ফরিদপুর: ফরিদপুর অঞ্চলের এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী কুমার নদ দিন দিন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। অবাধে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা।
একদিকে দূষিত হচ্ছে নদ ও এর আশপাশের পরিবেশ, অন্যদিকে ভরাট হচ্ছে নদের অংশ। এছাড়াও নদের দুই পাড়ে রয়েছে অবৈধ নানা স্থাপনা। যে কারণে দিন দিন নদীপথ সরু হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, নদটি জেলা সদর উপজেলার পদ্মা নদী থেকে শুরু করে ফরিদপুর সদর, সালথা, নগরকান্দা, ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলা হয়ে মাদারীপুর জেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীর সঙ্গে মিশেছে। যে কারণে এক সময় এ অঞ্চলের কৃষি, যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটা কুমার নদ নির্ভর ছিল।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ নদ তার অতীত ঐতিহ্য হারিয়েছে। দখলের কারণে প্রস্থ কমেছে এর। নাব্যতা আগের মতো নেই। দূষণের কারণে পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার হয়েছে ভাঙ্গা উপজেলা শহর এলাকায়। উপজেলা শহর এলাকায় প্রায় ৩ কিলোমিটার নদের অনেক জায়গা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিন নদের পাড় ঘুরে দেখা যায়, ভাঙ্গা এলাকায় প্রায় ৫০ জায়গায় সরাসরি ময়লা আবর্জনা নদ ও নদের তীরে ফেলা হয়। ভাঙ্গা বাজারের অধিকাংশ ময়লা, আবর্জনা, পলিথিন, পানির বোতল বছরের পর বছর নদের পাড়ে ও নদের পানিতে ফেলা হচ্ছে। পুরো নদ এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেক বাসাবাড়ির শৌচাগারের লাইনও নদের সঙ্গে যুক্ত। নদের পাড় দিয়ে দুর্গন্ধে হাঁটা কষ্টকর। বাজারের মাছ-মাংসের আবর্জনাও নদের পাড়ে ফেলা হচ্ছে।
ভাঙ্গা সরকারি কাজী মাহবুব উল্লাহ কলেজের ছাত্র জমির হোসেন বলেন, যেভাবে কুমার নদে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে, তাতে এ নদের মাছ খাওয়াও অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ।
ভাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। কুমার নদের পাড় দিয়ে এখন দুর্গন্ধে হাঁটা যায় না।
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর ভাঙ্গা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান বলেন, যে হারে ময়লা আবর্জনার সঙ্গে পলিথিন ফেলা হচ্ছে, তাতে পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভাঙ্গা পৌর এলাকার ছিলাধরচর মহল্লার বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই কুমার নদে গোসল করে থাকি। অসংখ্য লোক এখনও কুমার নদে গোসল করে। কিন্তু ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে পানিতে প্রায় সারা বছর দুর্গন্ধ থাকে।
ভাঙ্গা বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সহিদুল হক মিরু মুন্সী বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সময় সতর্ক করেছি কুমার নদ ও নদের পাড়ে যেন তারা ময়লা না ফেলে। তারপরেও অনেকে ফেলছে। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের আরও বেশি সতর্ক ও সচেতন করতে হবে।
এব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মূলত ভাঙ্গায় ময়লা ফেলানোর নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় কুমার নদে ময়লা ফেলানো হচ্ছে। এব্যাপারটি নিয়ে সমাধানের লক্ষ্যে আমরা গত উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। পৌরসভাকে নির্দিষ্ট ময়লা ফেলানোর জায়গার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাজারের ব্যবসায়ীদেরও এ নদে ময়লা ফেলাতে নিষেধ করা হয়েছে।
ময়লা ফেলানোর নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা হলে অতিদ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান এ ইউএনও।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
এসএএইচ