ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

সাক্ষাৎকারে সীতারাম ইয়েচুরি

সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধ হোক

আনোয়ারুল করিম ও রক্তিম দাশ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১১
সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধ হোক

ঢাকা: সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের গুলি ও হত্যা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন ভারতের রাজ্যসভা সদস্য ও কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী)’র পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। এছাড়া, তিস্তা নদীর পানির নায্য হিস্যা বাংলাদেশকে দিতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

 

রোববার ঢাকায় রূপসী বাংলা হোটেলে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় শান্তি সম্মেলনে অংশ নিতে ইয়েচুরি ঢাকায় আসেন। দীর্ঘ তিন দশক ধরে বাম রাজনীতির আদর্শে পরিচালিত এই নেতাকে সিপিএমের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে। বর্তমানে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম ১৪ সদস্যের পলিটব্যুরো সদস্য।

বেশ কয়েকটি ভাষায় কথা বলতে পারেন সীতারাম ইয়েচুরি। বাংলানিউজকে তিনি বাংলায় সাক্ষাৎকার দেন।    

সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গুলি না চালিয়ে আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। ’

তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যত দেরি করা হবে তত সমস্যা বাড়বে। ’

‘সমস্যার সমাধান না হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেও অবিশ্বাস তৈরি হবে’--–এ মন্তব্য করে তিনি বলেন,
‘সিপিএমের পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে বলছি, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হোক। ’

তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্তে গুলি ও হত্যা বন্ধে দুই দেশের সরকারের সমন্বয়ে একটা উপায় বের করতে হবে। এটা দ্রুতই করতে হবে। ’

৩৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পর বামফ্রন্ট সরকারের বিদায়ের পর মমতা-সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক  প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বামফ্রন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। আমরা আশা করি, মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বের জোট সরকারও পূর্বের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে। ’  

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ চুক্তি করতেই হবে। ’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তিস্তা নদীর পানি বণ্টন হোক, এ দাবি সিপিএম দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছে। ’

‘বাংলাদেশের নায্য পানির হিস্যা ভারত সরকারকে দিতে হবে’ বলেও মন্তব্য ইয়েচুরির।

তিনি বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। ’

দিল্লি ও কলকাতায় দুই সরকারই একই জোটের। তাই তিস্তার চুক্তি করতে খুব বেশি সমস্যা হবে না বলেও মন্তব্য তার।

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট তথা সিপিএমের ভরাডুবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ফল পর্যালোচনা করা হবে। আগামী ১০-১১ জুন নয়াদিল্লিতে দলের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। ’

পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের পরাজয় গোটা ভারতেই বাম আন্দোলনকে প্রভাবিত করবে বলে মন্তব্য করেন বর্ষীয়ান এই বাম নেতা।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিক মহল ভাবছে, ভারতের বাম আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হলে ডানপন্থীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। ’

ইয়েচুরি বলেন, ‘ডানপন্থীরা চেষ্টা করবে, বিজেপির নেতৃত্বের জোটকে ভারতের শাসনক্ষমতায় বসাতে। ’

তিনি বলেন, ‘বামপন্থীদের সজাগ থাকতে হবে এবং রাজপথের আন্দোলনকে তীব্র করতে হবে। ’

প্রথম ইউপিএ সরকারের ওপর থেকে বামপন্থীদের সমর্থন প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ করে ইয়েচুরি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে পরাজয়ের পেছনে সেটাও একটি কারণ হতে পারে। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের পারমাণবিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে সমর্থন প্রত্যাহার করা ছাড়া আমাদের কাছে বিকল্প কিছু ছিল না। ’

নেপালে রাজতন্ত্রের পতনের পর মাওবাদীদের সশস্ত্র আন্দোলন থামাতে ভারত সরকারের একমাত্র প্রতিনিধি হয়ে নেপাল গিয়েছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারতের মাওবাদীদেরও নেপালের মাওবাদীদের মতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অস্ত্র ছেড়ে ভোটের পথে ফিরতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।