ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

নেত্রকোণার ‘শুকনাকুড়ি সেতু’: ১৪ বছরেও শেষ হয়নি ১৫ মাসের নির্মাণকাজ

সাঈদুর রহমান রিমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১
নেত্রকোণার ‘শুকনাকুড়ি সেতু’: ১৪ বছরেও শেষ হয়নি ১৫ মাসের নির্মাণকাজ

ঢাকা: নেত্রকোণার লাখো মানুষের কাছে ‘শুকনাকুড়ি সেতু’ স্থায়ী অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার সেতুটি নির্মাণের জন্য ১৫ মাসের সময়সীমা বেঁধে দিলেও এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ১৪টি বছর।

তবু সেতুর নির্মাণ শেষ হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, সেতুটি আদৌ নির্মিত হবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবও পাচ্ছেন না বাসিন্দারা।

শ্যামগঞ্জ-দুর্গাপুর সড়কের শুকনাকুড়ি এলাকায় একটি ডোবার উপরে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ কাজ শেষ হয়নি ১৪ বছরেও।

জানা গেছে, শুকনাকুড়িতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতাধীন ২২৩ দশমিক ৪০ মিটার দীর্ঘ, ছয় স্প্যানবিশিষ্ট স্টিল পাতের বেইলি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় কাদের সিদ্দিকীর সোনার বাংলা প্রকৌশল সংস্থা প্রাইভেট লিমিটেড।

কিন্তু পরে বেইলির পরিবর্তে তা পিসি গার্ডারে রূপান্তরিত করে প্রাক্কলন ব্যয় ১১ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। দীর্ঘ ১৪ বছরে মাত্র ছয়টি পিলার ও দুটি স্লাব নির্মাণ করেই ৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা তুলে নেয় কার্যাদেশ পাওয়া সংস্থাটি। এরপর থেকেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে সেতুর নির্মাণকাজ।

গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অভিযোগ ওঠে, চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণকাজ শেষ না করেও এ কাজের বেশির ভাগ অর্থ তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে দরপত্রের শর্ত মোতাবেক সোনার বাংলা প্রকৌশল সংস্থা প্রাইভেট লিমিটেডের ৪৬ লাখ ৯৭ হাজার ৭৬৪ টাকা জরিমানাসহ কার্যাদেশ বাতিল করা হয়।

এ ঘটনায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব খন্দকার ফাতেমা বেগম ও মাহবুবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ৩০ জন প্রকৌশলীকে দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য দায়ী করা হয়।

নেত্রকোনাস্থ সওজ কার্যালয় সূত্র জানায়, সেতুটির নির্মাণকাজ এখন উচ্চ পর্যায়ের অনুমোদনের অপোয় আটকে আছে।

অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমেদ রুহী বাংলানিউজকে জানান, সেতুটি নিয়ে অনেক দুর্নীতি হয়েছে, মামলাও ছিল। এসব সমস্যার সমাধান করে সেতুটির ব্যাপারে নতুনভাবে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে। চলতি বছরেই (২০১১ সালে) সেতুটির নির্মাণ শেষ হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

কিন্তু স্থানীয় ভুক্তভোগী বাসিন্দারা বলেছেন, ‘সেতু নির্মাণের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। আদৌ সেতুটি নির্মাণ হবে কি না তারও নিশ্চয়তা নেই। ’

ভাসমান সেতু চান এলাকাবাসী

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ও পর্যটন অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নদী-পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা। উপজেলা থেকে জেলা সদর বা রাজধানীতে যাতায়াতের একমাত্র সড়কপথেই শুকনাকুড়ি সেতুর অবস্থান। বছরের ৮-৯ মাসই সেখানে নৌকা দিয়ে যাত্রী ও মালামাল পারাপার হয়। বাকি ৩-৪ মাস শুকনো মৌসুমে পাশের ক্ষেত-খামার, চষা জমির ওপর দিয়েই চলাচল করে পণ্যবাহী ট্রাক। আর যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে মাঠ পাড়ি দেয় খালি বাসগুলো।

স্থানীয় বাসিন্দা মোতালেব মিয়া, রমজান আলী, ইয়ার আলী মেম্বারসহ কয়েকজন জানান, শুকনাকুড়ি সেতুর কাজ শুরুর অনেক পর সুমেশ্বরী ও আতাখালী সেতুর নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওই দুটি বড় সেতু নির্মাণকাজ মাত্র তিন বছরের মধ্যে সম্পন্ন হলেও শুকনাকুড়ি সেতু কেবল ৬টি পিলার নির্মাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে।

তারা বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে ধোবাউরা, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার পাঁচ লক্ষাধিক লোক যাতায়াত করে। চলাচল ক্ষেত্রে জনসাধারণ কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহায় তা চোখে না দেখলে ধারণা করা মুশকিল। সামান্য বৃষ্টিতেই কর্দমাক্ত পিচ্ছিল রাস্তায় যাত্রীদের পা রাখাও পারাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

শুকনাকুড়িতে সারা বছর পানি থাকে- তাই সেখানে ভাসমান সেতু চালু করে জনদুর্ভোগ দূর করার দাবি জানান এলাকাবাসী।

ঠিকাদার সংস্থার বক্তব্য

এদিকে, শুকনাকুড়ি সেতু নির্মাণ ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি, নির্মাণ শেষ না করেই সমুদয় বিল তুলে নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলেছেন সোনার বাংলা প্রকৌশল সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু মোহাম্মদ এনায়েত করিম।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা যতোটুকু কাজ করেছি ততোটুকুরই বিল তুলেছি। ’

এনায়েত করিম বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষের নানা টালবাহানার কারণেই শুকনাকুড়ি সেতু নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে আছে। ’

এ সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে সোনার বাংলা প্রকৌশল সংস্থার ওপর একতরফাভাবে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে বলেও পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময় : ০৫০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।