ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

এবার পুকুরেই ইলিশ!

জাকিয়া আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট <br> জি এম শাহীন , চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১১
এবার পুকুরেই ইলিশ!

চাঁদপুর থেকে ফিরে: গভীর সমুদ্র ও নদীর ইলিশ এবার বদ্ধ জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ১৪ বছর গবেষণার পর পাওয়া সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ইলিশ বিশেষজ্ঞরা বদ্ধ  পুকুরের মিঠা পানিতে রূপালী ইলিশ চাষ পদ্ধতি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পুকুরে শুরু হওয়া ইলিশ চাষে সাফল্য এলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন  ঘটবে বলেই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গেল বছর দেশে ৭ হাজার কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৩ লাখ ১৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদন হয়েছে। জাটকা শিকারের পাশাপাশি নদীর নাব্যতা সংকট, পানি দূষণে যখন ইলিশের অস্বিত্ব রক্ষা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন এই পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ চাষ শুরু হওয়ায় দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। গবেষকরা জানিয়েছেন, পুকুরের পানিতে ইলিশের সকল প্রকার প্রাকৃতিক খাদ্যগুণ পর্যাপ্ত পরিমানে রয়েছে।  

মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউট চাঁদপুরের ইলিশ গবেষক ও সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুকুরের মিঠা পানিতে ১৯৮৮ সাল থেকে ইলিশ চাষ করা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। দীর্ঘ ১৪ বছর গবেষণার পর চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউট ইলিশ গবেষকরা সফলতা পায়। ইনিস্টিটিউটের ৩টি পুকুরে গত বছরের জুলাই মাসে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তিন বছর মেয়াদী ইলিশ চাষ শুরু হয়। এরইমধ্যে দেড় বছর শেষ হয়েছে। আগামী দেড় বছর পরই আমরা এর সুফল সাধারণের মাঝে পৌঁছে দিতে পারবো বলে আশা করছি। ’

বদ্ধ জলাশয় অর্থাৎ পুকুরে ইলিশ চাষ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু করা গেলে দেশে মৎস্য চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে ধারনা করা গেলেও এখনো রয়ে গেছে নানা শঙ্কা।

বিশেষ করে পুকুরে ইলিশ চাষকে অনেকেই একুরিয়ামে ধনীদের মাছ চাষের সঙ্গে তুলনা করেছেন। চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিগত ১৯৮৮ সালেও একবার ইলিশ গবেষকরা পুকুরে ইলিশ চাষে সাফল্য পেয়েছে বলে আমাদের ঘটা করে জানিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর এ সাফল্য দৃশ্যমান হয়নি। ’

তিনি জানান, গভীর সমুদ্রের ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে। পানির ¯্রােত না পেলে এ মাছের শারীরিক গঠন বৃদ্ধি পায় না। সেই সঙ্গে ইলিশের পোনাও সহজলভ্য নয়।
 
ড. আনিস অবশ্য জানান, ৯ সেন্টিমিটার আকারের প্রতিটি ইলিশের পোনা দেড় বছরে পুকুরে বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৪০ ভাগ। এখন প্রতিটি ইলিশের পোনা হয়েছে ২২ সেন্টিমিটার। তবে এই বৃদ্ধির হার নদী কিংবা সমুদ্রের ইলিশে চেয়ে কিছুটা কম।

তিনি জানান, পুকুরে বাণিজ্যিক চাষ শুরু হলে রেনু পোনার অভাব হবে না।
 
ড. আনিস আরও বলেন, ‘এখন প্রতি বছর কারেন্ট জাল দিয়ে নিধন করা হয় গড়ে ১৪ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন জাটকা। কিন্তু এই জাটকার যদি ২০ ভাগও রক্ষা করা যেতো, তাহলে ১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত ইলিশ উৎপাদিত হতো। যার দাম হতো ৩ হাজার কোটি টাকা। পুকুরে চাষ সর্বত্র শুরু হলে কোন জেলে আর কারেন্ট দিয়ে জাটকা নিধন না করে রেনু সংগ্রহ করে খামারীদের কাছে বিক্রি করবে। ’
 
বাংলাদেশে মোট মৎস্য উৎপাদনে উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আসে ৪২ ভাগ। এর মধ্যে ইলিশই ১২ ভাগ। বাকি ৫৮ ভাগ আসে বদ্ধ জলাশয় থেকে। অনেক সময় আমিষের ঘাটতি মেটাতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মাছ আমদানিও করতে হয়।
 
ইলিশ গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীতে ৫ প্রকার ইলিশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে বার্ষিক ইলিশের আহরণ মাত্রা সারা বিশ্বে প্রায় ৫ লাখ টন। যার ৫০-৬০ ভাগ পাওয়া যায় বাংলাদেশে। ২০-২৫ ভাগ মায়ানমারে, ১৫-২০ ভাগ ভারতে এবং ৫-১০ ভাগ পাওয়া যায় মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, ভিয়েতনাম ও শ্রীলংকায়।

ড. আনিস আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আগামী বছরের অক্টোবর নভেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ চাষের সাফল্যের কথা। ’

মৎস্য চাষী, জেলে, আড়তদার, ব্যবসায়ীসহ সবার অপেক্ষা এখন সেই সময়ের।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।