শ্রীমঙ্গল: বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী প্রাণী হিসেবে শীর্ষে পেরেগ্রিন ফেলকন (Peregrine Falcon)। জল, স্থল আর বায়ুর মধ্যে সে-ই সবচেয়ে দ্রুতগামী।
বাংলায় একে পেরেগ্রিন শাহিন বলা হয়। বৈজ্ঞানিক নাম Falco Peregrinus। একদিকে তার ডানার প্রচণ্ড গতি, অন্যদিকে শিকার ধরার বিশেষ কৌশল- এই দু’য়ের কারণে পাখিরাজ্যে বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী এ পাখিটিকে সব মহাদেশেই অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করতে দেখা যায়।
আমাদের গ্রহের নভোচর, জলচর ও স্থলচর প্রাণীদের মধ্যে দ্রুতগতির রেকর্ডধারী পেরেগ্রিন ফেলকন। স্থলচর দ্রুত গতিসম্পন্ন প্রাণী চিতার গতির থেকেও এর গতি অনেকগুণ বেশি। চিতার গতি প্রতি ঘণ্টায় ১১০ কিমি থেকে ১২০ কিমি।
এ পাখির গতি প্রতি ঘণ্টায় ৩২২ কিলোমিটার অর্থাৎ, ২০০ মাইল ছুটে চলার প্রমাণ মিলেছে। নদী, হ্রদ, পাহাড়, জলাভূমি, প্যারাবন, অর্ধমরুভূমি প্রভৃতি স্থানে এরা অবস্থান করে।
ভোর ও গোধূলিতে এরা বেশি কর্মচঞ্চল থাকে। মার্চ-মে এদের প্রজননকাল। খাঁড়া পর্বতের গায়ে অথবা উঁচু গাছের শক্ত ডালে মাচার মতো বাসা বানিয়ে মেয়ে পাখিটি একাই ডিমে তা দেয়।
পেরেগ্রিন ফেলকনের ওজন ৩০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত এবং শরীরের দৈর্ঘ্য ৩৪ সেমি থেকে ৫৮ সেমি। এরা আমাদের দেশের বিরল পরিযায়ী পাখি। শীতকালে আমাদের দেশে মাঝে মধ্যে দেখা যায়।
প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের দিক কালচে ধূসর, দেহের নিচে লালচে, মাথা কালো, পেট ও রানে কালো ডোরা, চোখ গাঢ় বাদামি এবং পা ও পায়ের পাতা হলুদ থাকে। পৃথিবীতে পেরেগ্রিন শাহিনের মোট ১৯টি উপপ্রজাতি রয়েছে। বাঁকানো ধারালো দাঁত ও তীক্ষ্ম নখ দিয়ে এরা শিকারকে মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে পারে। এদের শিকারের তালিকায় রয়েছে কবুতর, জলজ পাখি, এমনকি স্তন্যপায়ী বাদুড়ও।
পাখি পর্যবেক্ষক, গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক অণু বাংলানিউজকে বলেন, এ পাখিটির শিকার ধরার মুহূর্তটি প্রাণিজগতের সর্বাধিক আকর্ষণীয় একটি বিষয়। চিহ্নিত শিকারকে ধরার জন্য সে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ব্যবহার করে।
ডানা দুটোকে তার শরীরের সঙ্গে লেপ্টে রেখে প্রচণ্ড গতি ছুটতে পারে। নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে পাখিটি নিচের দিকে মুক্তভাবে লাফ দিয়ে শিকারকে অব্যর্থভাবে জাপটে ধরে।
তিনি আরও বলেন, শিকারের সময় এরা মৃদু নড়াচড়া করে চোখের নিমিষে দিক পরিবর্তন করতে পারে। অনায়াসে দুই কিলোমিটার দূর থেকে কবুতরের মতো ছোট-খাটো শিকারের দিকে ধাবিত হতে পারে। সাধারণত শিকারকে বধ করতে এরা তীক্ষ্ম ধারালো নখ ব্যবহার করে।
তবে এতো প্রচণ্ড বেগে ধেয়ে আসার দ্রুতগতির ধাক্কায় সেই শিকারের ঘাড় মুহূর্তে ভেঙে যায়। শিকার ধরার অতি সফল এ পদ্ধতিকে বলা হয় ডেড স্টুপ (Dead stoop)। এই বিশেষ ক্ষমতার জন্য পৃথিবীর পাখিপ্রেমী ও গবেষকদের কাছে এর যথেষ্ট কদর রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৫
এএ