ঢাকা: শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। এক কোটি ৯০ লাখ গ্রাহক নিয়ে আগামী বছর ৪০ বছর উদযাপন করবে দেশের বেসরকারি খাতের বৃহৎ ব্যাংকটি।
বিশ্বে ইসলামিক মাইক্রোফিন্যান্স পদ্ধতির সফল প্রবর্তক ব্যাংকটি মানবতার কথা বলে। বলে কল্যাণের কথাও। আর তাই সুদমুক্ত ও কল্যাণমূলক ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকদের কাছে প্রতিষ্ঠানটি আস্থার নাম। একটি ভালো ব্যাংকের যেসব সূচক আছে তার সবগুলোয় শীর্ষে আছে ইসলামী ব্যাংক। এ দাবি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলার।
ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে তার সঙ্গে একান্ত আলাপ করে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। এ সময় দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় দায়িত্বশীল ব্যাংক হিসাবে এলসি খোলা; লাবিব গ্রুপের সঙ্গে নিয়মিত লেনদেন; ছয় মাসের মধ্যে বকেয়া নিয়মিত করা ও ব্যাংকটিকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০০ ব্যাংকের মধ্যে প্রবেশ করানোর প্রত্যয়ের কথা বলেন মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট জাফর আহমদ। ছবি তুলেছেন সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট দেলোয়ার হোসেন বাদল।
প্রথমেই কুশল বিনিময় করা হয় ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে। পরে তার কাছ থেকে ব্যাংকের প্রধান সূচকগুলোর অবস্থা জানতে চান এ প্রতিবেদক। উত্তরে মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, ইসলামী ব্যাংক অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। যার ফুট প্রিন্ট অনেক স্ট্রং। সব সূচকে আমরা শক্তিশালী অবস্থানে আছি। ইসলামী ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ৩৯৩। আমাদের এজেন্ট আউটলেট আছে প্রায় দুই হাজার ৭০০টি, উপশাখা আছে ২০৩০টি, এটিমএ-সিআরএম বুথ আছে ২৫০০টি। সবমিলিয়ে ছয় হাজার আউটলেট থেকে সারা দেশের গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছি। আমাদের এক কোটি ৯০ লাখ গ্রাহক আছে। তাদের পরিবারের সংখ্যা যদি হিসাব করি, তাহলে প্রায় আট কোটি মানুষ ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। ব্যাংকটিকে পরিমাপ করতে যেসব সূচক পরিমাপ করা হয়, যেমন- ব্যাংকের ডিপোজিট, বিনিয়োগ এক্সপোর্ট, রেমিট্যান্স, অপারেটিং প্রফিট, খেলাপি ঋণসহ সব সূচকে দেশে কর্মরত ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক শীর্ষস্থানে।
সরাসরি সাক্ষাতে অন্য ব্যাংকগুলোও কেন ইসলামী ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে এবং তাদের মার্কেট শেয়ার কেমন? প্রশ্ন করে বাংলানিউজ।
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, কল্যাণমুখী ব্যাংকিংয়ের কারণে সবাই এখন ইসলামী ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছে। ইসলামী ব্যাংকিং সুপিরিয়র সিস্টেম হওয়ায় পরবর্তীতে ইসলামী ব্যাংককে অনুসরণ করে আরও ১০টি ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ধারায় পরিচালিত হচ্ছে। আরও কিছু ব্যাংক ইসলামী ধারায় কনভার্সনের জন্য আবেদন করেছে। দেশের বাইরে যে এক কোটি ৩৫ লাখ মানুষ আছে তাদের ৮০ শতাংশের অ্যাকাউন্ট ইসলামী ব্যাংকে। ডিপোজিটে ১০ শতাংশ, বিনিয়োগে ক্ষেত্রে আমাদের মার্কেট শেয়ার ১৩ শতাংশ। এছাড়া প্রায় ৩০ শতাংশ রেমিট্যান্স আহরণের মধ্য দিয়ে শীর্ষে আছে ইসলামী ব্যাংক।
বাংলানিউজ: ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে। আপনাদের অবস্থা কী?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: আমরা যেহেতু নগদ ঋণ দেই না। তার পরও বাজারমূল্যের পরিবর্তনের কারণে কিছুটা ঝুঁকি আছে ঋণে। গত বছর বছর আমাদের খেলাপি বিনিয়োগ ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমে বর্তমানে ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশে আছে। আগামী বছরের মধ্যে এটাকে তিন শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে চাই।
