ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৯
খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হয়েছে শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি)। গত বছরের এই দিনে দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি হন তিনি। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে রয়েছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে ‘গৃহপরিচারিকা’ হিসেবে আছেন ফাতেমা। খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর থেকেই বিএনপি তার মুক্তি দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করলেও ফল ‘শূন্য’। সেজন্য এখন বিএনপির নেতা ও আইনজীবীদের বলতে শোনা যাচ্ছে, আইনি লড়াইয়ে খালেদার মুক্তি সম্ভব নয়, আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

স্বজন ও কারাগারের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কারাবন্দি হওয়ার পর খালেদা জিয়াকে দু’টি ঈদ একলাই কাটাতে হয়েছে। ঈদের দিন স্বজনরা কারাগারে দেখা করেছেন, খেয়েছেন একসঙ্গে।

তবে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকীতে একা একা নামাজ আদায়, দোয়া-দরুদ, কোরআন পড়েই কেটেছে তার।  

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ড পেয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া বিএনপি দাবি করছে, দীর্ঘ এই সময় কারাগারে থাকলেও মনোবল এতোটুকুও টলেনি বিএনপি প্রধানের। বরং কোনো প্রতিনিধি দল কারাগারে দেখা করতে গেলে তিনি বিএনপিকে পরবর্তী করণীয় নিয়ে নানা দিক-নির্দেশনাও দিচ্ছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ প্রায়ই সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ‘কারাগারে খালেদা জিয়া ভালো নেই’। তবে তার কারাবন্দিজীবনের এক বছর পূরণের বিষয়ে আলাপ করলে রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমিতো আর কারাগারে যাইনি। তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করে এসে যা বলেন, সেটাই আমি ব্রিফিং করে বলে থাকি। ’

স্বজনদের বরাত দিয়ে রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, ‘অসুস্থ খালেদা জিয়া স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের মধ্যে তাকে দিনযাপন করতে হচ্ছে। তার আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার, হাত নড়াচড়া করতে পারেন না। রিস্ট জয়েন্ট ফুলে গেছে, সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিসের জন্য কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা, এই ব্যথা হাত পর্যন্ত রেডিয়েট করে। হিপ জয়েন্টেও ব্যথার মাত্রা প্রচণ্ড। ফলে শরীর অনেক অসুস্থ। তিনি পা তুলে ঠিক মতো হাঁটতেও পারেন না। চোখের অবস্থাও ভালো না। ’

একটি সূত্রমতে, সাজাপ্রাপ্ত হলেও খালেদা জিয়াকে বন্দি হিসেবে কয়েদি পোশাক পরানো হয়নি। কারাগারের মূলফটকের ভেতরের ভবনে হয়েছে। ভিআইপি বন্দি ও জেলকোড অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে সব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। একটি খাট, টেবিল, চেয়ার, দু’টি ফ্যানের কক্ষে দেওয়া হয়েছে টেলিভিশন, এতে বিটিভি দেখা যায়। সকালে তাকে তিনটি জাতীয় দৈনিক পড়তে দেওয়া হয়। তার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে একজন চিকিৎসকও রয়েছেন। রয়েছেন তার দীর্ঘ দিনের ‘গৃহপরিচারিকা’ ফাতেমাও।

ওই সূত্রে জানা যায়, কারাগারে খালেদা জিয়া ভাত, মাছ ও সবজি খাচ্ছেন। সকালে কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া রুটি-সবজি দিয়ে নাস্তা করেন তিনি। রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পাশাপাশি এবাদত-বন্দেগি করেন খালেদা জিয়া। ফজর নামাজও নিয়মিত আদায় করেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা উদ্বেগজনক। বিশেষ করে তার মতো একজন অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসা না দিয়ে একটি নির্জন কক্ষে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যেভাবে রাখা হয়েছে তাতে আমরা ভীষণ উদ্বিগ্ন। কারণ তিনি কারাবন্দি হওয়ার আগেই নানাবিধ অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তার নিয়মিত চিকিৎসার প্রয়োজন। ’

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপির কী করেছে
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন আদালত। পরে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। এর আগের দিন ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।

খালেদা কারাবন্দি হওয়ার পর থেকেই তার মুক্তি দাবিতে প্রতীকী অনশন, মানববন্ধন, সেমিনার ও অবস্থান কর্মসূচির মতো ‘আন্দোলন’ চালিয়ে আসছে বিএনপি। এরমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে এলে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচনে যাবে না বিএনপি’। কিন্তু শেষে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে নির্বাচনে যায় বিএনপি। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’, ‘দলের মধ্যে অনৈক্য’সহ বিভিন্ন অভিযোগের মুখে পড়ে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। নির্বাচনের ফলাফলও পায় ‘শোচনীয়’, মাত্র ৬টি আসন পায় ধানের শীষ প্রতীক। দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা যেমন খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দুষছেন, তেমনি বলছেন বিএনপি প্রধান না থাকার কারণেই দলের মধ্যে নির্বাচনের সময় এতো বিশৃঙ্খলা এবং শেষে ফল বিপর্যয় হয়।

এই পর্যায়ে এসে বিএনপির আইনজীবী ও নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে আইনি লড়াইয়ে মুক্ত করা যাবে না। কারণ তাকে বন্দি করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। সরকার আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত হতে দেবে না। তাই তাকে মুক্ত করতে রাজপথে নামতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি আইন ও বিচারের ওপর নির্ভরশীল নয়, এটি নির্ভরশীল (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনার মর্জির ওপর। আইন আদালতকে প্রভাবিত করেই তাকে বন্দি রাখা হয়েছে। ’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আইনি লড়াইয়ে মুক্ত করা যাবে না। তাকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৯
এমএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।