ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্যারিয়ার

কমিটমেন্ট ঠিক রাখা ইকমার্সে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

ক্যারিয়ার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
কমিটমেন্ট ঠিক রাখা ইকমার্সে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আদনান ইমতিয়াজ হালিম

ইকমার্স বা অনলাইনে পণ্য ও সেবা বেচাকেনার ধারণা বাংলাদেশে অনেকটা নতুন। তরুণদের অনেকেই ঝুঁকছেন ইকমার্স ব্যবসার দিকে। তবে সঠিক দিকনির্দেশনা বা পরিকল্পনার অভাবে মাঝপথে হোঁচট খেতে হচ্ছে। নতুনদের জন্য ইকমার্স খাতের অপার সম্ভাবনা নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন সেবা.এক্সওয়াইজেড এর সিইও আদনান ইমতিয়াজ হালিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রেজ্যুমে ডেভলপমেন্ট স্পেশালিস্ট ও কর্পোরেট আস্কের সিইও নিয়াজ আহমেদ

বাংলানিউজ: সেবা.এক্সওয়াইজেড সম্পর্কে জানতে চাই
আদনান ইমতিয়াজ হালিম: সেবা.এক্সওয়াইজেড মূলত একটি ই-কমার্স বিজনেস প্লাটফর্ম। এটি একটি বিটুসি টাইপ প্রতিষ্ঠান যা ২০১৫ সাল থেকে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সেবা দিতে ও একজন ক্লায়েন্ট সরাসরি সেবা নিতে পারেন। বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ক্লায়েন্টকে চারশোর বেশি ধরনের সেবা দিচ্ছি। সম্প্রতি আমরা ডি ডাব্লিউ ফাউন্ডার্স ভ্যালী থেকে পৃথিবীব্যাপী সেরা দশটি ইকমার্স উদ্যোগের মধ্যে নির্বাচিত হয়েছি। এছাড়াও উন্নত সেবা প্রদানের জন্য জিপি এক্সিলারেটর পুরস্কার পেয়েছে সেবা.এক্সওয়াইজেড।

বাংলানিউজ: সেবা'র সাফল্যের পেছনে প্রধান কারণ কি?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম: সেবার টিমে রয়েছে প্রায় সত্তর জন তরুণ, দক্ষ এবং নিবেদিত কর্মী। এরাই প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকা শক্তি। কাস্টমারকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাঙ্খিত সেবা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। তবে সেবা কোন প্রডাক্ট সেল করে না, শুধুমাত্র সার্ভিস দাতাদের আর ক্লায়েন্টদের মাঝে একটি বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। বলা যায় দক্ষ টিম, সম্মিলিত প্লাটফর্ম এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষা এই তিনই সেবার সফল হবার মূল কারণ।  

বাংলানিউজ: ইকমার্স ব্যবসায় কেমন মূলধন লাগে? ব্যবসা শুরু করতে কি কি সরকারি কাগজপত্র লাগবে?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম: মূলধনের ব্যাপারটা ডিপেন্ড করছে আপনি প্রডাক্ট সেল করতে চাচ্ছেন নাকি সার্ভিস। যেমন ধরুন, উবার, পাঠাও, চলো এদের বিজনেস অনেকটা আইডিয়া কেন্দ্রিক। এরপর সার্ভিস দিতে কিছু লোক লেগেছে, সফটওয়্যার তৈরি করতে হয়েছে। কিন্তু এদের নিজেদের কোন প্রডাক্ট নেই। অপরের প্রডাক্ট, এরা কাজ করছে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে। আবার আপনি যদি চালডাল, রকমারি ইত্যাদি কোম্পানির কথা ভাবেন, তাহলে তারা প্রডাক্টও দিচ্ছে, সেই সাথে সার্ভিসকে সহজ করেছে। যদি প্রডাক্ট ও সার্ভিস দুই নিয়ে কাজ করতে চান, আপনার মূলধন ওই অনুযায়ী লাগবে। আর যদি আপনি কেবল সার্ভিসদাতা কোম্পানি হতে চান তাহলে কম পুঁজি নিয়েও শুরু করতে পারবেন। অন্য সব ব্যবসার মতোই ইকমার্সেও টিআইএন, কোম্পানির অ্যাকাউন্ট, ভ্যাট সার্টিফিকেট ও সব রকমের বৈধ কাগজপত্র রাখতে হবে।  

