেখ্য, ‘চিফ অব প্রটোকল’ এর নিয়োগ আগে ফরেন সার্ভিস থেকেই দেওয়া হতো। এরশাদ সরকারের শাসনামল থেকে এই পদে সেনাবাহিনী থেকে নিয়োগ দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়। দেশে বা দেশের বাইরে সরকার বা রাষ্ট্র প্রধানের সব কর্মসূচি প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করে থাকেন ‘চিফ অব প্রটোকল’।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।