শ্রীমঙ্গল: বৈশাখ পেরিয়ে প্রকৃতিতে এখন জ্যৈষ্ঠ। জ্যৈষ্ঠকে বলা হয় মধুমাস।
গাছ থেকে সদ্য পেড়ে আনা তাজা ফলের পরশ অসাধারণ এক অনুভূতির জন্ম দেয়। এ মধুমাসে তাজা ফলের স্বাদ নিতে কে না চায়!
গ্রীষ্মকালের শেষ মাস জ্যৈষ্ঠ। ষড়ঋতুর এই দেশে প্রথম ঋতুটি প্রাণিকুলের জন্য প্রকৃতির আশীর্বাদ হয়ে আসে। ফলদ গাছগুলো ফলে ফলে পূর্ণ হয়ে ওঠে তখন। এ মাসেই ফল পেকে রসে টইটম্বুর হয়ে যায়। গাছে গাছে পাখিদের আসা-যাওয়া বাড়তে থাকে। পাখি ছাড়াও বিভিন্ন প্রাণীরা এসময় প্রচুর খাদ্যসম্ভার তাদের হাতের নাগালে পেয়ে যায়। সকাল থেকে রাত, বলতে গেলে চব্বিশ ঘণ্টাই চলে পশু-পাখিদের পাকাফল খেয়ে বেঁচে থাকার দারুণ এক প্রতিযোগিতা।
সন্ধ্যা নামতেই বাদুড় এসে ভিড় করে ফলের গাছে। তাদের খাদ্যসম্ভার পূর্ণতা পায় এ মধুমাসেই। সারারাত চলে একটি গাছের একটি ফলকে ঘিরে স্বাদ নেওয়ার পালা। পাখিদের তালিকায় বাদুড় আসলে পড়ে না। এরা নিশাচর স্তন্যপায়ী প্রাণী। বাদুড়ের দৃষ্টিশক্তি অনেক দুর্বল। এরা কোনোকিছু পরিষ্কারভাবে দেখতে পায় না। তাই তাদের শব্দতরঙ্গ ও শ্রবণশক্তির ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে চলতে হয়। এভাবেই এরা খাদ্য সংগ্রহ করে ও এদিক-ওদিক উড়ে বেড়ায়।
অন্যদিকে, দিনের আলোয় বিচরণকারী নানা প্রজাতির পাখিসহ বানর-কাঠবিড়ালিরা মধুমাসে ফল আহরণে ব্যস্ত সময় কাটায়। এগাছ থেকে ওগাছ, সারাদিনই চলে একটু একটু করে স্বাদ নেওয়ার পালা। তবে তারা যতটুকু না ফল খায়, তার চেয়ে অনেক বেশি নষ্ট করে। একটু খেয়ে বাকি অংশ মাটিতে ফেলে দেয়। কোনো কোনো ফল আবার এতই পেকে যায়, ঠোঁট বা দাঁত স্পর্শ করা মাত্রই ঝরে যায়।
জ্যৈষ্ঠ হলো রসের মাস। ফলে এ মাসকে মধুমাস বলে নিজস্ব একটি পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে বহুকাল থেকে। যদিও আমরা সবাই জানি, মধু ফলে নয়, থাকে ফুলের মধ্যে। তারপরও মধুমাসের নাম উল্লেখ করলেই জ্যৈষ্ঠ এসে হাজির হয় ফলের সমাহার নিয়ে। আম, জাম বা লিচু, নিজের গাছ থেকে পেড়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। পাকা ফলের ঘ্রাণে মুহূর্তেই শিহরিত হয় মন।
তবে হতাশাও যুক্ত রয়েছে এখানে! একশ্রেণীর অসাধু ফল ব্যবসায়ীর হাতে নষ্ট হচ্ছে তাজা ফলের ঘ্রাণ আর সতেজতা। ঘৃণ্য ওইসব ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে ফলপ্রেমী মানুষ। মৌসুমী ফলের ক্ষেত্রেও না পচার জন্য মেশানো হয় ক্ষতিকর তরল পদার্থ। ফলে এসব মৌসুমী ফল কিনতে গিয়ে অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতার ভোগেন। এভাবেই চলে মধুমাসকে বিপন্ন করার অপচেষ্টা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৫
এসএস/