ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

রামপালের দূষণ সীমার মধ্যে কি না, মূল্যায়ন হচ্ছে: রিজওয়ানা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২৪
রামপালের দূষণ সীমার মধ্যে কি না, মূল্যায়ন হচ্ছে: রিজওয়ানা

ঢাকা: সরকার রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ সীমার মধ্যে রয়েছে কি না, তা নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়নের কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে ‘সুন্দরবন বাঘ জরিপ-২০২৪’ এর ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবন যে হুমকিতে রয়েছে, সে বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের হুমকি বাস্তবতা থেকে সরে যায়নি। এটা নিয়ে দুটো পর্যায়ে কাজ করা প্রয়োজন, আমরা কাজ শুরু করেছি। ইউনেস্কোর কাছে আমাদের একটা স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। সেটা বিগত সরকার জমা দিয়েছে। সেখানে ইউনেস্কো আপত্তি দিয়েছে, যে এলাকাটা চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে রক্ষিত এলাকাটা অনেকাংশেই বাদ দিয়েছে। এখন সেই অ্যাসেসমেন্ট আবার নতুন করে ইউনেস্কোর অবজারভেশনের আলোকে আমাদের দেখতে হচ্ছে। যাতে সুন্দরবনের পুরো এলাকা থেকে কোনো রক্ষিত জায়গা বাদ না দেই।

তিনি বলেন, হয়তো বিগত সরকার ঝুঁকি কম দেখাতে পুরো রক্ষিত এলাকাকে কম দেখিয়ে অন্য জায়গা বেশি দেখিয়েছে। আর জাতীয় পর্যায়ে যে কাজ করা হচ্ছে, সেটা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দূষিত বায়ু বা ধোঁয়া বের হওয়ার ফলে বায়ুদূষণ হচ্ছে, সেটা আমরা নিরপেক্ষভাবে মনিটর করার চেষ্টা করছি।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সবসময় তো আমরা মনিটর করে বলে দেই—ধলেশ্বরীর পানি পরিষ্কার, টেনারি নোংরা করেনি; রামপালের বাতাস খুব পরিষ্কার, সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না। কিন্তু সেখানে যারা থাকেন তারা কিছু অসুবিধার কথা বলছেন। ফলে যে ডিসচার্জটা (নিঃসরণ) হচ্ছে, সেটা আসলে আইনের সীমার মধ্যে আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এজন্য আমরা একটা নিরপেক্ষ অ্যাসেসমেন্টের কাজ শুরু করেছি।

তিনি বলেন, রামপালকে কেন্দ্র করে ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ও এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি ভারী শিল্প গড়ে উঠেছে। যেগুলোর অনেকটাই লাল তালিকাভুক্ত ছিল। কিন্তু সেটা জাতীয় পরিবেশ কমিটির একটি সভায় লালকে কলমের খোঁচায় হঠাৎ সবুজ করে দেওয়া হয়েছে। সেটা পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা আবার পর্যালোচনা করে সেই সকল ভারী শিল্প আদৌ লাল বা সবুজ হওয়ার যোগ্যতা রাখে কি না, লালে আবার ফেরত নিতে হবে নাকি কমলা খাতে নিতে হবে, সেই কাজটি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই কাজ করতে হবে। তা না হলে অন্যান্য বন বাঁচাবার সুযোগ কমে যায়। সুন্দরবন হচ্ছে বিশ্ব ঐতিহ্য। বিশ্বের আর কোথাও সুন্দরবন নেই। কাজেই সুন্দরবন নিয়ে যারা আন্দোলন করেছেন, রাস্তায় হেঁটেছেন তাদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। সুন্দরবন নিয়ে আমার যে দরদ, সেটা চলে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি যেটা বলে আশ্বস্ত করতে চাই, সেটা হলো, শুধু সুন্দরবন নয়, শালবন বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছি।  ৪১ হাজার একর শালবন ছিল, সেটা কমতে কমতে এখন ২০ হাজার একরে চলে এসেছে। এখন আমাকে যদি বলেন ৪১ হাজার ফেরত দিতে হবে, সেটার উত্তর আমার কাছে নাই। তবে আমার চেষ্টা থাকবে আমি কতটুকু বাড়াতে পারি, সেখানে আপনাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বাঘ কিন্তু শুধু সুন্দরবনে ছিল না, টাঙ্গাইলেও ছিল। ফলে শালবনটা আমাদের ফেরত আনতে হবে। তবে একটা ইকোসিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেলে সেটা আবার ফেরত আনতে ১০০ বছর লেগে যায়। এতদিন আমাদের সেই কাজ শুরু হয়নি, আমরা সেই কাজ শুরু করব।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুনসহ অন্যান্য অতিরিক্ত সচিব, বন অধিপ্তরের প্রধান বনসংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এম এ আজিজ, খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২৪
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।