ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

যে গ্রামের মানুষ কিডনি বিক্রি করেন

আবদুল আলীম, জেলা সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১১
যে গ্রামের মানুষ কিডনি বিক্রি করেন

জয়পুরহাট: সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে গ্রামের মানুষ এনজিও থেকে ঋণ দেয়। কিন্তু ঋণ নেওয়ার সপ্তাহের মধ্যে দিতে হয় এর কিস্তি।

যে কাজের জন্য ঋণ নেওয়া সেটা আর করা হয়ে উঠে না। একটি এনজিওর ঋণ পরিশোধ করতে আরেকটি এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়। কিন্তু তাতেও কোনো ফল আসে না। এভাবে ঋণে জড়িয়ে পড়েন গ্রামের মানুষ।

ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু আর থাকবে না- এই দুঃশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হয় অসহায় মানুষদের। এমন দুঃসময়ে একটি কিডনির বিনিময়ে নগদ এক থেকে দেড় লাখ টাকার লোভ দেখায় কিছু দালাল। প্রথমে এ প্রস্তাবে রাজি হয় না তারা। কিন্তু বাস্তবতা খুবই কঠিন। পরাজিত হতে হয় তাদের। শেষ পর্যন্ত ঋণের হাত থেকে নিজেকে ‘বাঁচা’তে কিডনি বিক্রি করতে রাজি হন তারা। এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া ঢাকায়। সেখানে কিডনি বিক্রির পর তাদের হাতে দেওয়া হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা।

এই টাকা দিয়ে সাময়িক ঋণ শোধ হলেও অনেকেই অসুস্থ হয়ে কোনো কাজই করতে পারছেন। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়েনের বহুতি ও মাত্রাই উইয়েনের ভেরেন্ডি গ্রামে। এসব গ্রামের দেড়শ’জন এরই মধ্যে কিডনি বিক্রি করেছেন। বিক্রির অপেক্ষায় আছেন আরও ২৫ জন।

বিষয়টি জানাজানি হলে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। পুলিশ রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের মূল হোতা সাত্তারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

আটককৃতরা হলেন- কালাই উপজেলার বহুতি গ্রামের আব্দুল জব্বার খলিফার ছেলে আব্দুস সাত্তার (৩৮), মৃত গোলাম মওলার ছেলে গোলাম মোস্তফ(৩৭) ও বোরহান উদ্দীন ফকিরের ছেলে আব্দুল করিম (৩৫)।

আটক ব্যক্তিরা গ্রামের গরীব মানুষদের মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে কিডনি বিক্রি করাতে বাধ্য করে। পরে তাদের ঢাকায় নিয়ে গিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কিডনি বিক্রি করে। অবশ্য কিডনি বিক্রেতাকে দেওয়া হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। এভাবে এলাকার প্রায় ১৫০ জন গরীব মানুষ কিডনি এরই মধ্যে বিক্রি করেছেন। আরও ২৫ জনকে কিডনি বিক্রির প্রক্রিয়ায় রেখেছেন।
 
কিডনি বিক্রেতাদের একজন কালাই উপজেলার বোরাই গ্রামের মৃত হাফিজার রহমানের ছেলে আইনুল হোসেন (৩০) বাংলানিউজকে জানান, অভাবের তাড়নায় তার একটি কিডনি বিক্রি করেছেন এক লাখ ৭০ হাজার টাকায়।

তিনি জানান, কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, ঠেঙ্গামারা ও গাক থেকে  ঋণ নিয়ে তা পরিশোধে ব্যর্থ হয়। একারণে গ্রামের আব্দুস সাত্তার তাকে কিডনি বিক্রির পরামর্শ দেয়। প্রথমে রাজি না হলেও অভাবের তাড়নায় একসময় তিনি রাজি হন। পরে তাকে ঢাকা নিয়ে আব্দুস সাত্তার কিডনি বিক্রি করে দেয়।

আইনুল জানান, কিডনি বিক্রির টাকা দিয়ে তার কিস্তির টাকা এখনও পরিশোধ হয়নি। বর্তমানে তিনি এখন কাজ করতে পুরোপুরি অক্ষম।

তিনি আরও জানান, কালাই উপজেলার কয়েকটি গ্রামে কিডনি ব্যবসা এখন জমজমাট। মানুষ অভাবে পড়লেই সাত্তার, করিম, মোস্তফাসহ আলও ৮/১০ জন  এলাকার চিন্নিত  দালালের কাছে যায়। দালালরা একটি কিডনি ৫-৭ লাখ টাকা বিক্রি করলেও তাদের দেওয়া হয় মাত্র ১ থেকে দেড় লাখ টাকা।

এ বাপারে জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে জানান, কিডনি বিক্রির খবর পেয়েই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে।

তিনি জানান, তাদের রিমান্ডে নিয়ে আরও তথ্য উৎঘাটন করা হবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।