ঢাকা: ‘ঊন বর্ষায় দুনো শীত’-খনার এই বচনটি বলছে যে বছর বৃষ্টি কম হয়, সেবার শীতের প্রকোপ হয় দ্বিগুণ। তবে গেল বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টি বেশি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরাও এমন কথা বলছেন। তাদের মতে জানুয়ারি মাস হচ্ছে প্রচণ্ড ঠান্ডার মাস। কিন্তু এবার সেই অনুভূতি নেই বললেই চলে। খনার বচনের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টির পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ বের করেছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলের যত ওপরের দিকে ওঠা যায়, তত ঠান্ডা বেশি। বিশেষ করে ৪০ হাজার ওপরে যে বাতাস, সেটা এবার নিচে নামতে পারেনি বা এখনো পারছে না। ইউরোপ থেকে যে বাতাস আসছে তা বাধা পাচ্ছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে।
এই বাধার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে আবার লঘুচাপ। লঘুচাপের কারণে সাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প উঠে আসছে। এই জলীয় বাষ্পের কারণেই ওপরের ঠান্ডা বাতাস নিচে নামতে পারছে না। চলে যাচ্ছে চীনের দিকে। কখনো কখনো নামলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। ফলে দুই-তিন দিন শীতের অনুভূতি বাড়লেও আবার কমে যাচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ ড. বজলুর রশিদ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, মূলত দুইভাগে দেশের অভ্যন্তরের শীতের বাতাস প্রবেশ করে। একটি দিক হচ্ছে কাশ্মীর, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ হয়ে উত্তরবঙ্গ দিয়ে; আরেকটি অংশ দেশে প্রবেশ করে চীন হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চল হয়ে। এই বাতাসটা বয়ে নিয়ে আসে পশ্চিমা লঘুচাপ। এবার ভূমধ্যসাগর থেকে এই বাতাস ভারত হয়ে আসার সময় জলীয়বাষ্প নিয়ে আসে অধিক পরিমাণে। ফলে ওপরের বাতাস নিচে নামতে বাধা পায়। যে কারণে শীত স্থায়ী হতে পারছে না।
তিনি বলেন, প্রতি বছর এই প্রকৃতির নিয়মেই ঠান্ডা বাতাস আসে। তবে সেটা দুই-তিন সপ্তাহ স্থায়ী হয়। এবার সেটা দুই-তিন দিনের বেশি স্থায়ী হচ্ছে না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে শীতের অনুভূতি বাড়ে ঘন কুয়াশার দাপট বাড়লে। এবার সেটাও কম হচ্ছে। ঘন কুয়াশা দিনভর থাকলে সূর্যের আলো ঢুকতে পারে না। ফলে শীতের অনুভূতি বাড়ে। প্রকৃতির এই গতিপ্রকৃতির পেছনে সুনির্দিষ্ট আসলে কোনো কারণ নেই। বৈশ্বিক উষ্ণতাকেও এর পেছনে দায়ী করা হয়। এবার যে অবস্থা চলছে এতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শীতের আমেজ থাকবে। ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গরম চলে আসবে।
আবহাওয়াবিদ ড. ওমর ফারুক বলেন, এক কথায় বলতে গেলে শীত কম পড়ার পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। এক মৌসুমের সঙ্গে আরেক মৌসুম কখনোই মিলবে না। অনেকেই হয়তো ব্যাখ্যা দেবেন। তবে সেটা সুনির্দিষ্ট হবে না। এবার শীত পড়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন তো দায়ী অবশ্যই। এছাড়াও কিছু বিষয় দায়ী। সেটার মধ্যে একটা হচ্ছে, উচ্চচাপ বলয় শীত নিয়ে আসে। সেটা পশ্চিমবঙ্গ ভেদ করে বাংলাদেশে ঠিকমতো আসতেই পারছে না। এক্ষেত্রে সাগরে বেশকিছু লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই লঘুচাপগুলো যদি মিয়ানমারের দিকে থাকতো, তাহলে ঠান্ডা বাতাসে দেশের অভ্যন্তরে ফাঁকা পেয়ে চলে আসতো। এবার যেটা হয়েছে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে কাছাকাছি লঘুচাপগুলো সৃষ্টি হয়েছে। ফলে উচ্চচাপ বলয় দেশের ভেতরে স্থায়ী হতে পারছে না। ফলে শীত প্রকোপও স্থায়ী হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এবার শীতের প্রকোপ চলতি মাসের শুরুর দিকে সাতদিন ছিল। সেটাও হয়েছে ঘন কুয়াশার কারণে। এরপর যে সিস্টেমটা তৈরি হচ্ছে তা দুই-তিন দিনের বেশি স্থায়ী হচ্ছে না। ঊন বর্ষার দুনো শীত-বলতে একটি খনার বচন আছে। গেল বর্ষার মৌসুমে চার মাসের মধ্যে তিন মাসই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আমাদের পূর্ব পুরুষরা তো এমনিতেই কথাগুলো বলেননি। তাদের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ থেকে এগুলো এসেছে। তার মানে প্রতি বছর একই রকম আবহাওয়া থাকে না। কখনো বাড়ে, কখনো কমে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
ইইউডি/এসএএইচ