ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে জনপ্রিয় এজেন্ট ব্যাংকিং

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৪ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৭
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে জনপ্রিয় এজেন্ট ব্যাংকিং

ঢাকা: লেনদেনের সুবিধার্থে ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং। এ পদ্ধতির ব্যাংকিংয়ে সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ গ্রাহক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এরপরের অবস্থানে থাকা ১৮ শতাংশ গ্রাহক গৃহিণী।

এছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ১৫ শতাংশ গ্রাহক সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, আর ৭ শতাংশ গ্রাহক শিক্ষার্থী।

তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়ায় কৃষকদের মধ্যেও এজেন্ট ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

বর্তমানে মোট গ্রাহকের ৭ শতাংশ কৃষক। এমনকি ৩ শতাংশ দিনমজুরও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকে তাদের হিসাব খুলেছেন।

‘এজেন্ট ব্যাংকিং: আর্থিক অর্ন্তভুক্তিতে কার্যকারিতা’’ নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালের জুনে ব্যাংকিং খাতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয়। সবশেষ হিসেবে ১২টি ব্যাংক আড়াই হাজার এজেন্টের মাধ্যমে এ ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংকে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংককেই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটি করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন,এক ধরনের গোপনীয় এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু হয়েছে। যারা হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্রমেই তাদের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের স্বার্থে যা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এসব গোপন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। মোট গ্রাহকের ২৪ শতাংশ এ অঞ্চলের বাসিন্দা। এর পরেই চট্টগ্রাম বিভাগ। ১৮ শতাংশ গ্রাহক চট্টগ্রামের বাসিন্দা। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রাজশাহী। এছাড়া সবচেয়ে কম জনপ্রিয় সিলেট বিভাগ। যেখানে মোট গ্রাহকের মাত্র ৫ শতাংশ এ অঞ্চলে বসবাস করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, বেশ কয়েকটি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স নিলেও হাতে গোনা দু’তিনটি ব্যাংক পুরোদমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ৮২ শতাংশ গ্রাহক প্রত্যন্ত অঞ্চলের। যা আর্থিক অর্ন্তভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এজেন্ট ব্যাংকিংকে আরও প্রসারিত করতে হলে ব্যয় কমাতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং সত্যিকার অর্থে দু’টি ব্যাংক চালিয়ে যাচ্ছে।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হিসাব ব্যবহারের কারণে এটি আর্থিক অর্ন্তভুক্তি হচ্ছে না। এর মাধ্যমে হুন্ডি কার্যক্রমও চলছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের চেয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং নিরাপদ। কারণ হিসেবে তিনি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেন।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী এখনও ব্যাংকিং সেবা পান না। টেকসই উন্নয়নের জন্য এসব লোককে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং এবং স্কুল ব্যাংকিং সবই মূলত ব্যাংক জাল বাড়ানোর জন্য। এ কারণে এ ধরনের ব্যাংকিংয়ের জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা জরুরি। আর্থিক শিক্ষা দিতে না পারলে এজেন্ট ব্যাংকিং টিকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে একই স্থানে অতিরিক্ত শাখা না খোলার আহ্বান জানান বিআইবিএমের মহাপরিচালক।

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ও পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে এজেন্ট ব্যাংকিং বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাহলেই এ সেবা দিনদিন আরও জনপ্রিয় ও নিরাপদ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৭
এসই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।