ঢাকা: অ্যাডভোকেট আশিফা আশরাফি পাপিয়া এমপি, তৌহিদুল ইসলাম ও আবু বকর সিদ্দিক রাজনের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এ মানবন্ধন কর্মসূচিতে সংগঠনের দুটি পক্ষ আলাদা ব্যানার ও মাইক স্থাপন করে।
এতে তুমুল বাকবিত-া ও তর্কাতর্কির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে তা সংঘাতে রূপ নিলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার মধ্যস্ততায় শান্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনজীবী ফোরামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানায় গেছে, তিন সহকর্মীর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল শনিবার সকাল ১০ টায়।
কিন্তু সকাল সাড়ে ৯ টার মধ্যেই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার ইউনিট ব্যানার ও মাইক নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি শুরু করে দেয়। এ পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ঢাকা বার ইউনিটের নব নির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ও সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার।
এদিকে সকাল ১০ টার দিকে মাইক ও ব্যানার এনে আলাদা কর্মসূচি শুরু করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আরেকটি পক্ষ। এ পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ঢাকা জেলা দায়রা জজ আদালতের সাবেক পিপি মহসিন মিয়া ও ঢাকা বারের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন।
এ সময় দুই পক্ষ পরস্পরকে মাইক বন্ধ করার আহ্বান জানায় ও বন্ধ না করলে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। সানাউল্লাহ মিয়া ও খোরশেদ আলম গ্রুপ মহসিন মিয়া ও ইকবাল গ্রুপকে ভারত ও আওয়ামী লীগের দালাল বলে আখ্যা দেয়।
এক পর্যায়ে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেও দুই পক্ষকে নিবৃত করতে ব্যর্থ হন। এ সময় উত্তেজিত তরুণ কর্মীরা মওদুদ ও রফিকুলকে ডিঙিয়ে পরস্পরকে আঘাত করতে উদ্যত হন। এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ ও রফিকুল ইসলাম মিয়া মানববন্ধন থেকে প্রেসক্লাবের ভেতরে চলে যান।
এরই মধ্যে নয়াপল্টনে একটি কর্মশালা উদ্বোধন শেষে বেলা সোয়া ১১ টার দিকে মানববন্ধনে যোগ দিতে প্রেসক্লাবের সামনে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখে মানববন্ধনে যোগ না দিয়ে প্রেসক্লাবের ভেতরে চলে যান তিনি। এরপর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে বিবদমান দুই পক্ষের নেতাদের ডেকে আনেন তিনি।
ব্যারিস্টর মওদুদ আহমদ ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে বিবদমান দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল। প্রায় ৪৫ মিনিট বৈটকের পর বেলা ১২ টার পর দুই পক্ষকে নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন তিনি।
এদিকে, ভেতরে বৈঠক চলাকালীন দুই পক্ষই মাইকে পরস্পরকে আক্রমণ করে বক্তব্য চালিয়ে যাচ্ছিল। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টর মাহবুব উদ্দিন খোকন এ সময় বলেন, ‘আমি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বলছি। আজকের কর্মসূচি ফোরামের কেন্দ্র ঘোষিত। সুতারাং এখানে আলাদা কোনো মাইক ও ব্যানার থাকবে না। ’
অপরদিকে, মাসুদ আহমেদ তালুকদারকে বলতে শোনা যায়, ‘খোকন আওয়ামী লীগের দালালদের নিয়ে মানববন্ধ করে আমাদের কর্মসূচি প- করতে চায়। ’ তিনি অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দেন।
পরে অবশ্য সাংবাদিকদের মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ‘মাইক স্থাপন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। এখন ঠিক হয়ে গেছে। ’
এদিকে, বেলা সোয়া ১২টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে তিন আইনজীবী গ্রেপ্তারের ঘটনা নজিরবিহীন ও বেআইনি। আমরা এর নিন্দা জানাই। এ কর্মসূচি আয়োজন করায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামকে জানাই ধন্যবাদ। ’
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করেই ‘দুই পক্ষের আইনজীবীদের নিয়ে নিজেই সেøাগান ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আইনজীবীদের গ্রেপ্তার করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না!’
এদিকে, মানবন্ধন শেষে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘মহসিন মিয়া ও ইকবাল হোসেন ওয়ান ইলেভেনের সময় ছিল সংস্কারপন্থী মান্নান ভূঁইয়ার দলে। তারা মূলত আওয়ামী লীগের দালাল। আর ওদের প্রশ্রয় দিচ্ছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন। ওরাই আমাদের কর্মসূচি পণ্ড করতে চেয়েছিল। ’
পরে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বার ইউনিটের সিনিয়র সহ সভাপতি বাংলানিউজকে বলেন, ‘খোরশেদ আলমের যে বক্তব্য আমারও সেই একই বক্তব্য। ’
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১১