শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর পূর্ণ হলো। অসুস্থতার কারণে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।
বিএনপির বিভিন্ন সিনিয়র নেতা, চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের দাবি, আগে থেকেই নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন খালেদা জিয়া। কারাগারে যাওয়ার পর তার সেই শারীরিক জটিলতা আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসা দরকার তার। দেশে বা বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার জামিন দাবি করে আসছেন তারা।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ড্যাব নেতা ড. এজেডএম জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগে থেকেই নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। বর্তমানে তার রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস মারাত্মক অবস্থায় রয়েছে। এটার যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ার কারণে তিনি প্রায় পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
‘তিনি নিজের হাতে খাবারও খেতে পারেন না। তার সঙ্গে যে থাকে সে চামচ দিয়ে খাইয়ে দেয়। নিজে নিজে কিছুই করতে পারেন না। কোথাও যেতে হলে হুইলচেয়ারে নিতে হয় তাকে। অন্যের সাহায্য ছাড়া কিছুই করতে পারেন না তিনি। ’
খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত করা যাচ্ছে না জানিয়ে বিশিষ্ট এ চিকিৎসক আরও বলেন, তার ডায়াবেটিস ১১ থেকে ২২ এর মধ্যে ওঠানামা করছে। ইনসুলিন ও ট্যাবলেট দেওয়ার পরও তা কন্ট্রোলে আসছে না। হাইকোর্টের আপিল বিভাগে যে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে ডায়াবেটিস আশানুরূপভাবে কন্ট্রোলে আসছে না। এছাড়া তার দাঁতেরও সমস্যা রয়েছে।
‘খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৭ বছর। যে বয়সে তার পরিবারের সান্নিধ্যে থাকা দরকার সেই বয়সে তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তাকে একাকিত্ব পেয়ে বসেছে মারাত্মকভাবে। তাকে আধুনিক চিকিৎসা দিতে হবে। হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডও বলছে, উন্নত চিকিৎসা দরকার, কিন্তু সেটা তো তিনি পাচ্ছেন না। আধুনিক চিকিৎসা দিতে হলে তো আধুনিক সেন্টারও লাগে। বিএসএমএমইউ বাংলাদেশের আধুনিক হাসপাতাল, কিন্তু এটা তো সব ক্ষেত্রে আধুনিক হাসপাতাল না। যদি আধুনিক চিকিৎসার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জামিন বা মামলা স্থগিত করে পছন্দমতো হাসপাতালে ওনার চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হতো তাহলে সবার জন্য মঙ্গল হতো। ’
খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের বিষয়ে এ নেতা বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র নেতারা এ বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সে অনুযায়ী তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
দলের চেয়ারপারসনের কারাবাস প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে সরকার ২ বছর ধরে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আটক করে রেখেছে। অসুস্থ অবস্থায় কারাগারে রেখে সরকার খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার স্বাস্থ্যের যে কোনো অবনতির জন্য বর্তমান সরকারকে সব দায়দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। জনগণের সামনে তাদের একদিন আদালতে দাঁড়াতে হবে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, কারাগারে সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা পড়েন খালেদা জিয়া। এরপর ইবাদত-বন্দেগি ও বই পড়ে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান তিনি।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলার মধ্যে দুর্নীতির মামলা রয়েছে ৫টি। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তাকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। সেদিন থেকেই কারাগারে আছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার নিম্ন আদালতের দেওয়া ৫ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। সম্প্রতি এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
এদিকে খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার ২ বছর শেষ হওয়ায় দলটি দু’দিনের কর্মসূচি নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে জুমার নামাজের পর খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য দোয়া করা হয়।
এছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। একই দাবিতে সারাদেশেও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২০
এমএইচ/এইচজে