ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বলেশ্বরে ভাঙন, বিলীন হলো ১০ একর ধানি জমি

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৩
বলেশ্বরে ভাঙন, বিলীন হলো ১০ একর ধানি জমি

বাগেরহাট: বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা এলাকায় বলেশ্বর নদে ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রবল ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ১০ একর ধানি জমি।

 

ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বেরিবাঁধের বাইরে থাকা শতাধিক পরিবার ও কয়েকশ’ একর জমি।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ বেড়িবাঁধের গাবতলা নামক স্থানে মূল বাঁধের নিচে ১০০ ফুট এলাকার বেশ কিছু সিসি ব্লকও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।  

বুধবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত বলেশ্বরের ভাঙনে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আরও ব্যাপক এলাকা জুড়ে বিশাল ফাটল ধরেছে।  

ভাঙনের খবরে শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।  

এদিকে ৩৫/১ পোল্ডারের মূল বাঁধে এমন ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খুব দ্রুত নদী শাসন না করলে, মূল বাঁধ ভেঙে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।  

স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জোয়ার ও ভাটার টানে ভাঙন শুরু হয়। এতে প্রায় ১০ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা বারেক হাওলাদার বলেন, নদী ভাঙনে কয়েকবার আমার জমি ভেঙেছে। এবারের ভাঙনে আমার পরিবারের প্রায় ছয় একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন বন্ধ না হলে এ এলাকা মানুষের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

স্থানীয় হেমায়েত হাওলাদার বলেন, বিগত দিনে বলেশ্বরের ভাঙনে আমরা প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। আবার জমিজমা হারানোর শঙ্কা রয়েছে। ভাঙনের ফলে সাউথখালীর অনেকেই ভূমিহীন হয়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন। বলেশ্বর আমাদের শেষ করে দিয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, নদীশাসন করে আমাদের রক্ষা করা হোক।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, ভাঙন ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারণ করছে। মূল বাঁধের নিচ থেকে প্রায় ১০০ ফুট ধসে গেছে। এছাড়া বিশাল এলাকায় ফাটল ধরেছে। গাবতলা বাজার থেকে বাবলাতলা প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব এলাকায় স্থায়ী নদীশাসন প্রয়োজন। বালুর বস্তা ফেলে সাময়িক রক্ষা পেলেও তাতে স্থায়ী সমাধান হবে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ভাঙনের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভাঙনরোধে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে জিও ব্যাগে বালু ভরে ডাম্পিং শুরু করা হয়েছে। আপাতত এক হাজার ব্যাগ ডাম্পিংয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে। ভবিষ্যতের জন্য নদীর স্রোত ও অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বাগেরহাটসহ উপকূলীয় কয়েকটি জেলা। সরকারি হিসেবে ওই এক দিনে প্রায় ৯০৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়। আর্থিক ক্ষতি হয় কয়েকশ’ কোটি টাকার। তখন থেকে শরণখোলাবাসীর দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের। গণমানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার গত ২০১৫ সালে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি) নামে একটি প্রকল্পের অধীনে মোরেলগঞ্জ থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু বাঁধের বাইরে থেকে যায় কয়েকশ’ পরিবার ও বিপুল পরিমাণ জমি। ভাঙনের ফলে প্রতিনিয়তই ওই জমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। মূল বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে শরণখোলাবাসীর কপালে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।