ঢাকা: স্থলভাগে প্রাণিকূলের মতো জলভাগেও ছড়িয়ে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। বনের রাজা শব্দটা শুনলেই যেমন আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সিংহের অবয়ব, একইভাবে পানিতেও রয়েছে সিংহ।
কেবল নামেই নয়, আচরণেও রয়েছে এদের দারুণ মিল।
গায়ে ডোরাকাটা দাগ, রয়েছে সিংহের কেশরের মতো কাঁটা। যেন এক-একটি তলোয়ার। দেখেই বোঝা যায়, সামনে পড়লে রক্ষা নেই কারও। কেশর ফুলিয়ে দাপটের সঙ্গে মহাসাগরে রাজত্ব করে বেড়ায় লায়নফিশ।
ছোট মাছ থেকে শুরু করে মুখের সঙ্গে খাপ খায় এমন যে কোনো জলজ প্রাণী এক নিমেষেই সাবাড় করে ফেলে রাক্ষুসে এ মাছ। এমনকি প্রবাল প্রাচীরও রক্ষা পায় না এদের হাত থেকে।
গত তিন দশক ধরে মেক্সিকো ও ক্যারিবীয় উপসাগর লায়নফিশের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত হলেও প্রথমবারের মত দক্ষিণ আমেরিকায় এ মাছের দেখা মিলেছে। এদিকে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেখানকার বিজ্ঞানীরা।
সাধারণত মেক্সিকো ও ক্যারিবীয় উপসাগরেই লায়নফিশ-এর দেখা মেলে। খাবার সংগ্রহ করতে এরা স্বজাতিদের সঙ্গেও লড়াই করে। লায়নফিশের এ লড়াইকে সমুদ্রে সবচেয়ে বড় আক্রমণ বলা হয়।
তবে বর্তমানে এ মাছ দক্ষিণ আমেরিকায় তাদের পরিধি বাড়াচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ২২ এপ্রিল ‘প্লোস ওয়ান’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে প্রথমবারের মত ব্রাজিলের পানিতে লায়নফিশ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১০ মে দক্ষিণ ব্রাজিলের রিওডি জেনিরোর ক্যাবো ফ্রিও নগরীতে প্রথম লায়নফিশ দেখতে পান এক ব্যক্তি। পরদিন তিনি বর্শার সাহায্যে মাছটি ধরে নিয়ে যান এবং গবেষণার কাজে তা বিজ্ঞানীদের কাছে হস্তান্তর করেন।
এরপর গবেষকরা ওই মাছের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখতে পান, এর জিনগত বৈশিষ্ট্য ক্যারিবীয় লায়নফিশের সঙ্গে মিলে যায়। তবে স্থানীয় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সঙ্গে এর নমুনা মেলেনি।
এটি ক্যারিবীয় থেকে প্রাকৃতিকভাবে ব্রাজিলে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মানোয়া’র হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষক বাট মার্ক হিক্সন বলেন, ক্যারিবীয় উপসাগর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের উপকূলের দিকে মহাসগরীয় উল্টো স্রোতে বা মানুষের মাধ্যমেও ব্রাজিলে আসতে পারে বলেও মনে করছেন গবেষকরা।
উত্তর ক্যারোলিনার গবেষক জেমস মরিস বলেন, লায়নফিশ যেভাবেই ব্রাজিলে আসুক না কেনো এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়। ২০০৯ সালেই ধারণা করা হয়েছিল উত্তর আর্জেন্টিনার মত দক্ষিণেও এরা ছড়িয়ে পড়বে।
তবে লায়নফিশ কেবল ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ব্রাজিলে এসেছে কিনা তা পরিষ্কার নয়। আবার ব্রাজিলে আসা লায়নফিশ অন্যান্য মাছের মত সারা বছর ব্রাজিলেই থাকবে এমনটা নাও হতে পারে।
নতুন এলাকায় লায়নফিশ স্থায়ীভাবে থাকলে স্থানীয় প্রবালপ্রাচীরে পরিবর্তন আসতে পারে বলে, যোগ করেন মরিস।
তিনি বলেন, লায়নফিশ এক জাতীয় লোভী শিকারি প্রাণী। তাদের মুখের আকারের সঙ্গে খাপ খায় এমন ছোট যেকোনো প্রাণীকে এরা খেয়ে ফেলে। স্থানীয় মাছের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে জলজ প্রাণীও খায় এরা। ফলে প্রবালপ্রাচীরের গঠনেও প্রভাব পড়ে।
ব্রাজিলের পানিতে লায়নফিশের আগমণ ‘ক্ষতিকর’ উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেখানকার গবেষকরা।
তাদের মতে, ব্রাজিলের মহাসাগরীয় দ্বীপ দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
সান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিজ্ঞান একাডেমির সামুদ্রিক জীব বিজ্ঞানী লুইজ রচার মতে, যদি লায়নফিশ ব্রাজিলে পাওয়া যায়, তবে সেখানকার জলজ প্রাণীদের জন্য এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এমনকি স্থানীয় প্রাণী বিলুপ্তও হতে পারে।
ব্রাজিলে এ ধরনের মাছ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এরা বংশ বিস্তার করার আগেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
মার্ক হিক্সন বলেন, লায়নফিশ বাড়িতে পালন করা খুবই সহজ। এরা দেখতেও খুবই সুন্দর। কন্টেইনার বা অ্যাকুরিয়ামে খুব সহজেই রাখা যায় লায়নফিশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৯ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৫
এসএন/এটি/