ঢাকা: বছর ব্যবধানে দ্বিগুনেরও বেশি বেড়েছে স্বর্ণের দাম। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ভরিপ্রতি (২২ ক্যারেট) যে স্বর্ণ ২১ হাজার টাকায় কেনা যাচ্ছিলো তা কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে ৪৩ হাজার টাকা।
এদিকে স্বর্ণের দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার কারণ হিসেব আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ধূয়ো তুলছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, ২২ ক্যারেটের ভরি এখন ৩৯ হাজার ৭০৩ টাকা ৩০ পয়সায় কিনতে হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে। আর গুণগত মান নিশ্চিত করতে এর সঙ্গে আরও যোগ হচ্ছে ৪ হাজার টাকা। তাই আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্বর্ণপাচার ঠেকানোর প্রয়োজনে মূল্যবৃদ্ধি করতেই হচ্ছে।
জুয়েলারি সমিতির নেতাদের মতে, পুঁজিবাজারে চরম অস্থিশীলতার কারণে এখন স্বর্ণে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিচ্ছে মানুষ। তাই চাহিদা বাড়ছে স্বর্ণের। কিন্তু উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহ বাড়ছে না। তাই স্বর্ণের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যপক ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। ফলে দাম বাড়ছে স্বর্ণের।
এছাড়া স্বর্ণের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিকেও দরবৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তারা।
তবে ব্যবসায়ীদের অনেকেই মনে করছেন, স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধির এ প্রবণতা সাময়িক। আসছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শুরু হচ্ছে পূজোর মৌসুম। এ মৌসুমে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ ব্যবহারকারী (মোট ব্যবহারের ৭০ শতাংশ) ভারতের মৌসুমী ক্রেতাদের জন্যই এর দাম বাড়ানো হচ্ছে। স্বর্ণ মৌসুম পার হলে এর চাহিদাও কমে যাবে।
জুয়েলারি সমিতির হিসাবে, বাংলাদেশে বর্তমান বাজারে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২২ ক্যারেট ৪৩ হাজার ৩৩২ টাকা, ২১ ক্যারেট ৪১ হাজার ৩৪৮ টাকা ও ১৮ ক্যারেট ৩৬ হাজার ৮৫৮ টাকা। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ২৯ হাজার ১৬০ টাকা।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ মূল্য ছিল ১৮ ক্যারেটের প্রতিভরি ৩২ হাজার ৪৬৬ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি ৩৬ হাজার ৫১৬ টাকা ও ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি ৪১ হাজার ৮৩২ টাকা। একই সময়ে সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ২৩ হাজার ২৫৭ টাকা।
স্বর্ণ বিক্রেতা আলমগীর খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্বর্ণবাজারে ১৮ ক্যারেটের প্রতিভরি ২৯ হাজার ৮১৪ টাকা ৪০ পয়সা, ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি ৩৩ হাজার ২৫৮ টাকা ৮০ পয়সা ও ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি ৩৯ হাজার ৭০৩ টাকা ৩০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পিওর গ্লোড চাইলে ভরিপ্রতি আরও ৪ হাজার টাকা গুনতে হবে। ’
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি এমএ ওয়াদুদ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রথমত, বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে স্বর্ণের ডিমান্ড এবং সাপ্লাইয়ের মধ্যে বিশাল ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে স্বর্ণের হাইটেনোলজির ব্যবহার বেড়েছে। আর এ মুহূর্তে দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারে মন্দা। যার কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ না করে এখন স্বর্ণে বিনিয়োগ করছেন। ’
এছাড়া চাহিদার চেয়ে উত্তোলন কমার পাশাপাশি উত্তোলন ব্যয় বাড়াও স্বর্ণের দর বাড়ার কারণ বলে মনে করছেন তিনি।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকেও স্বর্ণের দর বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘ইরাক যুদ্ধের পর থেকেই স্বর্ণের দাম চড়তে শুরু করে। আর বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলার, পাউন্ড ও ইউরোর ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে স্বর্ণ সংরক্ষণের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। ’
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দামের সঙ্গতি রাখতে বাংলাদেশে সোনার মূল্য বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে জুয়েলার্স সমিতির সভাপতির বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন গোল্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সৈয়দ শামসুল আলম হাসু।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘স্বর্ণের দাম বেড়েছে অন্য কারণে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর হচ্ছে স্বর্ণ বিক্রির সবচেয়ে ভালো সময়। এ দু’মাসে স্বর্ণ বিক্রি বেড়ে যায়। এ সময় ভারতে বিয়ে-পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুরু হয়। তখন স্বর্ণের বিক্রি ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। ’
তিনি আরও বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের হিসাবে বিশ্বের মোট স্বর্ণের ৭০ শতাংশ বিক্রি হয় ভারতে। এছাড়া সামনে চীনের নববর্ষ। এসব কারণে স্বর্ণের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়ছে। ’
ভারতের পূজা মৌসুম শেষে স্বর্ণের বাজার আবার পড়ে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।
এছাড়া বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় র্স্বণ বাজারে এর প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন সৈয়দ শামসুল আলম হাসু।
এরই মধ্যে জার্মানি, হংকং, ফ্রান্স ও তাইওয়ান অর্থনৈতিক মন্দা থেকে মুক্তি পেয়েছে জানিয়ে শামসুল হক হাসু বলেন, ‘যুদ্ধ বা সুনামির মতো ঘটনা ঘটলে তার প্রভাব স্বর্ণবাজারেও পড়ে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১১