ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩০ মে ২০২৫, ০২ জিলহজ ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বান্দরবানে বর্ষা এলেই শঙ্কা বাড়ে পাহাড় ধসের 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৩৩, মে ২৯, ২০২৫
বান্দরবানে বর্ষা এলেই শঙ্কা বাড়ে পাহাড় ধসের  পাহাড় কেটে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন ঘরবাড়ি।

বান্দরবান: বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে দেখা দেয় পাহাড় ধসের আশঙ্কা। এর ফলে আতঙ্কে রয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী বাসিন্দারা।

 যে কোনো সময় পাহাড় ধসে ঘটতে পারে প্রাণহানির ঘটনা।

শহরের টাংকি পাহাড়, বালাঘাটা, কালাঘাটা, ইসলামপুর, হাফেজঘোনা, বনরুপা পাড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাজারও মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এসব দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার পেতে প্রশাসন পক্ষ থেকে পাহাড় না কাটার সতর্কতা ও মামলা করা হলেও থামেনি এসব মহাযজ্ঞ কাজ। ফলে বান্দরবান জেলায় গত একদশকে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১০৫ জনের অধিক।

বান্দরবানের সাত উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে কয়েক হাজারের বেশি পরিবার। জেল শহরে কালাঘাটা, বনরুপা, বীর বাহাদুর নগর, লাঙ্গেপাড়াসহ বেশ আরও কয়েকটি স্থানে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন অধিকাংশ মানুষ। জেলা শহরে শুধু নয় লামা, নাইক্ষ্যংছড়িতে একই চিত্র।


উঁচু পাহাড়ের ওপর মাটি কেটে বসতঘর নির্মাণের ফলে বর্ষায় মৌসুমে এলে শিকার হয় পাহাড় ধসে দুর্ঘটনায়। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে একাধিকবার বলা হলেও তবুও সেখানে থাকছেন অনেকেই। প্রত্যেক বছর পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড় ওঠায় গত বছরের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ও পরিবারের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।


প্রশাসনের তথ্য মতে, ২০০৬ সালে জেলা সদরে তিনজন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় দুইজন, ২০১২ সালে লামা ফাইতং ইউনিয়নে ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন, ২০১৩ সালে পৌর শহর কালাঘাটায় দুইজন, ২০১৪ সালে সদরে চারজন, ২০১৫ সালে লামায় ছয়জন ও সদরের বনরূপা পাড়ায় তিনজন, ২০১৭ সালের সদরের কালাঘাটায় সাতজন ও রুমা সড়‌কে পাঁচজন, ২০১৮ সালে নাইক্ষ্যংছড়িতে তিনজন ও লামায় চারজন, ২০১৯ সালে লামা‌য় একজন, ২০২০ সালে আলীক‌দ‌মের মি‌রিঞ্জা এলাকায় একজন, ২০২১ সালে ছাইঙ্গ‌্যা ঝি‌রি‌তে এক পরিবারের তিনজন, ২০২৩ সালে মা-মেয়ে ২জন ও সর্বশেষ চলতি বছরে নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় ধসে নিহত হন একজন কৃষক।


আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসু‌মে পাহাড় কেটে তার পাদদেশে নতুন নতুন বসতি নির্মাণ করা হচ্ছে। পাহাড়ি জমির মূল্যে সমতলের তুলনায় কম হওয়ায় নিম্নআ‌য়ের মানুষজন পাহাড় কেটে সেখানে বসতি নির্মাণ ক‌রে জীবনের ঝুঁকি নি‌য়ে বসবাস করেন।   আর বর্ষা এসব এলাকায় পাহাড় ধ‌সে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগই নিম্নআ‌য়ের মানুষ। এ অবস্থায় এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে না নিলে পাহাড় ধসে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

 মঙ্গলবার (২৭ মে) জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন মণ্ডল জানান, বান্দরবানে প্রায় পাঁচদিন মতো সকাল থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হতে পারে। সেসঙ্গে বৃষ্টির পাশাপাশি হালকা ঝোড়ো বাতাস বইবে। তবে পাহাড়ে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন সেখানে পাহাড় ধসে আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক শামিমা আরা রিনি বলেন, ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা কিংবা শুরু হলেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভাসহ সবাই অবহিত করা হয়। আর ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বসবাস করছে তাদের সরিয়ে নিয়ে আসার জন্য মাইকিং করা হয় এবং আমরা চেষ্টা করি সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে আসতে, যাতে কেউ দুর্ঘটনা শিকার না হয়।

এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।