বাংলানিউজ: বিদেশি মালিকানা থেকে বিদেশি শেয়ার কমেছে?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বিভিন্ন সময় আমাদের ব্যাংকে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আমরা ১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করি। পরিবর্তন সার্বজনীন একটি বিষয়। পরিবর্তন হতেই পারে, কারণ আমরা পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। আমাদের ব্যাংকের শুরুতে ৭২ শতাংশ বিদেশি শেয়ারহোল্ডার ছিলেন। এখন সেটা ৪৩ শতাংশ। আমাদের বিদেশি শেয়ারহোল্ডাররা চলে যাননি। ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের পৃথিবীর যেকোনো দেশে কেউ ইসলামী আর্থিক সেবা প্রদানের উদ্যোগ নিলে, সেখানে সহযোগিতা করে, বিনিয়োগ করে। সেই সাপোর্ট উনারা (ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) আমাদের দিয়েছেন ১৯৮৩ সালে। একটা পর্যায়ে এসে শেয়ারের একটা ভাগ অন্য যায়গায় নিয়েছেন। ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের একজনসহ মোট তিনজন বিদেশি প্রতিনিধি আছেন আমাদের বোর্ডে। উনারা এখন সুদানে একটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার জন্য আমাদের কিছু শেয়ার উঠিয়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বেড়েছে। তাই বাংলাদেশের মানুষ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কিনেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের একজন স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারের প্রধান ব্যবসা ছিল গার্মেন্টস। উনারা গার্মেন্টস ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমাকে জানিয়েই উনি শেয়ার বিক্রি করেছেন, ডিক্লারেশনসহ। উনি বলেছেন, আমার ব্যবসা একটু ভালো হলে, ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার আবার কিনে নেব। আমাদের শেয়ার কেউ সাধারণত বিক্রি করেন না।
২০১৭ সালে যখন আমাদের মালিকানায় পরিবর্তন আসে; ১৯৮৩ সাল থেকে ওই পর্যন্ত এসে আমাদের ডিপোজিট ছিল ৫৮ হাজার কোটি টাকার মতো। আজ, ২০২২ এসে পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা আমাদের বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করেছি এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। আমরা ৩৮ বছরে ডিপোজিট নিয়ে গেছি ৫৮ হাজার কোটি টাকায়। পরিবর্তনের পরে এই পাঁচ বছরে সেটা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায়।
বাংলানিউজ : সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে কিছু খবর এসেছে। এ সম্পর্কে আপনি কিছু বলতে চান?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সারাবিশ্ব স্তব্ধ হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে ঋণ সুবিধা দেওয়ায় তারা আস্থা, সাহস ফিরে পান। অনেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর দেশ হওয়ায় জ্বালানি, ভোজ্য তেল, খাদ্য দ্রব্যসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে হয়। যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে ওই সময়ে কোভিডের কারণে দেশগুলোর ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড কার্যত বন্ধ ছিল। ২০২২ সালের শুরুতে এ সব দেশ আবার আমদানি বাণিজ্য পুরোদমে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আমদানি হওয়া সারের ৮০ শতাংশ ঋণপত্র (এলসি) একাই ইসলামী ব্যাংক খুলেছে। দুই মাস দেশের চিনির সমস্যা হয়েছিল। সেই সময় আমাদের বলা হয়েছিল এলসি খুলতে। আমাদের বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বড় ব্যাংক; ক্যাপাসিটি আছে। আমরা দায়িত্বের জায়গা থেকে এলসি খুলেছি। ওই সময় যদি ব্যাংক দায়িত্ব পালন না করতো- তাহলে হয়তো ক্রেতার পকেটে অর্থ থাকলেও বাজারে পণ্য পাওয়া যেতো না। চিনি ১০০ টাকার কাছাকাছি দামে পাওয়া গেলেও সেটা হয়তো পাঁচশ টাকায় কিনতে হতো।
আমাদের যারা পরীক্ষিত ক্লায়েন্ট-ইম্পোর্টার আছে, তাদের মাধ্যমে আমাদনিগুলো করেছি। এরপর পণ্যগুলো সারা দেশে পৌঁছানোর কাজটি করে থাকে হোলসেলার ও রিটেইলাররা। তাদের ডিস্ট্রিবিউশনের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কিছু বিনিয়োগ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন ফলো করে এক বছরের জন্য বিনিয়োগ করেছি। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
