২০১১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া তিনজনের মধ্যে একজন নারী ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেও তিনি ইয়েমেনের মানুষের কাছে ‘লৌহ মানবী’ নামেই পরিচিত।
সালেহ সরকারের পতন ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের দাবিতে বিগত আট মাস ধরে ৩২ বছর বয়সী তাওয়াক্কুল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলেছেন। বিক্ষোভরত তরুণদের সংগঠিত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কখনও শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, আবার কখনও সবার অন্তরালে আন্দোলনের সামনের কাতারে থেকে আন্দোলনকারীদের সমর্থন জোগাচ্ছেন।
তিনি এবং তার মতো অনেক তরুণ বিক্ষোভকারী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের জন্য দিনের পর দিন ছুটে বেড়াচ্ছেন ইয়েমেনের বিভিন্ন প্রান্তে। যদিও সালেহ সরকার শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থাকেনি। বিদ্রোহ দমনে সর্বোচ্চ কঠোর পন্থা অবলম্বন করছেন এই স্বৈরশাসক। বিগত ৩৩ বছর ধরে সালেহ ইয়েমেনের রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন। তার পতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হলেও তিনি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর সব সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। উল্টো তার নিরাপত্তা বাহিনীকে কাজে লাগিয়েছেন বিদ্রোহ দমনে। সানা এবং অন্যান্য শহরগুলোকে বানিয়েছেন রণক্ষেত্রে। প্রতিদিন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মারা পড়ছে নিরীহ জনগণ। সালেহের এই দমন-পীড়ন নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে দেশটির আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো।
শান্তিতে নোবেল পাওয়ার পর তাওয়াক্কুল এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘নোবেল পুরস্কার পেয়ে আমি খুবই খুশি। যে তরুণরা ইয়েমেনের বিপ্লবের জন্য কাজ করছেন, এই পুরস্কার তাদের জন্য। ’
ইয়েমেনের দক্ষিণের তাইয়াজ শহরে বাস করেন এই নোবেলজয়ী। শহরটিতে মূলত সম্ভ্রন্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীরা বাস করেন। আর এই শহর থেকেই প্রথম সালেহের শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দানা বেঁধে উঠে।
‘আরব বসন্তে’র অনেক আগে থেকেই তাওয়াক্কুল দেশটির দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তৎপর ছিলেন। আরব বসন্তের প্রভাবে একে একে জেগে ওঠে তিউনিশিয়া, মিসর, ইয়েমেনসহ পাশ্বর্বর্তী আরও অনেক দেশ। দেশগুলোর একনায়কতান্ত্রিক শাসক, অর্থনৈতিক দুরবস্থা আর দুর্নীতির কবল থেকে মুক্তি পেতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে জনগণ।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নেও অনেক দিন ধরেই আন্দোলন করছেন তাওয়াক্কুল। তিনি সাংবাদিক এবং সাংবাদিকতাকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে সাংবাদিকদের নিয়ে গঠন করেছেন একটি মানবাধিকার সংগঠন। এছাড়া তিনি ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিস্ট ইসলাহ পার্টির সিনিয়র সদস্য। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় তিনি ছোটোখাটো বেশকিছু আন্দোলন সংগঠিত করেছেন।
২০১০ সালে তিউনিশিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর সেই আগুনে জ্বলে উঠতে সময় লাগেনি ইয়েমেনের জনগণের। কারণ দীর্ঘদিনের অন্যায়-অত্যাচারে তাদের পিঠ ঠেকে গিয়েছিল দেয়ালে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পশুরুতেই জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ সানাতে তার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইয়েমেনে একজন নারীকে জেলহাজতে নিয়ে যাওয়া খুবই বিরল ঘটনা। যদিও তাকে কয়েক ঘণ্টা আটক করে রাখা হয় কিন্তু তার এই আটকের খবর বিক্ষোভরত জনগণের মনে আরও বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
এরপর থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা রাজধানী সানার পরিবর্তন চত্বরে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। বিক্ষোভরত জনগণের একটাই দাবি, প্রেসিডেন্ট সালেহ’র পতন। তাইয়াজ শহরে প্রায় প্রতিদিনই সরকারি বাহিনীর হাতে নিরীহ জনগণ মারা যাচ্ছে। আর এই সদ্য নোবেলজয়ী নেত্রী জাতীয় পরিষদ গঠন করে তরুণদের নিয়ে বিপ্লবের পথে কাজ করে যাচ্ছেন অবিরাম।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১১