ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি আরো বাড়বে!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি আরো বাড়বে! সাত ব্যাংকের লোগো

ঢাকা: ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন আর্থিক সূচকের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে মূলধন ঘাটতি আরো বাড়বে। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচটি বাণিজ্যিক ও দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে অনুষ্ঠিত সভায় এ আশঙ্কা করা হয়েছে।

এসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান-ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ৭ ব্যাংকের উদ্বৃত্তি-ঘাটতি বিষয়ে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিন বছরের বিস্তারিত তথ্য পর্যালোচনা করে বলা হয়, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ৭  ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৪ হাজার ৬শ’ ৯৯ কোটি টাকা।


 
বৈঠকে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়তুল্লাহ আল মামুন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
 
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি-ভরযুক্ত সম্পদের বিপরীতে বর্তমানে সংরক্ষিতব্য মূলধন পর্যাপ্ততা ১০ শতাংশ। ইতিমধ্যে ২০১৬-২০১৯ মেয়াদে ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
 
ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নে মূলধন পর্যাপ্ততা ১০ শতাংশ হতে ধাপে ধাপে আগামী চার বছরে প্রতি বছর শূন্য দশমিক ৬২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করে ২০১৯ সাল নাগাদ ১২ দশমিক ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
 
সে বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন আর্থিক সূচকের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে মূলধন ঘাটতি সামনের দিনগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
 
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আন্তর্জাতিক রীতি অনুয়ায়ী ব্যাংকিং ও ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোতে মূলধন পর্যাপ্ততাও বাড়াতে হবে। আর সেটি করতে গেলেই ভবিষ্যতে মূলধন ঘাটতি পড়বে।
 
তবে সরকারি ব্যাংকগুলোকে শতভাগ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শও দিয়ে তিনি বলেন, বেসরকারিখাতে ছেড়ে দিলে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বাড়বে। সরকারের কাছ থেকে মূলধন সহায়তা নিতে হবে না।
 
সূত্র জানায়, জনতা ও অগ্রণী বাদে বাকি পাঁচটি ব্যাংকের ঝুঁকি ভরযুক্ত সম্পদ বিবেচনায় ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মূলধন ঘাটতি ১৪ হাজার ৬শ’ ৯৯ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতিতে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটির ঘাটতির পরিমাণ সাত হাজার ৮৩ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি তিন হাজার ৪৭৫ কোটি টাকায় নেমেছে। বেসিকের ঘাটতি ২ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা।
 
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ৭৪৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে ডিসেম্বর শেষে সংরক্ষিত মূলধনের তুলনায় উদ্বৃত্ত রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের ৪৭ কোটি টাকা, বিডিবিএলের ৭৬১ কোটি টাকা ও জনতা ব্যাংকের ৭৩ কোটি টাকা।
 
মূলধন ঘাটতির বিষয়ে হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাংকগুলোর ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়- এটি বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।
 
এ ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ওই পরিমাণ টাকা নগদ কিংবা শেয়ার বা বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে যোগান দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে ব্যাংকগুলো। আবেদনের পরেই অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক করেন।
 
মূলধন ঘাটতি পূরণে সম্প্রতি বেসিক ২০ বছর মেয়াদে ২৬০০ কোটি টাকা, রূপালী ৭ বছর মেয়াদে ৫০০ কোটি টাকা ও জনতা ১০ বছর মেয়াদে ১ হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়তে সরকারের কাছে আবেদন করেছে।
 
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, একটি কার্যকর সমাধান পেতে আমরা সবদিক মাথায় রেখে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। সময় হলে জানতে পারবেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
এসই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।