বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘ইভিএম বর্জন: জাতীয় নির্বাচন ও জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল এ কথা বলেন।
সভায় উপস্থিত রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশ ও জাতির প্রয়োজনে ১৯৭১ সালে যেভাবে আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধে এক হয়েছিলাম, আজকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য, মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য আবার আমরা ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হই এবং বাংলাদেশকে রক্ষা করি।
কারাগারে আদালত বসিয়ে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার বিচার করার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা সংবিধান ও প্রচলিত আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ব্রিটিশ আমলে স্বদেশী আন্দোলনের সময় দেশের জন্য যারা সংগ্রাম-লড়াই করেছিল, তাদের এ ধরনের ক্যামেরা ট্রায়ালে বিচার করা হয়েছিল। আমরা ১৯৭১ সালে দেখেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যামেরা ট্রায়াল করে হত্যা করা হয়েছে। আজকে স্বাধীনতার ৪৮ বছরের পর ক্যামেরা ট্রায়ালের আদালতে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার বিচার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কারাগারের আদালতে আজকে (খালেদার) আইনজীবীরা যাননি। সেখানে একটা ছোট্ট কুঠুরিতে আদালতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশনেত্রীকে জোর করে হু্ইল চেয়ারে করে নিয়ে আসা হয়েছিল। দেশনেত্রী বলেছেন, আমি জানি এখানে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না। আমি অসুস্থ। আপনারা বিচার যা করার করেন, আমি এখানে আর আসতে পারবো না। এই হচ্ছে বিচারের আসল চেহারা।
সভায় অংশ নেওয়া গণফোরাম সভাপতি ও যুক্তফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলার সময় বলছিলাম, আপনারা স্বাধীনতাযুদ্ধের সামনে ছিলেন, এই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম আপনারা দিয়েছিলেন। আজকে সেই স্বাধীন বাংলাদেশ ডুবে যাচ্ছে, নিমজ্জিত হচ্ছে, একে তোলার চেষ্টা করুন। সবাই মিলে আসুন, আমরা একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বাংলাদেশকে রক্ষা করি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে সারাদেশ থেকে বিএনপির কার্যকরী পরিষদের সদস্যদের ডেকে বলেছিলেন, আমি জানি আমাকে কয়েকদিন পরেই কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে। যাওয়ার আগে আমি আপনাদের একটি কথা বলে দিতে চাই, গণতন্ত্রের জন্য, দেশের স্বাধীনতার জন্য আপনারা সবাই শান্তিপূর্ণভাবে সংগ্রাম করবেন। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সংগ্রাম করবেন। সেখানে তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। আমরা সেই জাতীয় ঐক্যের জন্যই কাজ করছি। আসুন আমরা সব ধর্ম, বর্ণ, মত সবকিছুকে তুলে রেখে আজকে বাংলাদেশকে রক্ষা, দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য, সাংবাদিকদের লেখার অধিকার রক্ষা করার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। খালেদা জিয়াসহ ‘সকল রাজবন্দিকে মুক্তি’ দেওয়ার দাবি তুলে ফখরুল বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মামলা, ১৮ লাখ মানুষ আসামি। এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নির্বাচন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। জনগণের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
ইভিএমে ভোট কেন করতে চান, সে বিষয়ে সরকারকে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, এটা সহজে ম্যানিপুলেট (নিজেদের মতো করে ব্যবহার) করতে পারবেন। এটা দিয়ে ১টা ভোটকে ১০টা ভোট করা যায়।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করছেন। সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন দিতে কেন এত ভয় পান। জনগণের ওপর কেন এতো অনাস্থা। কারণ একটাই, আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে সরে গেছেন। আপনারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছেন।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গণফোরাম সভাপতি ও যুক্তফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ডা.এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রমুখ।
ড. কামাল বলেন, সামনে আমাদের অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। স্বৈরাচার সরকারের পতনের জন্য আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছিলাম। সমাজ থেকে অন্যায়কে মুক্ত করতে হবে। দল-মত নির্বিশেষে সংবিধান ও মূল্যবোধের স্বপক্ষে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হই।
গণফোরাম সভাপতি বলেন, জাতির সংকট সমাধানে জনগণের ঐক্য দরকার। আর বৃহত্তর ঐক্যের জন্য আজকের অনুষ্ঠান। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। একদলীয় শাসন নয়। মৌলিক অধিকারের জন্য ঐক্য দরকার। অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জনগণ যে ক্ষমতার মালিক তা প্রতিষ্ঠিত হবে।
অন্যায়ের সামনে মাথা নত না করাই বাঙালির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো কিছু অসম্ভব নয়, যদি ঐক্যবদ্ধ হই। জাতীয় স্বার্থে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৮
ইএস/এমএইচ/এইচএ/