নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের আট ব্যক্তির বিরুদ্ধে জারিকৃত রেড ওয়ারেন্ট (লাল নোটিশ পরোয়ানা) প্রত্যাহার করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। সম্প্রতি তাদের ওয়েব সাইট থেকে এ ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার করে নেয়।
সর্বশেষ গত ১০ মার্চ আট জনের বিরুদ্ধে জারিকৃত ওই ওয়ারেন্ট পাতাগুলো হালনাগাদ (মোডিফাই) করা হয়েছিল। তবে নারায়ণগঞ্জের এক মৃত ব্যক্তির (সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত) নামে এখনো ওয়ারেন্টটি অব্যাহত রয়েছে।
২০০৭ সালের ওয়ান এলেভেনের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শামীম ওসমানসহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে রেড ওয়ারেন্ট জারি করে ইন্টারপোল। ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে শামীম ওসমানের ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও বাকি নয় জনের ওয়ারন্টে ছিল। কিন্তু এ নয় জনের মধ্যে দুই জন এরইমধ্যে আততায়ীর হাতে খুন হয়েছে।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরের ডনচেম্বার এলাকাতে এক সময়ে বসবাসরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার খালাসপ্রাপ্ত আসামি কিসমত হাশেমের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট রয়েছে। তিনি বর্তমানে কানাডাতে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।
যাদের ওয়ারেন্ট তুলে নেওয়া হয়েছে তারা হলেন- জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক গোলাম সারোয়ার, যুবলীগের নামধারী নেতা মাহতাবউদ্দিন লাল, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূর হোসেন ওরফে হোসেন চেয়ারম্যান, সেলিম মিয়া, সুমন, রবিন, ফতুল্লার পাগলার আলোচিত সন্ত্রাসী গোলাম রসুল শিকদার ও তার ভাই ফতুল্লা কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান তোফাজ্জল (আততায়ীদের হাতে খুন হন)। তবে আততায়ীদের হাতে খুন হওয়া নুরুল আমিনের (নুরুল আমিন মাকসুদ ওরফে ড্রেজার মাকসুদ) বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকার গাজিপুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
যাদের ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে তারা সবাই নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নামধারী নেতা ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে সন্ত্রাসী কর্মকা-সহ নানা অভিযোগ।
২০০৭ সালে ওয়ান এলেভেনের পর তাদের বিরুদ্ধে এ ওয়ারেন্টগুলো জারি করা হয়েছিল। ওয়ারেন্টে এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অস্ত্রবাজি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, হুমকি প্রদর্শসসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
ইন্টারপোল এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করলেও কারো ওয়ারেন্ট পাতায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ছবি দেওয়া হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ইন্টারপোল থেকে রেড ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার করতে ওইসব ব্যক্তিরা নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন ও পুলিশের হেড কোয়ার্টারে আবেদন করে। পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন ওইসব ব্যক্তিদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে তাদের ব্যাপারে প্রতিবেদন তৈরি করে। এসব প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই ইন্টারপোল তাদের ওয়েবপেইজ থেকে ওয়ারেন্ট তুলে নেয়।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, যেসব ব্যক্তিরা ওয়ারেন্ট তুলে নিতে আবেদন করেছিল তাদের অনেক আবেদনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মহাজোট সরকারের বিভিন্ন স্তরের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের তদবির ছিল।
প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসে মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জের ১০ জনের বিরুদ্ধে রেড ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। ওই বছরের ১২ মার্চ ইন্টারপোল শামীম ওসমানরে বিরুদ্ধে রেড ওয়ারেন্ট জারি করে। ১২ মার্চ পরোয়ানাটি জারির পর ওই বছরের ৭ এপ্রিল বিষয়টি তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়। এতে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জনকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহারের কথা উল্লে¬খ করা হয়।
মাত্র এক মাস পর এপ্রিল মাসে এক সঙ্গে আরও নয় জনের বিরুদ্ধে রেড ওয়ারেন্ট জারি করে ইন্টারপোল। তারা হলেন জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক গোলাম সারোয়ার, যুবলীগের নামধারী নেতা মাহতাবউদ্দিন লাল, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূর হোসেন ওরফে হোসেন চেয়ারম্যান, সেলিম মিয়া, সুমন, রবিন, ফতুল্লার পাগলার আলোচিত সন্ত্রাসী গোলাম রসুল শিকদার ও তার ভাই ফতুল্লা কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান তোফাজ্জল (২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে আততায়ীর হাতে নিহত) ও নুরুল আমিন মাকসুদ (২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল আততায়ীর হাতে নিহত)।
এর আগে ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে ইন্টারপোল শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে আরও একটি ওয়ারেন্ট জারি করলেও তা পরবর্তীতে তুলে নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার বিশ্বাস আফজাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ইন্টারপোল বিষয়টি পুলিশের হেড কোয়ার্টার নিয়ন্ত্রণ করে। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন কিছুই জানে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা জেলা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করিনা, আমরা সরাসরি ইন্টারপোল’র সঙ্গে কাজ করি। ফলে জেলা পুলিশ কী করেছে তা আমরা জানিনা। ’
ইন্টারপোল’র রেড ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার সংক্রান্ত সংবাদের ব্যাপারে সরাসরি মন্তব্য না করে তিনি আরও বলেন, ‘এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত আছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১১