ঢাকা: দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় কয়েক বছর থেকেই শীর্ষে থাকছে বাংলাদেশের নাম। আর রাজধানী ঢাকা থাকছে বায়ুদূষণে শীর্ষ নগরীর তালিকায়।
বিশ্বের ১২৩ নগরীর মধ্যে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা বায়ুদূষণে শীর্ষে ছিল। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আইকিউ এয়ারের মান সূচকে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২৫৩। বায়ুর এই মান খুব অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বায়ুদূষণের পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২ দশমিক ৫ এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে পিএম ২ দশমিক ৫ এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ৩৫ গুণ বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকায় নির্মাণকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। এছাড়াও শিল্পকারখানা, ইটভাটা থেকে ২৯ শতাংশ, যানবাহন থেকে ১৫ শতাংশ, আন্তঃদেশীয় বায়ুপ্রবাহের কারণে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, গৃহস্থালি ও রান্নার কাজ থেকে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বর্জ্য পোড়ানোর কারণে প্রায় ৮ শতাংশ বায়ুদূষণ হয়ে থাকে।
বায়ু দূষণের কারণগুলোই বলে দিচ্ছে এ দূষণ কমানো বা রোধ করা সম্ভব। কিছু নিয়ম, পরিকল্পনা এবং সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগ বায়ুদূষণ কমাতে পারে। বায়ু দূষণরোধে কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগে একেবারেই নেই বলে জানান পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
বায়ু দূষণের উৎস এবং রোধে করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত বাংলানিউজকে বলেন, বায়ু দূষণ রোধে যেসব পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো যথেষ্ট কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করবে কে? পুরোনো গাড়ি ওভারলোডেড হলে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়। একটা বাসে ওঠার কথা ৩০ জন, সেখানে আমাদের রাজধানীতে চলাচল করা বাসে ওঠে ৬০ জন। ট্রাকে ৫ টন লেখা থাকলেও পরিবহন করে ১২ টন বা তার থেকেও বেশি, এর ফলে ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে কালো ধোয়া নির্গত হয়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বলেন, যেখানেই নির্মাণ কাজ চলছে, সেখানে ইট, বালু সবকিছুই খোলা অবস্থায় রাখা হচ্ছে। এসব থেকে অতি ক্ষুদ্র কণা বাতাসে মিশে যাচ্ছে। নির্মাণ সামগ্রী ডেকে রাখলেই দূষণ কমবে। এছাড়াও ইট-ভাটা থেকে প্রচুর কালো ধোয়া নির্গত হয়। আমাদের রাস্তাঘাটেও প্রচুর ধুলাবালি থাকে। উন্নত দেশে ভোরের দিকে রাস্তা ভিজিয়ে দেওয়া হয় যেন ধুলাবালি না উড়ে। দূষণের এসব উপাদান নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই হয়।
তিনি আরও বলেন, দূষণ রোধে অনেক স্টাডি এবং পরিকল্পনা আছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় অনেক স্টাডি করেছে। প্রচুর মেশিনারি এবং যন্ত্রপাতি এনেছে। দূষণ রোধে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যা প্রয়োজন তা আমাদের আছে, এখন কাজটা করা দরকার।
প্রায় ২৫ বছর ধরে বায়ুদূষণ নিয়ে গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সালাম। বায়ু দূষণ রোধে আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০-১৫ বছর থেকেই বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। বায়ু দূষণ প্রতিরোধে সরকার কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তারপরেও বায়ু দূষণ কমছে না কারণ সরকার যে উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নিচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। আরও বেশি কার্যকর ব্যবস্থা নিলে বায়ু দূষণ কমে যাবে।
তিনি আরও বলেন, বায়ু দূষণ প্রতিরোধে আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাকি রয়েছে। যেমন শীতকালে বিভিন্ন আবর্জনা পোড়ানো হয়, এগুলো বন্ধ করতে হবে। রাস্তাঘাট থেকে যে ধুলাবালি ওড়ে সেগুলো বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। ভালো মানের জ্বালানি তেল ব্যবহার করতে হবে। আমাদের অল্টারনেটিভ ফুয়েল বিষয় ভাবতে হবে। রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম কমাতে হবে। শিল্প কারখানা, জেনারেটর এবং গাড়ি কালো ধোয়া বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের রাস্তাঘাট এবং গাছপালা, জলাধারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে হবে। আন্তঃদেশীয় দূষণও কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিলেই বায়ু দূষণ কমে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
আরকেআর/এএটি