ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

শয়নকক্ষে সদাবসন্তের আমেজ আনবে মেথি শাক!

আহ্সান কবীর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১১
শয়নকক্ষে সদাবসন্তের আমেজ আনবে মেথি শাক!

ঢাকা: এ তথ্যটি জানার পর দুনিয়াজুড়ে ভারতীয়  (এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে) অঞ্চলের কারিভক্তদের অন্যরা এবার ঈর্ষা করতেই পারেন। আগ্রহোদ্দীপক এ তথ্যটি হচ্ছে ক্ষুধানিবৃত্তি আর রসনা তৃপ্তির সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় কারি (ঝোল তরকারি) মানুষের কামশক্তি বাড়াতে সহায়ক।

তবে উপমহাদেশীয় কারির এই গুণপনার পেছনে ভূমিকা রয়েছে একটি ভেষজ উদ্ভিদের।

অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটিভ ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড মোলিক্যুলার মেডিসিনের বিশেষজ্ঞরা জানান, ভারতীয় রন্ধনপ্রণালীতে ব্যবহৃত একটি ভেষজের কারণে এ অঞ্চলের বিশেষ কিছু কারিতে এ ঔষধি গুণটি দেখা যায়। স্বাদগন্ধ বৃদ্ধিতে ভারতীয় রান্নাবান্নায় ব্যবহৃত এ ভেষজটি হচ্ছে ফেনুগ্রিক (Fenugreek), অর্থাৎ আপনার আমার সবার অতি পরিচিত মেথি শাক।

ভেষজ এ উদ্ভিদটি বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান অর্থাৎ উপমহাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ব্যাপকহারে উৎপন্ন হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ ও সময় ধরে এ ভেষজটি গ্রহণে পুরুষের পৌরুষত্ব কমপক্ষে শতকরা ২৫ ভাগ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে তারা জানিয়েছেন। অর্থাৎ মেথিগুণে আপনার শয়নকক্ষের পরিবেশ হয়ে উঠতে পারে সদা বসন্তময়!

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত গবেষণা তথ্যসূত্রে জানা গেছে- ব্রিসবেনের ওই সেন্টারের বিশেষজ্ঞরা ২৫ থেকে ৫২ বছর বয়সী পুরুষদের ওপর ৬ সপ্তাহের এক গবেষণা চালিয়ে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে- ওই সময়ব্যাপী দিনে ২বার নির্দিষ্ট মাত্রায় মেথি খেলে মানুষের যৌন সক্ষমতা শতকরা ২৮ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

ওই গবেষণায় একই সঙ্গে একই বয়স গ্রুপের অন্য একটি দলকে মেথির বদলে মেকি ঔষধ দেওয়া হয়েছে ৬সপ্তাহ জুড়ে। কিন্তু তাদের পারফর্মেন্স না বেড়ে আরও পড়তির দিকে গেছে।

মেথির বীচিতে স্যাপোনিন্স (saponins) নামে এমন একটি উপাদান আছে যা টেস্টোস্টেরোন সহ (testosterone) পুরুষের দেহে অন্যান্য কিছু বিশেষ হরমোন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। গবেষকরা জানান, পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- এ ‘দাওয়াই’ প্রয়োগে কাম সক্ষমতা ও আচরণে লক্ষ্যণীয় উন্নতি ঘটে।  

উল্লেখ্য, ঈষৎ তেতো স্বাদযুক্ত এবং সুগন্ধিময় এ উদ্ভিদটি বাংলাদেশে শহর-গ্রামে শাক হিসেবে খাদ্য তালিকায় পরিচিত একটি নাম। মোটামুটি সহজপ্রাপ্য এ শাক দিয়ে ঝাল রান্না মাছ-মাংস (বিশেষত গরু ও হাঁসের মাংস) ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুরসহ কয়েকটি জেলায় অভিজাত ভোজনরসিকদের প্রিয় পদ হিসেবে সমাদৃত।

তবে প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলে গর্ভবতী ও স্তন্য দানকারী মায়েদের স্বাস্থ্য রক্ষায় মেথি গুরুত্বপূর্ণ পথ্য হিসেবে সমাদৃত। এছাড়া সাম্প্রতিক ওই গবেষণায় আরও জানা গেছে- মেথি সীমিত মাত্রায় ডায়াবেটিস (টাইপ ১ ও টাইপ ২) নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। দ্রুত মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতেও মেথি কার্যকরী। অ্যান্টি অক্সিডেন্টেরও একটি উর্বর ক্ষেত্র এ শাক। আর তাই মানব দেহে কোষ ধ্বংসকারী উপাদান ধ্বংসেও এটি সক্ষম। এর গুণ আরও আছে। নারীদের রজোনিবৃত্তিকালের (menopause) খিটখিটে মেজাজ নিয়ন্ত্রণেও এর সক্ষমতা প্রমাণিত।

এক বোঁটায় ৩পাতাবিশিষ্ট এ ভেষজটি ঠাণ্ডাজনিত সর্দি রোগ ও গলার প্রদাহ নিরাময়কারী হিসেবেও সফল। ভাইরাসরোধে অসাধারণ সক্ষমতার কারণে এটিকে ব্রিটেনে ভেষজ ব্যবহারকারীরা ধন্বন্তরী হিসেবে দেখছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, ২৭ জুন, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।