ঢাকা: জাপানি ভাষায় মাকড়শাটির নাম যড়োগুমো; অর্থ ‘বধূর বন্ধন’। কেউ কেউ এটিকে বলে থাকেন ‘বারাঙ্গণা বা চরিত্রহীন মাকড়শা’।
ধারণা করা হয়, যে ক’টি মাকড়শার অদ্ভুত এবং আধ্যত্মিক ক্ষমতা রয়েছে। তাদেরই একটি হলো যড়োগুমো বা ‘সোনালী জালের মাকড়শা’।
শক্তিশালী জাল এবং দেহের চমৎকার রঙের কারণে যড়োগুমো বেশি প্রসিদ্ধ। জাপানের বিভিন্ন জায়গায় এদের দেখা মেলে। এদের শরীরের আকার সাধারণত দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে, শরীরের আকারের তুলনায় অনেক বড় শিকারে এরা সিদ্ধহস্ত। কখনও কখনও এরা ছোট আকারের পাখিও শিকার করে ফেলে।
এদের বারাঙ্গণা বা চরিত্রহীন বলার কারণ হলো মাকড়শাটি যুবকদের প্রতি দুর্বল! শুনতে অবাক লাগছে তো? এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
জাপানি উপকথা অনুযায়ী, যড়োগুমো’র বয়স যখন ৪০০ বছরে দাঁড়ায়, তখন এরা পোকা-মাকড় শিকারের পরিবর্তে মানুষ শিকার শুরু করে! শিকারের যে ধরনের পদ্ধতির সঙ্গে আমরা পরিচিত, মোটেও তেমনভাবে নয়। বিষয়টি খুবই নাটকীয়।
ছদ্মবেশ ধারণে পটু এই মাকড়শা কোনো গুহা, দীর্ঘ সময় ধরে পরিত্যক্ত নির্জন বাড়ি এবং জঙ্গলে জাল বুনে। এই জালের সাহায্যে এবং শরীরের রঙ বদলে এরা সুন্দরী তরুণীর রূপ ধারণ করে। এরপর সুদর্শন তরুণদের টার্গেট করে। একবার ভাল লেগে গেলে ওই তরুণকে তার বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। ফলে ওই যুবককে আর ফিরে পাওয়া যায় না। যড়োগুমো জাল দিয়ে এমনভাবে পেঁচিয়ে ফেলতে পারে যে- পছন্দের তরুণটি কোনোভাবেই পালাতে পারে না।
এর শরীরে শক্তিশালী বিষও রয়েছে, যা একজন মানুষকে প্রথমে দিনে দিনে দুর্বল করে এবং পরে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় বলেও প্রচলিত আছে।
যড়োগুমো অন্য শিকারী মাকড়শাদেরও নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি অন্য মাকড়শাদের অধীনস্থও করে রাখে বছরের পর বছর। কেবল নির্জন এলাকায়ই নয়, ব্যস্ত শহরের মাঝখানেও একইভাবে সাম্রাজ্য বিস্তার করে যড়োগুমো।
কোরিয়ান ভাষায় এদের বলা হয়, ‘মাদাং গুমি’; যার অর্থ ‘ভাগ্যবক্তা মাকড়শা’।
এ প্রজাতির মাকড়শা প্রথম দেখা যায় উত্তর আমেরিকায়। অবশ্য, নতুন একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, জর্জিয়ার জঙ্গলেও তারা জাল বুনতে শুরু করেছে। মাকড়শাটির আকৃতি দেখে গবেষকরা ধারণা করছেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই তারা এ অঞ্চলে বসবাস করছে।
উপকথায় অনেক অবিশ্বাস্য ব্যাপার থাকলেও গবেষকদের মতে, মাকড়শাটিকে যড়ো বলা হলেও প্রকৃত পক্ষে এরা মানুষের জন্য মোটেই ক্ষতিকর না। অন্তত এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ হাতে পাওয়া যায়নি।
দ্য জর্জিয়া মিউজিয়াম অব ন্যাচরাল হিস্ট্রি-এর কিউরেটন এবং প্রধান গবেষক ই. রিচার্ড হোইবেক বলেন, এ প্রজাতির মাকড়শা সম্পর্কে আমি ভাল জানি। এটি কোনোভাবেই ক্ষতিকারক নয়।
সহকারী গবেষক ওয়েসলি হাফমাস্টার এবং তার দল ২০০৪ সালে এক ডজন মাকড়শাকে ১০ দিনের বেশি সময় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর ওই মাকড়শাগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা যায়, এদের উৎপত্তি চীন এবং জাপানে।
দ্য ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ার গবেষক রিক ভেটার বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, বংশ বিস্তারের জন্যই তারা আবাস পরিবর্তন করছে। এদের সব চেয়ে অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো এরা মুখ থেকে সিল্ক জাতীয় এক ধরনের তন্তু বের করে যা তাৎক্ষণিকভাবে প্যারাস্যুটের মতো আকাশে উড়ানো যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৫