মাগুরা: কানাডায় অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসার নামে ২কোটি ডলার হাতিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার তারাউজিয়াল গ্রামের মনজুর মোর্শেদ খান আজাদকে নিয়ে বাংলানিউজ ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশের পর মাগুরায় তাকে নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
বাংলানিউজের সংবাদের ওপর ভিত্তি করে ছাপানো প্রতিবেদন সম্বলিত গত রোববারের দৈনিক পত্রিকাগুলো নিমেষেই শেষ হয়ে যায়।
এদিকে, মনজুর মোর্শেদ খান ওরফে আজাদের বিষয়ে অনুসন্ধানে তার প্রতারণার আরো তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোপালগঞ্জের বাসিন্দা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থানরত মুজিবর রহমান ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, “১৯৮৪ সালে দিনাজপুরের এসএম সাব্বির, চাঁদপুরে আলী আকবর (বর্তমানে মৃত) ও আমার কাছ থেকে মঞ্জুর মোর্শেদ ‘এরাবিয়ান বসুন্ধরা এক্সপ্রেস লিমিটেড কোম্পানির’ নামে সৌদিতে লোক পাঠানোর কথা বলে ১৩ লাখ রিয়াল হাতিয়ে নেন। পরে টাকা ফেরত ও লোক পাঠাতে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। এ টাকার সম্পূর্ণ দায় বর্তায় আমার ওপর। এসময় আমি পাওনাদারদের চাপে দীর্ঘ কয়েক বছর রিয়াদে অবস্থান করতে বাধ্য হই। অতঃপর নিজের সর্বস্ব খুইয়ে বিদেশ গমনেচ্ছুদের টাকা ফেরত দিয়ে রক্ষা পাই। ”
সেলফোনে কথা বলার একপর্যায়ে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠে মুজিবর বলেন- ‘১৯৯৩ সালে আমি রিয়াদ অবস্থানকালে দেশে বিনা চিকিৎসায় আমার ৭ বছর বয়সী ছেলে সজিব মারা যায়। ওই শয়তান আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। অর্থাভাবে আমি সন্তানের কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারিনি। সারাজীবন এ দুঃখ আমাকে বয়ে বেড়াতে হবে। ’
তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন- ‘আল্লার মেহেরবানীতে মানুষের ভালোবাসায় এখন আমার অনেক মান সম্মান। আমি শয়তান মনজুর মোর্শেদের মুখোমুখি হতে চাই। দেখতে চাই তার কতবড় বুকের পাটা। আপনারা শুধু আমাকে তার সন্ধান দেন। ’
মুজিবর জানান, তার কাজে মনজুর আজাদের প্রতারণার অনেক প্রমাণপত্র আছে। তিনি বলেন, ‘আজাদের দ্বারা প্রতারিত আমরা সবাই (চাঁদপুরের মৃত আলী আকবরের স্ত্রীসহ) একজোট হয়ে শিগগিরই র্যাবের ডিজির সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানাবো এবং তার বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া শুরু করবো। ’
মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকার ব্যবসায়ী খান হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘১৯৭৯ সালের দিকে আমিসহ মাগুরা শহরের ভায়না এলাকার জবা মুন্সী, শহরের সরোয়ার মোল্যাসহ প্রায় ২৫জনকে সৌদি আরবে বিমানবন্দরে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশ পাড়ি জামানোর চেষ্টা চালান মনজুর। ওই সময় ঢাকা বিমান বন্দরে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং পরে তাকে ধানমন্ডি থানায় সোপর্দ করা হয়। বিদেশে গমনেচ্ছু কয়েকজনের টাকা ফেরত দিয়ে সে যাত্রা রক্ষা পান মনজুর। ’
মনজুর মোর্শেদ খান আজাদের গ্রামের বাড়ি তারাউজিয়ালে এখনো তার দুই ভাই আকরামুল হাসান তপন ও ফয়সাল আজম স্বপন বসবাস করেন। তবে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য খোঁজ করেও মনজুরর মোর্শেদ খান বা তার ভাইদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানকালে নিজেকে মনজুরের চাচাতো ভাই পরিচয় দানকারী প্রতিবেশী আকিদুল আজম খান জিহাদ ও দূর সম্পর্কের ভাতিজা তসলিম জামান বলেন- ‘মনজুর মোর্শেদ খান দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় বসবাস করে ব্যবসা বাণিজ্য করেন। তার বিষয়ে আমরা আর কিছুই জানি না। ’
মঙ্গলবার দুপুরেও এলাকায় তার খোঁজ করে কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে গত এক সপ্তাহ আগেও তাকে এলাকায় দেখা গেছে বলে অনেকে দাবি করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, ঘোলা কাচের দামি জিপে করে তিনি এলাকায় আসেন মাঝেমধ্যে।
গত রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) মনজুর মোর্শেদ খান সম্পর্কে শ্রীপুর থানায় খোঁজ নিতে গেলে উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন- ‘সম্প্রতি মনজুরএকটি পিস্তল (ব্রাজিলের তৈরি .৩২ বোরের) ও একটি শটগানের লাইসেন্স পেয়েছেন । ৫/৭ দিন আগে এ বিষয়টি এন্ট্রি করতে তিনি থানায় এসেছিলেন। এর বেশি আমরা তেমন কিছুই জানি না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১১