সম্প্রতি সময়ে দেশের তিনটি সিটি করপোরেশনের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবগুলোতেই (রংপুর, খুলনা ও গাজীপুরে নির্বাচন) ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে হেরেছে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী।
এই অবস্থায় অনেক নেতা-কর্মীই বলছেন, যদি ঐক্যের ভিত্তিতে প্রার্থী না দেওয়া যায়, তবে সিলেট সিটি নির্বাচনেও জোটের প্রধান শরিক বিএনপির জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। জামায়াত প্রার্থী দিলে একটি বিরাট ভোট ব্যাংক হারিয়ে এই সিটিতেও ডুবে যাবে ধানের শীষ।
বুধবার (২৭ জুন) সিসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম ঘোষণা দেয় বিএনপি। তিনি সর্বশেষ নির্বাচনে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয়ী হয়েছিলেন।
বিএনপি মেয়র প্রার্থী ঘোষণার পর পরই জামায়াতের পক্ষে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন জামায়াতের সিলেট মহানগর আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
মনোনয়নপত্র দাখিলই শেষ নয়,বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের বৈঠকেও নিজেদের পৃথক অবস্থান নেওয়ার কথা বেশ শক্তভাবেই জানিয়েছে জামায়াত। বৈঠক শুরুর ১০ মিনিট পর বেরিয়েও যান জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম। যাওয়ার সময় তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সিলেটে মেয়র পদে প্রার্থী দেবো। এটা বিএনপির মহাসচিবকে জানিয়ে দিয়েছি’।
বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বাংলানিউজকে বলেন, ‘তারা ঘোষণা করেছে ভালো কথা। আমাদেরও প্রার্থী থাকবে। আমরা সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে থাকবে’।
সিলেট সিটি নির্বাচনে তবে কি ২০ দলীয় জোটের সমন্বিত সিদ্ধান্তে কোনো প্রার্থী থাকছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই নেতা আরো বলেন, ‘আমরা চেয়েছি, এখন তারা যদি ছাড় না দেয়, তাহলে তো আর এককভাবে নির্বাচন হবে না। আর মেয়র পদেই যদি সমঝোতা না হয়, তবে কাউন্সিলর পদেও সমঝোতা হবে না’।
জামায়াতের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে, ভালো কথা। দেখা যাক কি হয়। এটা নিয়ে পরে আলাপ-আলোচনা করে একটা কিছু করা হবে’।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখনো অনেক সময় আছে। জামায়াতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হয়ে যাবে। এটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই’।
আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই তিন সিটি নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে জানা গেছে, উচ্চ আদালতের আদেশে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে সংস্থাটি। তাই জামায়াত পৃথকভাবে লড়াই করলেও দলটির প্রার্থী ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। এক্ষেত্রে জামায়াতের প্রার্থীকে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করতে হবে।
এদিকে সিসিক নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অন্য দলগুলোর সঙ্গেও বিএনপির সম্পর্কের সুতোয় টান পড়েছে। আর এই ঘটনাটির সূত্রপাত হয়েছে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ডাকা সংবাদ সম্মেলন নিয়ে।
২০ দলীয় জোটের বুধবারের বৈঠকের পর গুলশান কার্যালয় থেকে সিসিক নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা হবে এমনটাই ধারণা ছিলো অনেকের। কিন্তু সেখানে ঘোষণা না এলেও দলের নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে রুহুল কবির রিজভী মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। এতেই ক্ষেপে যান অনেকে।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পর, হাইভোল্ডেজ একটা বৈঠক চলাকালে নয়াপল্টন কার্যালয়ে ব্রিফিং করে সিলেটের প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া, রিজভীর অতিরঞ্জন ছাড়া আর কিছু নয়। ’
গত রমজানেও এলডিপির ইফতার মাহফিল চলাকালে নয়াপল্টন অফিসে নির্বাচন নিয়ে ব্রিফিং করেছেন রুহুল কবির রিজভী। এটা জোটের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
নিজেদের মধ্যে সমন্বয় নেই এমন তথ্যও জানান ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদের বলেন, ‘গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে জোটগতভাবে কিভাবে কাজ করা যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে জামায়াতকে সিলেটে মেয়র পদে বিএনপি ছাড় দেবে কি-না এ নিয়ে কথা হয়নি’।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৮ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৮
এমএইচ/ইইউডি/জেডএস