বাংলানিউজ: গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণের টাকা কবে নাগাদ ফেরত পাবেন বলে আশা করছেন?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংকের মেকানিজমে কাউকে ক্যাশ টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা আমদানিকারকদের টাকা দিয়েছি। তারা যারা ডিস্ট্রিবিউট করেন, রিটেইলার আছেন, হোলসেলার আছেন তাদের কাছে মালামালগুলো দিয়েছে। তারা মালামালগুলো সরবরাহ করেছে। এখন সেই সরবরাহ করা মালামালগুলো বাজারে বিক্রি হচ্ছে; ধীরে ধীরে আমাদের টাকাগুলো ফিরে আসবে। এটা আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমরা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলছি, ব্যাংকিংয়ের যে নিয়মকানুন যেটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে ফলো করে আসছি। সেই নিয়মকানুন মেনেই বিনিয়োগগুলো করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগ করেই আমাদের কাজ শেষ করি না। আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করি। গতিবিধি লক্ষ্য করি মালামালগুলো কোনদিকে যাচ্ছে। প্রতিদিনের লেনদেনের আমাদের কাছে রিপোর্ট থাকে। মালামালগুলো বিক্রি হওয়ার পর টাকাগুলো ব্যাংকে আনার ক্ষেত্রেও আমাদের নেটওয়ার্ক কাজ করে। এক বছরের মধ্যে যখন মালামাল বিক্রি হবে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে গ্রাহক বাধ্য হবে এবং দিয়ে দেবে। আমি খুবই আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছি, মালামাল বিক্রি হওয়ার পর টাকা ফিরে আসবে।
যেসব অভিযোগ ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে করা হচ্ছে তা অতিরঞ্জিত। কোনো কোনোটা একেবারে মিথ্যা। বলা হয়েছে আমরা এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়েছি। এখানে কোনো গ্রেস পিরিয়ড দেওয়ার সুযোগ নেই। আর সত্য যেটা, সেটা হলো নভেম্বর মাসে ঋণ দেওয়া হয়েছে। গত মাসে আমরা বড় বিনিয়োগ করেছি। বিষয়টি গত মাসেরও নয়; আমরা সব সময় বিনিয়োগ করি। নভেম্বর এসে ডিস্ট্রিবিউশনের যে কাজগুলো সেগুলো করতে হয়। আমদানির পর গত মাসে এই বিনিয়োগগুলো করা হয়েছে। সত্যটা হলো নভেম্বর মাসে এসে অনেকগুলো ননফান্ডেড বিল ফান্ডেড হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের সিইও আরও বলেন, করোনার আগে ২০১৯ সালে ইসলামী ব্যাংক ১৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। ২০১৯ সালে যে আইটেমটার দাম ১০০ টাকা ছিল, এখন সেটার ডলার মূল্য বেশি। এ ছাড়া বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও পরিবহনের খরচ বৃদ্ধির কারণে দাম তিন থেকে চারগুণ বেড়েছে। আমরা সেই হিসাবে ২০১৯ সালে যদি ১৫ হাজার কোটি টাকায় করি, ২০২২ সালে সেই ব্যবসা করতে ৪৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হওয়ার কথা ছিল। আমাদের বিনিয়োগ হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। আমি তো সেই জায়গায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারিনি।
বাংলানিউজ: ইসলামী ব্যাংক কোনো বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দিয়েছে?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: আমাদের ঋণ ব্যবস্থাপনায় বেনামে ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই। নাম, জাতীয় পরিচয় পত্র যাচাই করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী সিআইবি করে প্রতিটি ঋণ দেওয়া হয়। বিভিন্ন এলাকায় হোলসেলার আছেন যাদের প্রোপাইটরশিপ লাইসেন্সে ব্যবসা করেন। তারা কোটি কোটি টাকা ব্যবসা করলেও ঋণ দেওয়া ব্যাংকের জন্য সহজ না। সম্প্রতি আমাদের এমন একজন গ্রাহক তার ছেলের নামে লিমিটেড কোম্পানি করে ঋণ পেয়েছেন, যার সাথে আমাদের কয়েক দশকের ব্যবসা রয়েছে। আমরা মালামালে বিনিয়োগ করে ব্যবসা করি। বিনিয়োগের সময় ট্রাস্ট রিসিপ্ট নামে একটা কাগজের মাধ্যমে চুক্তি হয়। ব্যবসায়ীরা সারা দেশের অনেক গুদামে মালামাল রক্ষণাবেক্ষণ করেন। কিন্তু ব্যাংকের পক্ষে সবগুলো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না অনেক সময়। এমন একটি ট্রাস্ট রিসিপ্ট নিয়ে অভিযোগ ছিল। আমি রিসিপ্ট নিয়েছি, কি নিইনি সেটা ব্যাংকের বাইরে অন্য কারও পক্ষ জানা কি সম্ভব?
