ঢাকা: প্রথম সঙ্গী প্রিন্সকে ছাড়াই আলেকজান্ডারের সঙ্গে নতুন সংসারে সুখে আছে দুর্লভ ব্লু গোল্ড ম্যাকাও প্রজাতির পাখি প্রিন্সেস। সুখের সংসারে এসেছে সাত মানিক (বাচ্চা)।
রাজধানীর ২২/২ নম্বর বাসার ফিকামলি সেন্টারের মিনি চিড়িয়াখানায় সংসার এই পাখী দম্পতির। ১৮ কাঠার জমির উপর তৈরি এই মিনি চিড়িয়াখানার মালিক ড. ওয়াদুদ। তিন তলা বাড়িটির নীচতলা ও তৃতীয় তলায় রয়েছে ৫শ’ প্রজাতির পাখি। এরমধ্যে তোতা গোত্রের ম্যাকাও আছে পাঁচ প্রজাতির।
যার মধ্যে ব্লু গোল্ড ম্যাকাও প্রজাতির পাখি প্রিন্সেস। ব্রাজিলের প্রিন্সেস বাংলাদেশের প্রিন্স’র সঙ্গে সংসার পাতে ২০১০ সালে। তবে মালিকানা দ্বন্দ্বে ভাঙন ধরে তাদের সেই সংসারে। আদালতের নির্দেশে ২০১৪ সালের ৩ জানুয়ারি বিচ্ছেদ ঘটে প্রিন্স-প্রিন্সেস’র।
এরপর ব্রাজিল থেকে প্রিন্সেস’র নতুন সঙ্গী আলেকজান্ডারকে নিয়ে আসেন তার মালিক ড. ওয়াদুদ। প্রথমে আলেকজান্ডারের সঙ্গে সংসার পাততে চায়নি প্রিন্সেস। তবে ড. ওয়াদুদের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় মনের মিল ঘটে প্রিন্সেস-আলেকজান্ডারের।
প্রিন্সেস-আলেকজান্ডারের সংসারের বিষয়ে তাদের মালিক ড. ওয়াদুদ বাংলানিউজকে জানান, ২০১০ সালে ইকরাম সেলিম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রিন্স নামের একটি ম্যাকাও পাখি উপহার পান তিনি। একই বছরে প্রিন্স’র জন্য ব্রাজিল থেকে সঙ্গী নিয়ে আসেন। প্রিন্স’র নামের সঙ্গে মিলিয়ে তার নাম রাখেন প্রিন্সেস।
একে একে তিন বছর একত্রে কাটিয়ে দেয় প্রিন্স-প্রিন্সেস জুটি। এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে ইকরাম সেলিম প্রিন্সকে ফেরত চান। জুটি ভাঙার ভয়ে প্রিন্সকে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান ওয়াদুদ। এরপর আদালত পর্যন্ত গড়ায় বিষয়টি। আদালতের রায়ে ২০১৪ সালের ৩ জানুয়ারি প্রিন্সকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন এই পাখী প্রেমী।
ফলে সঙ্গী প্রিন্সকে হারিয়ে ফিকামলি সেন্টারের মিনি চিড়িয়াখানায় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে প্রিন্সেস। সঙ্গী হারা প্রিন্সেসের সঙ্গে অন্য পাখির জুটি বাঁধানোর চেষ্টা শুরু করেন ওয়াদুদ। কিন্তু কাউকে পছন্দ করছিলো না প্রিন্সেস।
এক পর্যায়ে ব্রাজিল থেকে প্রিন্সেস’র বর্তমান সঙ্গী আলেকজান্ডারকে নিয়ে আসেন এই পাখি প্রেমী। তবে সেখানেও বাঁধে বিপত্তি। প্রথমে আলেকজান্ডারের সঙ্গে সংসার পাততে চায়নি প্রিন্সেস। কয়েক মাস ঝগড়া-ঝাটির পর ২০১৪ সালের জুনে আলেকজান্ডারের সঙ্গে মনের মিল ঘটে প্রিন্সেস’র। শুরু হয় প্রিন্সেস-আলেকজান্ডার জুটির নতুন পথ চলা।
