ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

হরতালে সংঘাতের আশঙ্কা রাজপথে

আসাদ জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১১
হরতালে সংঘাতের আশঙ্কা রাজপথে

ঢাকা: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের উদ্যোগের প্রতিবাদে বিএনপি, জামায়াত ও খেলাফত মজলিশের ডাকা হরতালে রোববার রাজপথে সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

একদিকে চারদলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলগুলোর কড়া হরতাল পালনের ঘোষণা, অন্যদিকে সরকার পক্ষের নৈরাজ্যকারীদের ছাড় না দেওয়ার হুমকি সংঘাতের আশঙ্কা আরো বাড়িয়ে তুলেছে।



গত ১ জুন সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনপি-জামায়াতের ৫ জুন দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা  হরতাল ঘোষণার পর থেকেই চলছে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতাদের হুমকি-পাল্টা হুমকি।

চারদলীয় জোটের তিনটি দলের ডাকা এ হরতালে আর সব শরিক ও সমমনা দলগুলোর সমর্থন থাকায় এটিই হতে যাচ্ছে মহাজোট আমলের সবচেয়ে কঠোর হরতাল।

দলীয় সূত্র জানায়, হরতালের মাঠে সরকারের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের বিষয়টিতে বিন্দু মাত্র ছাড় দেবে না হরতালকারীরা। রাজধানী তো বটেই, দেশের অন্যান্য স্থানেও কড়া হরতাল হবে।

রাজধানীর বাইরের নেতারাও কড়া কড়া কথা বলছেন হরতালের পক্ষে।

শুক্রবার চট্টগ্রামে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘হরতালে বাধা এলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। ’

এদিকে হরতালের বিপক্ষে কোন কর্মসূচি না দিলেও গত ১ জুন হরতাল ঘোষণার পরপরই হরতাল আহবানকারীদের সতর্ক করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘হরতালের নামে কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। ’

এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদেরও প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

পরে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। এতে সংঘাতের কিছু নেই। আর সংঘাত সৃষ্টি হলে তখন দেখা যাবে। ’

এছাড়া আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফের সুরেই কথা বলেন।

পর দিন অর্থাৎ ২ জুন নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভা শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের  নেতা ও সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা যে ভাষায় কথা বলছেন তা গণতান্ত্রিক ভাষা না। এসব স্পষ্টতই হুমকি। হুমকি উপেক্ষা করে আমরা আমাদের অধিকার প্রয়োগ করব। ’

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে তারা (সরকার) নির্যাতন শুরু করেছে। গ্রেপ্তার করেছে বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকর্মী। সরকার তো সংঘাত শুরু-ই করে দিয়েছে। ’

এদিকে শুক্রবার জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম মগবাজার আলফালাহ মিলনায়তনে দলীয় এক অনুষ্ঠানে ‘হরতালে বাধা দিলে পরিণতি হবে ভয়াবহ’ বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করে দেন।

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশটা তো এখন সংঘাতের মধ্যেই যাচ্ছে। সে সংঘাতের নেতৃত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। আমরা গণতান্ত্রিক কর্মসূচি দিয়েছি। সেটি পালনে বাধা দিলে সংঘাত লাগতেই পারে। আর এ সংঘাতের দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। ’

প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্যাস-বিদ্যু-পানি সংকট, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিরোধী দলের ওপর নীপিড়ন, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দায়ের, রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি, যুবলীগ ছাত্রলীগের টে-ারবাজি- চাঁদাবাজি-দখলবাজি, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তিসহ জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে গত বছর ২৭ জুন প্রথম হরতাল ডাকে বিএনপি।

এর পর খালেদা জিয়াকে মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে বের করার প্রতিবাদে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হরতাল পালন করে বিএনপি। তাদের চতুর্থ হরতালটি হয় আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধুর নামে এয়ারপোর্ট তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় খালেদা জিয়াকে আসামি করে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।