সে কথা বলে না কেউ। যারা দেখেছেন তারা নিশ্চুপ।
শুনেছি ওরা হায়েনার মত এসেছিল পাখি ডাকা শান্ত ২২ শে নভেম্বর প্রভাতে। গ্রামের সবাই তখন আধঘুমে। কে জানতো আজ রবি নয় জলবে আগুন ? ঘোষপাড়া থেকে শুরু করে জমিদার বাড়ি পুরো গ্রামশুদ্ধ আগুন। চারিদিকে মানুষের আহাজারি। জানা গেল হানাদার বাহিনী ঢুকেছে গ্রামে। কোন দোষ ছিল না হরিপদ ঘোষের অথচ বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে মারা হল তাকে। তারপর জমিদার সিদ্দেশরী রায়। সমগ্র শরীরে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে মারা হলো তাকেও। একে একে ৪৩ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করা হল সেদিন।
আমি হতবাক হয়ে শুনি সেই ইতিহাস। আমাদেরে প্রজন্ম একে নিছক এক গল্পই মনে করে। কেননা ইতিহাসের পাতায় তার কনো ঠাঁই নেই কিংবা শহীদের আত্মদান স্বরূপ কোন মিনার গড়ে উঠে নি এখানে। শহীদের কোন সঠিক তালিকাও নেই। যাদের আত্মদানে এই পতাকা এই মানচিত্র, তাদের ইতিহাস আমরা জানি না। এ নিয়ে কোন উদ্দেগ দেখি না স্থানীয় সরকার কিংবা প্রশাসনের কারোরই।
আমার শিশু কালের গ্রাম বলে বলছি না তেরশ্রী গ্রাম বাঙ্গালি সভ্যতার হাজার বছরের সাক্ষী। একটা পুরাণ মন্দির আছে এই গ্রামে। শুনেছি এটা সম্রাট অশোকের শাসন আমলের। ব্রিটিশ উপনিবেশ আনুমানিক উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ঢাকার বাইরে এ অঞ্চলে কেবল মাত্র দুটি কলেজ ছিল এক মুন্সিগঞ্জের `হরগঙ্গা কলেজ` আর `মানিকগঞ্জ কলেজ` তেরশ্রী।
বাঙ্গালি সভ্যতার ২য় ধাপ হিসেবে খ্যাত ৫২`র ভাষা আন্দোলনেও এই গ্রামের `ওয়াজ উদ্দিন মাস্টাররা অনেক ভুমিকা পালন করে। এই গ্রামের সন্তান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক `রহমান ঠাকুর` ``আফসার মাস্টার`` রা বাঙালি সভ্যতার মহানায়ক। অথচ সভ্যতার ইতিহাস যারা লেখেন তার জানেন না সত্যিকারের ইতিহাস কতটা বেদনাময় ! তাই ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় তবু ১৬ ডিসেম্বরের সকল আয়জন কে কেবল নিছক অনুষ্ঠান বলে মনে হয়।
[email protected]