বাংলানিউজ: ইকমার্স ব্যবসায় কি কি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম: কমিটমেন্ট ঠিক রাখাটাই বিজনেসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য চাই যথাযথ পরিকল্পনা, ইনভেন্টরি চেক করা এবং সব ক্ষেত্রে প্রফেশনালিজম বজায় রাখা। প্রফেশনালিজম বলতে আমি বোঝাচ্ছি আপনার কি আছে সেটা জানা, আপনি কি করতে পারবেন সেটা জানা এবং আপনার কি নেই বা আপনি কি করতে পারবেন না সেটা জানা। আপনার প্রডাক্ট, সার্ভিস, স্টোর, লোকবল ভালোভাবে জানুন। স্ট্রেন্থ ও উইকনেস গুলো জানুন। কাজ হোক বা না হোক, যেটুক দিতে পারবেন, সেটুকুই বলবেন। কাজ পেতে কাউকে ভুল কমিটমেন্ট দিবেন না। তাহলে নেগেটিভ ফিডব্যাক আসবে না, রিপিট বিজনেস আসা শুরু হবে।

বাংলানিউজ: তরুণদের অনেকেরই ইকমার্স প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে ব্যবসা শুরুর প্রবণতা থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সফল হয় না, এই ব্যর্থতার কারণ কি কি বলে মনে করেন?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম: যেকোন ব্যবসাই হচ্ছে বহুবিধ দক্ষতার সমষ্টিগত ফলাফল। আমরা সবাই একটি ব্যবসার মুনাফার দিকটি দেখি, কিন্তু ব্যবসা দাড় করাতে যে কষ্ট করতে হয়, যে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয় সেটা দেখি না। এজন্যই অনেকে ব্যর্থ হন। ইকমার্স ব্যবসায় সফল হতে হলে সবচেয়ে বেশি জরুরি যেটা তা হচ্ছে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। আমি এমন অনেককেই চিনি যারা ব্যবসার শুরুতে ভালো করেননি কিন্তু এখন তাদেরকেই ইকমার্স ব্যবসার মডেল ধরা হয়। চালডাল, সহজ, পাঠাও ইত্যাদি নানান ইকমার্স সেবা গত তিন বছরে বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করেছে এবং প্রসংশিত ও জনপ্রিয় হয়েছে। আর প্রতিশ্রুতি রক্ষার সাথে সাথে প্রডাক্ট বা সার্ভিসও ইউনিক হতে হবে। সমাজের যেকোনো একটি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যবসার পরিকল্পনা দাড় করাতে হবে। প্রতিটি ব্যবসাই এক প্রকার সাহায্য।

বাংলানিউজ: নতুনরা কিভাবে এই পেশায় অগ্রসর হলে ভুল কম হবে?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম: নতুনদের উদ্দেশ্যে আমার পরমর্শ যে কোন একটি স্টার্টআপ কোম্পানিতে দুই বছর জব করে আসা। এই দুই বছরের মধ্যে বিজনেস সম্পর্কে আইডিয়া নেয়া, বিজনেসে কি কি ভুল হতে পারে সেটা জানা, সেগুলো কিভাবে এড়িয়ে চলা যায় সেটা জানা ও ভুল হয়ে গেলে সেটা কিভাবে শোধরানো যায় সেটা জানা, বিজনেসের চ্যালেঞ্জগুলো বুঝে হাতে কলমে কাজ করা। এতে করে নিজের বিজনেসে চ্যালেঞ্জগুলো কম আসবে। নিজে ভুল করে শেখার চেয়ে অন্যের ভুল থেকে শেখাই শ্রেয়। আর যে কোন কাজে সফল হতে গেলে কমপক্ষে দশ হাজার ঘন্টা কাজের পিছনে লেগে থাকতে হয়। তাই সময় দিলে, লেগে থাকলে ও শিখে কাজ করলে ভুল ও ঝুঁকি দুটোই কমে যাবে, যা কিনা পক্ষান্তরে সফল হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিবে।

