ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

উন্নয়নের নামে নদী ধ্বংস করছে পাউবো

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৫
উন্নয়নের নামে নদী ধ্বংস করছে পাউবো ছবি: রাজীব/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিরুদ্ধে উন্নয়নের নামে নদী ধ্বংস ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন পরিবেশবিদরা।
 
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি) আয়োজিত ‘তিস্তাসহ আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং অভ্যন্তরীণ নদী-জলাশয়-জলাধার দখল-দূষণ রোধে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ অভিযোগ করেন।


 
সেমিনারে আগত বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠানটি নদীর উন্নয়নের নামে নদীতে বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ, স্লুইচ গেট নির্মাণের নামে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করছে।
 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, বিভিন্নভাবে আমাদের নদীগুলো ধ্বংস হচ্ছে। একদিকে ভারত আমাদের নদীগুলোর অস্তিত্ব অস্বীকার করছে এবং তাদের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে নদীগুলোর উজানে বাঁধ দিয়ে নদীকে ধ্বংস করছে। অপরদিকে আমাদের সরকারও নদীগুলোর উন্নয়নের নামে নদীকে ধ্বংস করছে। এজন্য তারা একটি প্রতিষ্ঠানকে নদীর উন্নয়নের কাজ দিয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ করে দিচ্ছে।
 
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, এদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ও নদী দখলবাজরা নদী দখল করে তাদের প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার কারণেও নদী আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে।
 
‘নদীগুলোকে বাঁচাতে না পারলে আগামীতে এ দেশের মানুষ একটি পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে’ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ভৌগলিক কারণে এ দেশের যে একটা অবস্থান ছিল আমরা নিজেরাই অর্থ খরচ করে সেই সম্ভাবনাকে ধ্বংস করেছি।
 
তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর উন্নয়ন প্রকল্প নামে নদীকে ধ্বংস করছে। তাদের উন্নয়নের ধরনটাই হচ্ছে নদী বিরোধী।
 
ট্রানজিট প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে অথচ এই ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশের পরিবেশের ওপর কি বিরুপ প্রভাব পড়বে তার কোনো পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। এর প্রভাব যে নদীগুলোতে পড়বে সে ব্যাপারেও সরকারের কোনো চিন্তা নেই।  
 
সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন জল পরিবেশ ইন্সটিটিউটের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক।
 
প্রবন্ধে তিনি বলেন, ভারত একটি আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যার মধ্যে তারা ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নদীগুলোর পানি ভারতের পশ্চিমে রাজস্থান ও গুজরাট এবং দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে নিতে চায়। ব্রহ্মপুত্র নদের তিস্তা অববাহিকায় ভারত কয়েক ডজন ড্যাম  নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গসহ অনেক অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। যার প্রভাব পড়বে আমাদের কৃষি, অর্থনীতি, পরিবেশ ও জীবনযাত্রার ওপর।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আবদুল মতিন বলেন, আজ নদী উন্নয়নের নামে নদীকে ধ্বংস করা হচ্ছে। আর এই কাজটি করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মন্ত্রীরাও নিরুপায়। এর বিরুদ্ধে তারাও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না।
 
মো. আবদুল মতিন বলেন, অনেক নদীতে স্লুইচ গেট নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ এসবের কোনো প্রয়োজনই নেই। যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে স্লুইচ গেট নির্মাণ করে প্রকৌশলীরা দুধেল গাইয়ের মতোই সারা বছর অর্থ লুট করছেন।
 
সেমিনারে প্যানেল আলোচক  হিসেবে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন নদী বিশেষজ্ঞ স্বপন আদনান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এএলআরডি এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, উপ নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি প্রমুখ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৫
এডিএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।