ঢাকা, বুধবার, ৯ বৈশাখ ১৪৩২, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

নয় বছরে ৩১ দিন নির্মল বায়ুতে নিশ্বাস নিতে পেরেছে ঢাকাবাসী: গবেষণা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
নয় বছরে ৩১ দিন নির্মল বায়ুতে নিশ্বাস নিতে পেরেছে ঢাকাবাসী: গবেষণা বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: গত নয় বছরে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। ২০২৪ সালের সবচেয়ে ভালো বায়ুমানের দিন সংখ্যা ছিল ২ এবং সবচেয়ে খারাপ বায়ুমানের দিন সংখ্যা ছিল ৩৫।

বাংলাদেশে অবস্থিত ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের অর্থাৎ ঢাকার গত ৯ বছরের বায়ুমান সূচক বা একিউআই-এর তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫: বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উপলক্ষে দেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় পরিবেশ সংস্কার কমিশন গঠন করাসহ ৯ দফা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

বাপা’র সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক ও ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

মূল প্রবন্ধে ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে অবস্থিত ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের অর্থাৎ ঢাকার গত ৯ বছরের বায়ুমান সূচক বা একিউআই-এর তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যমতে, ঢাকায় গত ৯ বছরের ৩১১৪ দিনের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩১ দিন (১%) নির্মল বা ভালো বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। তবে ৬২৪ দিন (২০%) মাঝারি বায়ু, ৮৭৮ দিন (২৮%) সংবেদনশীল বায়ু, ৮৫৩ দিন (২৭%) অস্বাস্থ্যকর, ৬৩৫ দিন (২১%) খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৯৩ দিন (৩%) দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করে। ২০২৪ সালের সবচেয়ে ভালো বায়ুমানের দিন সংখ্যা হলো ২ এবং ও সবচেয়ে খারাপ বায়ুমানের দিন সংখ্যা ৩৫।

বিশ্ব ব্যাংকের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে কমপক্ষে ২৩৬,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

 সংবাদ সম্মেলন থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়:
১। দেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় পরিবেশ সংস্কার কমিশন গঠন করা
২। বায়ুদূষণকারী মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি।
৩। বায়ুদূষণকারী পোড়ানো ইটের বিকল্প ব্লক ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪। বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা।
৫। বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন, শিল্প কারখানা, গৃহস্থালি কাজসহ সকল স্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় নামানো।
৬।  আইইপিএমপি-সহ বিদ্যমান জ্বালানি নীতিগুলোতে সংশোধন আনা এবং নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন করা।
৭। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প কারখানায় বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিঃসরণ মান নির্ধারণ এবং এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ।
৮। সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, গবেষণা ও উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া।
৯। গৃহঅভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ কমাতে গ্রামীণ পর্যায়ে জীবাশ্ম জ্বলানির পরিবর্তে সবুজ জ্বালানি নিশ্চিত করা।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাপার সহ-সভাপতি ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম. ফিরোজ আহমেদ, বাপার সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম. শহীদুল ইসলাম, বাপা সহ-সভাপতি মহিদুল হক খান, যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
আরকেআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।