বাংলানিউজ: দেশে ইকমার্সকে এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাক্ষেত্রে কি পরিবর্তন আনা উচিত?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম: বাইরের দেশের পড়াশুনা সিস্টেম ভিন্ন, সেখানে একজন স্টুডেন্ট তিন থেকে পাঁচ বার পর্যন্ত ইন্টার্নশিপ করে। এতে করে তাদের বাস্তবজ্ঞান বাড়ে। তারা বিজনেসের গ্যাপ, প্রতিষ্ঠানের কাঠামো এবং চ্যালেঞ্জ বুঝতে পারে। এতে করে ডিসিশন টেকিং স্কিল, ক্রিটিকাল থিংকিং স্কিল, কমিউনিকেশন স্কিল ইত্যাদি আরো বেশি ডেভলপ করে। আমাদের দেশে যে পুথিগত শিক্ষা দেয়া হয় যার সাথে বাস্তব শিক্ষার অনেক ব্যবধান। তাই শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী শিক্ষা দিতে পারলেই কেবল তাদের পক্ষে নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহন করাটা আরো সহজতর হবে।

বাংলানিউজ: সমস্যা কাটিয়ে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ গড়তে কিভাবে প্রিপারেশান নেয়া দরকার?  
আদনান ইমতিয়াজ হালিম: নতুনদের মাঝে অস্থিরতা কাজ করে, তারা খুব দ্রুতই সফল হতে চায়। স্টেপ বাই স্টেপ ক্যারিয়ার গ্রোথ নিয়ে খুব কম লোকই ভাবে। ক্যারিয়ার নিয়ে নির্দিষ্ট প্ল্যানিং নেই। যে কোন একটা চাকরি পাওয়াকে অনেকে জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে ফেলে। জব করুন আর উদ্যোক্তা হোন, সেই সিদ্ধান্ত আপনার। কিন্তু যেটা ভালো লাগে সেটাই করুন। ভালো লাগার জায়গায় নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিন। কারন জীবনটা আপনার। তাই, আপনার জীবনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার কেবল আপনারই আছে।

বাংলানিউজ: ইকমার্স টাইপ বিজনেসের এই বিশাল প্লেসে জব পাওয়ার সম্ভাবনা কেমন?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম: দেশে বর্তমানে প্রায় বিশ হাজার লোক ইকমার্স বিজনেসের সাথে যুক্ত, এই সংযুক্তি আগামী পাঁচ বছরে কমপক্ষে আরো বিশ গুন বাড়বে। সবাই এখন সার্ভিসের পেছনে ছুটছে। সবাই কমফোর্ট চায়। এছাড়া বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণে। তবে এই মুহূর্তে অধিকাংশ ইকমার্স বিজনেসই ঢাকা কেন্দ্রিক। তবে অতি দ্রুত দেশব্যাপী এই সার্ভিসে ছড়িয়ে পড়ছে, নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আমাদের তরুণরা অনেকে কাজ করছে। এটি একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র।

বাংলানিউজ: ই-কমার্স সেক্টরে জব পেতে হলে কিভাবে ক্যারিয়ার প্লানিং করতে হবে? এখানে ক্যারিয়ার গ্রোথ কেমন?
আদনান ইমতিয়াজ হালিম: যেহেতু এটি নতুন সেক্টর, ক্যারিয়ারের শুরুতে এই সেক্টরকে বেছে নিলে সামনের দিনগুলোতে এই সেক্টর যখন এগিয়ে যাবে, তখন আপনিই অভিজ্ঞদের মাঝে আগে থাকবেন। তবে প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে আপনি ইকমার্স সেক্টরে কাজ করতে প্যাশনেট কি না। হুজুগে পড়ে সিদ্ধান্ত নিলে ক্যারিয়ারের মাঝে গিয়ে বিপাকে পড়বেন। কিন্তু আপনি যদি প্যাশনেট থাকেন, ডিটারমিনেশন থাকে, তাহলে সাফল্য সুনিশ্চিত।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।