ঢাকা: বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের পণ্য পূর্বাঞ্চলে চলাচলের জন্য দেওয়া ‘পরীক্ষামূলক’ ট্রানজিট বা অন্য যেকোনও ট্রান্সশিপমেন্ট পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছে বাংলাদেশ।
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান শুক্রবার বিকেলে বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শাজাহান খান বলেন, ‘আগেই সিদ্ধান্ত হয়, পরীক্ষামূলকভাবে ভারতের মালামাল নিয়ে ৩টি জাহাজ এদেশে আসবে। ’
নৌমন্ত্রী বাংলানিউজকে আরও বলেন, ‘ট্রানজিট তো ভারতকে দেওয়া হয়নি। যা হয়েছে তা পরীক্ষামূলক। ’
তিনি বলেন, ‘যাই হোক না কেন, আপাতত ভারতের আর কোনও জাহাজ ট্রানজিটের বা ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসছে না। ’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার ব্যাপারে পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে অবশ্যই ভারতের সঙ্গেও আলোচনা হবে। ’
এদিকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শুক্রবার বাংলানিউজকে বলেন,‘মূলত: অবকাঠামো সমস্যার কারণেই ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ’
নৌ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবারই মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
তিন ঘণ্টার ওই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে যৌথ ইশতেহারের ঘোষণা অনুযায়ী সড়ক পথে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আসা পণ্য পরিবহনে মংলা এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার লক্ষ্যে সড়ক রুট নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ট্রানজিট দেওয়ার আগে জাতীয় মহাসড়কগুলো চার লেনে উন্নীত করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া আশুগঞ্জ বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।
চলতি বছর ১৮ ফেব্র“য়ারি ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর গোয়ায় অনুষ্ঠিত প্রটোকল নবায়ন বৈঠকে আশুগঞ্জকে ট্রান্সশিপমেন্ট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় ৭২৬ মেগাওয়াটের পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারি যন্ত্রাংশ আশুগঞ্জ হয়ে আগরতলায় পরিবহন শুরু হয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাল পরিবহনের পর ‘পরীক্ষামূলক ট্রানজিট’ শুরু হয় গত ২৯ সেপ্টেম্বর।
এরপর ১৯ অক্টোবর ‘পরীক্ষামূলক নয়’ এমন পণ্য নিয়ে ভারতের মালামাল নিয়ে একটি চালান আশুগঞ্জে আসে।
ভারতীয় পণ্যের প্রথম বাণিজ্যিক চালান আগরতলা পৌঁছেছে। এছাড়া গত বৃহস্পতিবারও একটি চালান আখাউড়া থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে আগরতলা গেছে।
আখাউড়া স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বাংলানিউজকে জানানো হয়, গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে তাদের চিঠি দিয়ে জানায় যে, ভারতীয় যেসব পণ্য এখন আসবে সেগুলোকে যেন ‘ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট’ হিসেবে গণ্য করা হয়। যদিও ফি নেওয়া হবে কী হবে না তা ওই চিঠিতে বলা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ট্রানজিটের ফি নির্ধারণে কোর কমিটি কাজ করছে। তারা ভাড়া বা ফি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও দিয়েছে। ’
নৌমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত ফি দেবে না বা আমরা নেবো না- এমন কোনও কথা তো হয়নি। কোর কমিটির সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে সরকার নিশ্চয়ই দেশের স্বার্থে যা ভালো সে সিদ্ধান্তই নেবে। ’
নৌ মন্ত্রণালয় জানায়, অবকাঠামো না থাকায় আরও তিন বছর সময় নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ট্রানজিট প্রদানের প্রস্তাব করেছে ট্রানজিটের ফি নির্ধারণের কোর কমিটি।
সরকারের কাছে জমা দেওয়া কোর কমিটির প্রতিবেদনে ভারত, নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দিতে সড়ক, রেল ও নৌপথের জন্য ১৭ রুট প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি করে রুট সড়ক ও রেলপথ এবং তিনটি নৌপথ। এর বাইরে সড়ক, রেল ও নৌপথের জন্য দু’টি করে আরও ছয়টি পথ সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কোর কমিটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ টানজিট দেয়া হলে বছরে এক কোটি ৭৩ লাখ টন পণ্য বহন করা সম্ভব হবে। ট্রান্সশিপমেন্ট দেওয়া হলে ১৮ লাখ টন পণ্য বহন করা যাবে।
ট্রানজিটের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে পরবর্তী ১০ বছরে ৪৭ হাজার ৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে বলেও জানিয়েছে কোর কমিটি।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১১