ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

দখল-দূষণে মৃতপ্রায় খানজাহানপল্লী-গোবরদিয়ার বাতিবাড়ী খাল

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৩
দখল-দূষণে মৃতপ্রায় খানজাহানপল্লী-গোবরদিয়ার বাতিবাড়ী খাল

বাগেরহাট: দখল ও দূষণে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের খানজাহানপল্লী-গোবরদিয়া এলাকার বাতিবাড়ী খাল। ৩০ বছর ধরে নানা স্থাপনা তৈরি হওয়ায় প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি এখন মৃতপ্রায়।

 

এমনকি খালের কিছু অংশ ব্যক্তি নামে রেকর্ড হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। নাব্য হারানোর ফলে শুকনো মৌসুমে খালটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন হলেও বর্ষায় খাল দিয়ে পানি নামতে না পেরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় খানজাহানপল্লী ও গোবরদিয়া এলাকায়। স্থানীয়দের বাড়িঘর ও রাস্তায় পানি উঠে যায় সামান্য বৃষ্টিতে। এক সময়ের প্রবহমান খালটি এখন খানজাহানপল্লী-গোবরদিয়াবাসীর দুঃখে পরিণত হয়েছে। খালটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করে খনন করার জন্য জেলা প্রশাসন, বাগেরহাট পৌরসভাসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোনো সুরাহা পাননি এলাকাবাসী।

সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে খাল ভরে পাশের রাস্তা ও বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। মাঝে মধ্যেই ময়লার স্তূপ। অনেক জায়গায় খালের মধ্যে কাঠের পাইলিং, কয়েকটি ঘরও রয়েছে খালের মধ্যে। খালের ওপর দিয়ে গ্রামের মধ্যে একটি ইটের রাস্তা রয়েছে। সেখানে খালটি রক্ষা করতে ছোট একটি পাইপ দেওয়া হয়েছে। ওই পাইপ দিয়ে খালের পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা অসম্ভব প্রায়। ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসা মোস্তফা কামাল নামে এক ব্যক্তি বলেন, এ খালটিতে এক সময় এলাকার মানুষ গোসল করত, থালাবাটি ধোয়াসহ প্রয়োজনীয় কাজ করত খালের পানি দিয়ে। এখন আর কেউ খালটি ব্যবহার করে না। শুকনো মৌসুমে বাচ্চারা খেলে, আর বৃষ্টির মৌসুমে পানিতে ডুবি আমরা। বিভিন্ন ময়লা পচা গন্ধে এলাকায় থাকা দায়।

গোবদিয়া এলাকার মো. আরিফ নামে এক যুবক বলেন, ইচ্ছেমতো দখল করায়, পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিবন্দি হয়ে যাই আমরা। দ্রুত খালটি দখল মুক্ত করা প্রয়োজন।

খাল দখলমুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা মো. রুস্তম মল্লিক বলেন, খালটি খনন ও দখলমুক্ত করতে কয়েকবার বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি। সর্বশেষ গেল ২৯ মে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি। খানজাহানপল্লী-গোবরদিয়া গ্রামের মধ্য থেকে প্রবাহিত সিএস রেকর্ডভুক্ত বাতিখালী খালটি পুটিমারী নদীর সঙ্গে যুক্ত। কিছু অসাধু মানুষ খালটির বেশ কিছু অংশ নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়েছেন। খালের জমিতে বাড়ি ও মার্কেট নির্মাণ করেছেন অনেকে।  ফলে খালটি নাব্য হারিয়েছে। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানি ও এলাকাবাসীর ফেলা ময়লা পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। এভাবে দখল করতে করতে এক সময় খালটিকে গলাটিপে মেরে ফেলা হবে। তখন আর খাল থাকবে না, এখানে একটি ছোট কংক্রিটের ড্রেন তৈরি করা হবে। যে কোনো মূল্যে খালটি দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি।

মমতাজ বেগম নামে এক নারী বলেন, গোবদিয়া এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। বাচ্চারা স্কুল কলেজে যেতে পারে না, বাজারঘাট করে নিয়ে আসতে খুব অসুবিধা হয়। পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা না হলে এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, খালটির এক পাশ দিয়ে একটি রাস্তা রয়েছে, যার নিচ দিয়ে কালভার্ট বা পানি সরার কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়া খালটির বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে যে যার মতো করে দখল করে নিয়েছে। প্রশাসনের কাছে খালটি দখলমুক্ত করার জন্য একাধিকবার অনুরোধ জানিয়েছি।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ইউএনও) নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, বাতিবাড়ির খালসহ বেশ কয়েকটি খাল পুনরায় খননের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন,  চলতি বছরে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে বেশ কিছু খাল দখলমুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে বাতিবাড়ির খালটিও দখলমুক্ত করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।