বাংলানিউজ: নাবিল গ্রুপসহ তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান কি?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: প্রায় বিশ বছর আগে ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দেশের বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে নাবিল। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় অটো রাইস মিলসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে তাদের। সকল নীতি পরিপালন করে আমরা ঋণ দিয়েছি। এই গ্রাহকের লেনদেন ভালো, গত বিশ বছরে কোনো অভিযোগ আসেনি। গত কয়েক বছর ধরে তারা ট্রেডিং ব্যবসায় এসেছে যা শিমুল এন্টারপ্রাইজের নামে পরিচালিত হচ্ছে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির পাশাপাশি লোকাল ট্রেডও করে প্রতিষ্ঠানটি। আমরা তাদের কিছু পরিবেশককে ঋণ দিয়েছি, যেগুলোকে বলা হচ্ছে বেনামি। তাদের এই বিনিয়োগগুলো সকল নীতি মেনেই করা হয়েছে। আমাদের কাছে তাদের ফিক্সড ডিপোজিট আছে। আমরা শতভাগ নিরাপদ আছি। এই ঋণগুলো আগামী ছয়-সাত মাসের মধ্যে নিয়মিত হয়ে যাবে।
বাংলানিউজ: গ্রাহকের আস্থা বাড়াতে কি করেছেন।
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বাংলাদেশে ব্যাংকের মধ্যে দৃষ্টিতে সবচেয়ে কমপ্লায়েন্ট ব্যাংকের মধ্যে শীর্ষে আছে ইসলামী ব্যাংক। সবচেয়ে টেকসই ব্যাংকের কথা যদি বলা হয়, সেটাও ইসলামী ব্যাংক। শীর্ষস্থানীয় টেকসই ব্যাংকও ইসলামী ব্যাংক। অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে কিছু গ্রাহক টাকা তুলে নিয়েছেন। তারা ভুল বুঝতে পেরে আবার জমাও দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও বলেছে, ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ নিরাপদ আছে। এর চেয়ে বড় স্বস্তির যায়গা আর হতে পারে না। আমাদের গ্রাহকেরা সময়মত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাংলানিউজ: ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু যদি বলতেন ...
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ইসলামী ব্যাংকের আবির্ভাব বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বাংলাদেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে এই ব্যাংকই প্রথম ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসে। যারা সুদসংক্রান্ত ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাংকিং এড়িয়ে চলত। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দ্য ব্যাংকার ম্যাগাজিনের জরিপে বিশ্বসেরা এক হাজার ব্যাংকের তালিকায় বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে এবং টানা ১০ বছর ধরে স্থান পেয়ে আসছে ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তর্জাতিক কাউন্সিল সিবাফি ইসলামী ব্যাংককে ২০১৯ সালে ‘ওয়ার্ল্ডস বেস্ট ইসলামিক ব্যাংক’ হিসেবে পুরস্কৃত করে। আমরা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এক হাজার ব্যাংকের মধ্যে ৮৮২তম স্থানে আছি। আমরা এই অস্থানকে আরও এগিয়ে নিতে চাই। সেরা ১০০ ব্যাংকের মধ্যে প্রবেশ করানোর স্বপ্ন আমাদের রয়েছে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন এই ব্যাংকের প্রত্যেকটি কর্মী।
বাংলানিউজ: এসএসই গ্রাহক নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের কী ধরনের কার্যক্রম আছে?
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: কমার্শিয়াল ব্যাংক হওয়ার পরও আমরা মাইক্রোফিন্যান্স করেছি। মাইক্রোফিন্যান্স কস্টলি হওয়ায় বাংলাদেশে কোনো বেসরকারি ব্যাংক এটি করে না। আমরা আমাদের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে ১৯৯৫ সাল থেকে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
ইসলামী ব্যাংকের এমডি আরও বলেন, দেশের একেবারে প্রান্তিক এলাকা যাদের কোনো মর্টগেজ দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তাদের আমরা গ্রোথভিত্তিক জামানতের মাধ্যমে ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে এসেছি। পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে বিনিয়োগ করে থাকি। ফাইনান্সের অধিকাংশ কৃষি ও কৃষি জাতীয় গ্রামে যেসব কার্যক্রম আছে, তাতে ৪২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। এ মুহূর্তেও এই সেক্টরে মাইক্রোক্রেডিট- যেটাকে আমরা রুরাল ডেভেলপমেন্ট স্কিম বলি, এই স্কিমে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ স্থিতি আছে। এবং এই প্রকল্পের একেবারে গ্রামীণ পর্যায়ে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ। এই ১৬ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৯২ শতাংশ নারী মা বোনেরা।
বাংলানিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২২
জেডএ/এমজে