ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

টিসিবির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ডিলারদের

করিমুল বাশার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১১
টিসিবির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ডিলারদের

ঢাকা: রমজান উপলক্ষে টিসিবির দেওয়া মসুর ডাল ও খেজুর নিম্নমানের বলে অভিযোগ করেছেন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ডিলাররা। সেই সঙ্গে সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করার অভিযোগও তুলেছেন তারা।



এছাড়া টিসিবির পণ্যের মান খারাপ বলে অর্ধেকেরও বেশি ডিলার প্রথম ইনস্টলমেন্টের পণ্য নেননি। এই ইনস্টলমেন্টের সময় শেষ হচ্ছে ৩১ জুলাই।

টিসিবির একাধিক ডিলারের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে টিসিবি। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা হয় বলেই তাদের দাবি।

টিসিবির দক্ষিণ বাড্ডার ডিলার এলিম খান বলেন, ‘গত বছর টিসিবির পণ্য বিক্রি করে শুধু রমজানেই লোকসান হয়েছে ৬০ হাজার ২৪২ টাকা। এবারও যে মসুর ডাল ও খেজুর দিয়েছে, লোকসান দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ’

তিনি বলেন, ‘যদি প্রতিমাসে মাল সরবরাহ করতো, তাহলে লোকসানটা পুষিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু একবার মাল দেওয়ার পর দুই-তিন মাস আর খবর থাকে না। এভাবে কি ব্যবসা হয়। ’

রমজানের পর তিনি টিসিবির ডিলারশিপ বাতিল করবেন বলে উল্লেখ করেন।

মোহাম্মদপুরের টিসিবির অন্য এক ডিলার মো. ইসলামেরও প্রায় একই মত। তিনি বলেন, ‘টিসিবি যে খেজুর ও মসুর ডাল দিয়েছে, তাতে লোকসান দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ’

তিনি বলেন, ‘যে ব্যবসায়ী শুধু টিসিবির পণ্য বিক্রি করবে, তাকে লোকসান দিতেই হবে। নিজের দোকান থাকলে এবং পণ্য সরবরাহ নিয়মিত থাকলে, তবেই কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যায়। ’

তিনিও জানালেন টিসিবির মাল সরবরাহের দেরির কথা।

ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জুয়েল আহমেদেরও একই মত। তিনি বলেন, ‘টিসিবি যে ডাল দিয়েছে, তা মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব ডাল খাওয়ার অযোগ্য। ’

তিনি বলেন, ‘যারা মাল নিয়েছে তাদের অবস্থা দেখে টিসিবির অর্ধেকেরও বেশি ডিলার প্রথম ইনস্টলমেন্টের মাল নেননি। ’

তিনি বলেন, ‘টিসিবির ডিলার আছে প্রায় আড়াই হাজার এবং সুগার অ্যান্ড ফুড করপোরেশনের আছে ৪ হাজার ৮০০ জন। সরকার চাইলে রমজানের আগে মাল আমদানি করে সরকারি এসব ডিলারের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ’

সরকার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

টিসিবিকে কার্যকর করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘টিসিবিকে কার্যকর করতে হলে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় থেকে টিসিবিকে অবমুক্ত করে মাল আমদানি করা, দাম নির্ধারণ করার ক্ষমতা দিতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ১৩টি মিল আছে। সরকার কেন তাদের কাছে জিম্মি থাকবে। সরকার নিজেই মাল আমদানি করে তাদের জিম্মি করতে পারে। ’

তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ কেন ১৩টি মিল মালিকের হাতে জিম্মি থাকবে?’

তবে ডিলারদের এসব অভিযোগের ভিত্তিতে টিসিবির তথ্য অফিসার হূমায়ন কবিরের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি এসব কথা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন।

তিনি বলেন, ‘রমজানের জন্য ডিলারদের যে পণ্য দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে যেগুলো খারাপ পড়েছে, টিসিবি নিজ খরচে তাদের সে পণ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে। ’

সময়মতো পণ্য না দেওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পণ্য দেওয়ার পর বিক্রি শেষ হলে ডিলারদের আবেদনের সাপেক্ষে সঙ্গে সঙ্গেই আবার দেওয়া হয়। ’

তবে ঢাকায় চাহিদা বেশি থাকায় কিছুটা দেরি হয় বলে তিনি স্বীকার করেন।

ঢাকার ডিলাররা মাল নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি না করে অনৈতিকভাবে দোকানদারদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করে দেয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সব ডিলার পণ্য নিয়েছে কিনা এ প্রশ্নে জবাবে তিনি জানান, আগামী ৩১ জুলাই প্রথম ইনস্টলমেন্টের শেষ সময় হলেও এখন পর্যন্ত টিসিবির কমবেশি ২,৪০০ ডিলারের মধ্যে মাত্র ১,১০০ ডিলার পণ্য নিয়েছে।

রমজানকে সামনে রেখে পণ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে টিসিবি গত ১৯ জুলাই ডিলারদের কাছে এ বছরের প্রথম ইনস্টলমেন্ট সরবরাহ করে। প্রথম ইনস্টলমেন্টে ডিলারপ্রতি চিনি ২ হাজার কেজি, তেল ১২০০ লিটার, মসুর ডাল ৫০০ কেজি, ছোলা ৫০০ কেজি ও খেজুর ৫০০ কেজি সরবরাহ করা হয়।

এছাড়া টিসিবি ডিলারদের দেওয়া এসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়। টিসিবি ভোক্তাদের জন্য নির্ধারিত দাম প্রতি কেজি চিনি ৫৮ টাকা, মসুর ডাল ৬৮ টাকা, ছোলা ৫৮ টাকা, খেজুর (জাহেদী) ৫৫ টাকা ও খেজুর (সায়ের) ৭০ টাকা এবং তেল প্রতি লিটার ১০২ টাকা।

রমজানের প্রথম সপ্তাহে ডিলারদের কাছে এ বছরের দ্বিতীয় ইনস্টলমেন্ট সরবরাহ করা হবে এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে রমজানে তৃতীয় ইনস্টলমেন্টও দেবে বলে জানিয়েছে টিসিবি সূত্র।

দ্বিতীয় ইনস্টলমেন্টের জন্য কী পরিমাণ পণ্য মজুদ আছে, তা জানতে চাইলে টিসিবির তথ্য অফিসার বলেন, ‘পরিমাণ বললে বাজারে প্রভাব পড়ে, তাই তা বলা যাবে না। তবে যেটুকু দরকার তার অর্ধেক পণ্য মজুদ আছে এবং বাঁকি অর্ধেক মজুদের প্রক্রিয়াধীন আছে। ’

ইনস্টলমেন্ট দেওয়ার আগেই এগুলো মজুদ করা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সূত্র আরও জানায়, দ্বিতীয় ইনস্টলমেন্টে অন্যান্য দ্রব্যের পরিমাণে কমবেশি হতে পারে। তবে তেলের সরবরাহের পরিমাণ আরো বাড়বে।

এছাড়া আগে ভাড়া ও নিজস্ব মিলে টিসিবির মোট নয়টি গুদাম ছিল, যার ধারণ ক্ষমতা ছিল ৩৯ হাজার মেট্রিকটন। চট্টগ্রামে ১০ হাজার মেট্রিকটন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন একটি গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।