ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

অসঙ্গতি!

আসাদ জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১১
অসঙ্গতি!

ঢাকা: সুর মিলছে না বাপ-ছেলের কথায়। কথিত অপহরণের ১৩ তিন পর ছেলেকে ফিরে পাওয়ার দাবি করে মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলছেন, তার ছেলের এই ১৩টি দিন কেটেছে কোরআন পড়ে।

অন্যদিকে ছেলে আবুল হাসানাত সাংবাদিকদের জানালেন, ১৩ দিনে এক মুহূর্তের জন্যও খোলা হয়নি তার চোখ। হ্যান্ডকাপ পরিয়ে অন্ধকার ঘরে ফেলে রাখা হয়েছিলো তাকে।

আমিনি বলছেন, ছেলে রোজা রেখেছেন ১৩দিন কিছুই খাননি।
অন্যদিকে ছেলের বক্তব্য, খাবার খাওয়ার সময় অপহরণকারীরা তার হ্যান্ডকাপ খুলে দিতো। আর বাথরুমের ভেতরে গেলে খোলা হতো চোখের বাঁধন।

ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমীর ফজলুল হক আমিনী ও তার ছেলের এরকম অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য পাওয়া যায় শুক্রবার সকালে রাজধানীর লালবাগে কমিটির কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ।

আমিনীর দাবি অনুযায়ী, নিখোঁজ হওয়ার ১৩ দিনের মাথায় শুক্রবার ভোর রাতে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে পাওয়া যায় হাসানাতকে।

এরপর খুব দ্রুততার সঙ্গে সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে বসেন আমিনী। সেই সংবাদ সম্মেলনে ছেলেকে পাশে বসিয়ে আমিনী বলেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশেই আমার ছেলেকে গুম করা হয়েছিল, আবার তার নির্দেশেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ’

আমিনীর এ বক্তব্যের সঙ্গে ছেলে হাসানাতের বক্তব্য মিলে যায়। তবে অপহরণের পর হাসনাতকে কিভাবে রাখা হয়েছিলো তা আমিনি নিজের মুখে বলতে গিয়ে যেন বেশ কিছুটা বাড়তি অভিযোগ করে বসলেন। আর তাতেই বাঁধলো বিপত্তি। ছেলের বক্তব্যের সঙ্গে তার নিজের বক্তব্যের স্পষ্ট অসঙ্গতিতে ভিড়মি খেলেন সাংবাদিকরা।

আবুল হাসানাতের বক্তব্য সত্য হলে আমিনীর বক্তব্য সত্য হিসেবে মেনে নেওয়া কঠিন। আবার আমিনীর বক্তব্য সত্য হলে আবুল হাসানাতের বক্তব্যও সত্য বলে মানা যায় না। কারণ, চোখবাঁধা অবস্থায় অন্ধকার ঘরে কোরআন পড়া যেমন সম্ভব নয়, তেমনি রোজা রাখলে খাবারের জন্য হাত খুলে দেওয়ারও প্রসঙ্গও আসে না।

উপরন্তু, আবুল হাসানাতের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৩ দিন তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চোখ বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছে। বারবার তার শেষ ইচ্ছাটাও জানতে চাওয়া হয়েছে।   ছেড়ে দেওয়ার শর্ত হিসেবে মুফতি আমিনীর ২ মাস ঘরে বসিয়ে রাখার নিশ্চয়তাও চাওয়া হয় তার কাছে।

কিন্তু এসব শর্ত পূরণ হওয়ার আগেই অপহরণকারীরা কেন তাকে ছেড়ে দিল সংবাদ সম্মেলনে তা খোলাসা করেননি আবুল হাসানাত।

আর তার দাবি অনুযায়ী ১৩ দিন টান চোখবাঁধা রাখার পর একটি মানুষের চেহারায় ক্লান্তি ও অবসাদের স্বাভাবিক যে ছাপ থাকার কথা তার লেশমাত্রও দেখা যায়নি হাসানাতের চোখে মুখে।

সংবাদ সম্মেলনেই অনেককে বলতে শোনা গেলে, ১৩দিন চোখ বাঁধা থাকলে ঘোর কাটিয়ে উঠতেই তো লেগে যাবার কথা কয়েক ঘণ্টা।  

হাসানাতের দাবি অনুযায়ী, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে তাকে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

কিন্তু এরপর সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দিতে কেন ঘণ্টা চারেক দেরি করা হলো সংবাদ সম্মেলনে স্বভাবতই সে প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা।

জবাবে আমিনী জানান, আধা ঘণ্টার মধ্যেই লালবাগ থানাকে জানানো হয়।

কিন্তু লালবাগ থানার এএসআই হোসেন ওই দাবি অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মাওলানা জুবায়ের প্রথম এ খবর জানান। ’

প্রসঙ্গত: গত ১০ এপ্রিল ধোলাইখাল এলাকা থেকে হাসানাত নিখোঁজ হন বলে দাবি করেন আমিনী। এরপর ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই ছেলেকে গুম করা হয়েছে’ বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।

সরকার পক্ষ থেকে এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়, ‘আমিনী নিজেই তার ছেলেকে গুম করে নাটক সাজিয়েছেন। ’

সেই নাটক শুক্রবার ভিন্ন এক মাত্রা পেয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এ নাটকের পরবর্তী অঙ্কে  কি হতে পারে তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। সাংবাদিক সম্মেলনে বাবা-ছেলের বক্তব্যের অসঙ্গতি আলোচনার বাড়তি খোড়াক যুগিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।