ঢাকা: জ্ঞানের আলোয় শিক্ষার্থীদের আলোকিত করতে চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক রুমানা মনজুর নিজের চোখের আলো হারাতে বসেছেন। কিন্তু একজন মানুষ চোখে না দেখলে তার জীবনের কতটুকই বা বাকি থাকে! তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রার্থনা করছেন তার চোখে যেন আবার আলো ফিরে আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শারমিন আহমদও তার শিক্ষক রুমানা মনজুরের জন্য এমন প্রার্থনাই করছেন।
প্রর্থনার পরপরই তার কণ্ঠে ঝরে পড়ে ক্ষোভ।
তিনি বলেন, ‘পাষণ্ড স্বামীটার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। সাইদের দু’চোখ উপড়ে ফেললেই কেবল তার সঠিক বিচার হয়। ’
শারমিন আহমেদের মতো বিশ্ববিদ্যায়ের আর সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী, তার সহকর্মী, এমনকি উপাচার্যও কামনা করছেন রুমানা যেন দৃষ্টি ফিরে পান। সেই সঙ্গে সবার একটাই দাবি- অপরাধী সাইদের উযুক্ত বিচার ও শাস্তি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান ড. অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন রুমানার চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভারত থেকে রুমানা সম্পর্কে যে সব খবর আসছে তাতে আশাবাদী হতে পারছি না। এখনও চিকিৎসকরা রুমানার চোখে হাত দিতে পারছেন না।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই রুমানার জন্য দোয়া করছি। আজ জুমার নামাজ পড়ে আমি ওর জন্য দোয়া করেছি। ’
গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে রুমানার বিরুদ্ধে সাইদের পরকীয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রুমানা আমার সরাসরি ছাত্রী ছিলো। ওকে আমি যতটুকু চিনি সে খুবই ভদ্র, নম্র ও ভালো একটি মেয়ে। এটা রুমানার বিরুদ্ধে অপপ্রচার মাত্র। ’
অন্য দিকে দৃষ্টি সরানোর জন্য এসব করা হতে পারে বলেও ধারণা তার।
এদিকে ঘটনার এতদিন পর সাইদকে গ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তার-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাইদের পক্ষ থেকে রুমানার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার ঘটনাকে রহস্যময় মনে করছে রুমানার পরিবার।
রুমানার এক নিকটাত্মীয় বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সাইদের পক্ষে প্রশাসনের কিছু লোক রুমানা সম্পর্কে গুজব ছড়াচ্ছে। ’
এদিকে রুমানার ওপর তার স্বামীর নির্যাতনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সমবেদনা জানিয়েছেন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউবিসি) প্রেসিডেন্ট স্টিফেন জে. টপি। তিনি ইউবিসির ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বার্তায় এ কথা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ইউবিসি পরিবার রুমানা মনজুরের উন্নতির খবর শোনার জন্য উদ্বেগের সঙ্গে অপেক্ষা করছে। ’
স্টিফেন টপি তাঁর বার্তায় বলেন, ‘সবার মতো আমিও এ ঘটনায় মর্মাহত। ইউবিসি পরিবার রুমানার এ কঠিন সময়ে তাঁর প্রতি সমবেদনা ও সমর্থন জানাচ্ছে এবং প্রার্থনা করছে। ’
প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন ধানমণ্ডির বাসায় স্বামী হাসান সাইদের নির্যাতনের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা মনজুর। তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার তাকে ভারতের চেন্নাইয়ে নেওয়া হয়।
ঘটনার পরদিন রুমানার বাবা মঞ্জুর হোসেন ধানমণ্ডি থানায় হাসান সাইদকে আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার পর থেকে সাইদ পলাতক ছিলেন।
বুধবার বেলা সোয় ২টার দিকে উত্তর মুগদার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ডিবির সহকারী কমিশনার আহাদের নেতৃত্বে সাইদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উল্লেখ্য, এমন একটি নৃশংস পৈশাচিক ঘটনার পরও সাইদকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পুলিশের গা-ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছিলো। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে পৃথক কর্মসূচি থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাইদকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে সময় বেঁধে দেন। কিন্ত পুলিশের তরফ থেকে তৎপরতা দেখা যায়নি।
বুধবার দুপুর ১২টায় সেই আলটিমেটামের সময় পেরিয়ে যায়। এদিকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় হাইকোর্ট সাইদকে গ্রেপ্তারের জন্য রুল জারি করার পর দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের মধ্যেই গোয়েন্দো পুলিশ সাইদকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আদালত সাইদের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষী সাইদের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুক্রবার মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। এময় তারা রুমানা যেন চোখের আলো ফিরে পান সেজন্য শুভ কামনা জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১১