ঢাকা: সরকার ঘোষিত ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সুফল পেতে স্থানীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়নের তাগিদ দেন তারা।
শনিবার (১১ জুলাই) পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) কার্যালয়ে ‘প্রণয়নাধীন ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা: আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ সুপারিশ করেন পরিবেশবিদরা।
পবা আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন, পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন পবা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএমএ’র সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ ই মাহবুব, পবার সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য শামীম খান টিটো, জনউদ্যোগের সদস্য সচিব তারিক হাসান মিঠুল, নিরুপমা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট নাজনীন নাহার নিরুপমা, ইউনাইটেড পিপলস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক আলী হাজারী, উইং কমান্ডার (অব.) কামাল, গবেষক সুরাইয়া আক্তার, রুনু আলী প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে আবু নাসের খান বলেন, বৈষম্য ভিত্তিক ভতুর্কির কারণে আমাদের অনেক পরিকল্পনাই সঠিক রূপ নেয় না। এজন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা অবশ্যই স্থানীয় পর্যায়ের মতামত নিয়ে করতে হবে। এছাড়া মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতা নিশ্চিত করেই বরাদ্দ দিতে হবে।
তিনি বলেন, পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনার ফল পেতে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা করতে হবে। শহরে বসে গ্রামের পরিকল্পনা করলে তার কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না। তাছাড়া সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা হতে হবে পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা।
৭ম পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নে ২২ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে অন্যতম, কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়সহ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। মহাপরিকল্পনা জাতীয়ভাবে আলোচনা বা তর্ক বিতর্কের মাধ্যমে হবে। এখানে কারিগরি বিবেচনা যথাযোগ্য পর্যায়ে অবশ্যই হতে হবে। কর্মপরিকল্পনা আন্তঃমন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। সকল মানুষের জন্য তবে বিশেষভাবে নিম্ন আয়ের মানুষকে পরিকল্পনার বলয়ে নিয়ে এসে পরিকল্পনা করা। পানি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা করা।
এছাড়াও, সমগ্র বাংলাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনা ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ করা। ঢাকার ভূগর্ভস্থ ও ভূউপরিস্থ সকল সম্পদের ম্যাপ প্রণয়ন ও অবকাঠামো এবং সেবাসমূহের ত্রিমাত্রিক পরিকল্পনা করা। পরিবেশবান্ধব শক্তি বৃদ্ধির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। উৎপাদন খাতে বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহারে নজর দেওয়া। বিদেশ ফেরৎ জনগোষ্ঠীকে কিভাবে উপযুক্তভাবে উৎপাদন খাতে কাজে লাগানো যায় তার পরিকল্পনা করা।
সুপারিশে আরও বলা হয়, সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান, যেগুলো পরিবেশ দূষণ করে তাদের পরিবেশবান্ধব করতে হবে, কিন্তু যতদিন পরিবেশবান্ধব হয়নি ততদিন ‘পরিবেশ কর’ আরোপ করতে হবে। মুনাফারও একটা অংশ পরিবেশ খাতের ক্ষতিপূরণ হিসাবে আদায় করা যেতে পারে। নতুন সব শিল্পকারখানা যেগুলো আগামী দিনে গড়ে উঠবে সেগুলোকে পরিবেশবান্ধব হতে হবে। ইটিপি নতুন সব কলকারখানায় বাধ্যতামূলক করতে হবে, নইলে শিল্প কারখানার নিবন্ধন/অনুমোদন না দেওয়া। পরিবেশ আদালতকে সক্রিয় করতে হবে। পরিবেশ আদালতে মামলা করার প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে।
পরিবেশের ক্ষতি বিষয়ে যেকোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেন পরিবেশ আদালতে মামলা করতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা দরকার। ট্রাফিক প্ল্যানিং বিভাগ জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে। পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা ও প্রাইভেটকারকে নিরুৎসাহিত করা। শুধু গণপরিবহনেই স্বল্প মূল্যের গ্যাস ব্যবহার করা যেতে পারে। সব ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর কনজেশন চার্জ এবং আমদানির সময় আলাদাভাবে পরিবেশ কর আরোপ করতে হবে। বাই সাইকেলসহ গণপরিবহন আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও পরিবেশ খাতকে পরিকল্পনায় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে ঘোষণা করা। নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া। সকল ধরণের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানানো হয় ২২ দফা সুপারিশে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৫
এসএম/এমজেএফ