আলেকজান্ডারের সঙ্গে জুটি বেঁধে পাঁচ ধাপে ১৩টি ডিম পাড়ে প্রিন্সেস। তবে ওই পর্যন্তই। ডিম থেকে পাঁচবারই বাচ্চা ফুটতে ব্যর্থ। গত ৮ মে ৬ষ্ঠ ধাপে আসে সাফল্য। এই ধাপে দেওয়া সাতটি ডিমের প্রতিটি থেকেই বাচ্চা ফুটেছে।
প্রিন্সেস-আলেকজান্ডার দম্পতির বাচ্চার বিষয়ে ওয়াদুদ বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৪ সালের জুনে সংসার শুরুর পর প্রিন্সেস পাঁচবারে ১৩টি ডিম দেয়। তবে ওই ডিম থেকে একটি বাচ্চাও ফোটেনি।
অবশেষে সাফল্য আসে ষষ্ঠবারে। সফল গবেষণার মাধ্যমে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করায় একবারে সাতটি বাচ্চা পাওয়া গেছে। পৃথিবির ইতিহাসে এটি বিরল ঘটনা। এর আগে কখনো ম্যাকাও পাখি থেকে একবারে সাতটি বাচ্চা পাওয়া যায়নি- বলেন ওয়াদুদ।
তিনি বলেন, ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য বড় এক রুমে আমাজান অববাহিকার পরিবেশে তৈরি করা হয়। বনজ গাছ কেটে কৃত্রিমভাবে লাগানো হয় রুমের ভেতরে। ঝরনা ও কৃত্রিম ঝড়ের জন্য রুমের চার কোনায় লাগনো হয় উচ্চা ক্ষমতার পাখা। এরপর প্রিন্সেস ও আলেকজান্ডারকে ওই রুমে রেখে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমেই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার দৃশ্য দেখা যায়।
বাচ্চা ও মা কেমন আছে জানতে ওয়াদুদ বলেন, প্রিন্সেস ও আলেকজান্ডার ফুরফুরে মেজাজে আছে। ভালো আছে তাদের সাত মানিকও। মুখে চিঁচিঁ শব্দ করছে। তবে এখনো ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছে না বাচ্চারা। বড় বাচ্চাটির সোনা ঝরা গাঢ় সবুজ পালক ফুটেছে। এর পরের দুটির শরীরেও পালক উঠছে। আর সবচেয়ে ছোট তিনটির গায়ে কোন পালকই উঠেনি।
ওয়াদুদ বলেন, বাচ্চা ফোটার পর প্রিন্সেস ও আলেকজান্ডারের মধ্যে সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়েছে। আলেকজান্ডার একটু চোখের আড়াল হলেই ডানায় শব্দ করে জানান দিচ্ছে প্রিন্সেস। পরম স্নেহে আগলে রাখছেন বাচ্চাদের। বাচ্চাদের কাছে আমি (ড. ওয়াদুদ) ছাড়া অন্য কোন মানুষের উপস্থিতি সহ্য করতে পারছে না প্রিন্সেস। আমিও বাচ্চাদের কাছে যেতে দিচ্ছি না কাউকে।
তিনতলায় একটি ড্রামের ভেতরে রাখা হয়েছে বাচ্চাগুলোকে। সেখানে দুই ঘণ্টা পর পর খেতে দেওয়া হচ্ছে। খাবার তালিকায় থাকছে আপেল, আঙ্গুর, মাল্টা, কমলা, ছোলা, সিদ্ধ ভুট্টা, বাদাম, গাজর ও সূর্যমুখী ফুলের বিচি। দুই মাস পর বাচ্চাগুলোকে এখান থেকে সরিয়ে আলাদা খাঁচায় রাখা হবে জানান ওয়াদুদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৫
এএসএস/জেডএম