শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): এবার মুক্তির স্বাদ পেলো গোলাপি। শরীরে রেডিও ট্রান্সমিটার নিয়ে সে ঘুরে বেড়াবে লাউয়াছড়ার বন-বাদাড়ে।
বাংলাদেশ অজগর গবেষণা প্রকল্পের সপ্তম ট্রান্সমিটারযুক্ত অজগর ছেড়ে দেওয়া হলো লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। আশা, বনি, চৈতি, ডিন, ইভা ও ফিরোজের পর এবার গোলাপি।
বেলা সাড়ে এগারোটায় জানকিছড়া বিটে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. তৌফিকুল ইসলাম উপস্থিত থেকে দুটি অজগর (Pythons) ও বিলুপ্তপ্রায় তিনটি হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ (Elongated Tortoise) অবমুক্ত করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন লাউয়াছড়া বিট অফিসার মুনিরুল ইসলামসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।
এছাড়াও অন্য একটি অজগরও অবমুক্ত করা হলো। যার শরীরে কোনো রেডিও ট্রান্সমিটার ছিলো না। এই অগজরটিকে গত দু’মাস আগে প্রেমনগর চা বাগান থেকে আহত অবস্থায় বনবিভাগের কর্মীরা উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। কিছুদিন তাকে সেবার পর স্বাভাবিক হয়ে উঠলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো।
এদিকে দুটি অজগরের পাশপাশি অবমুক্ত করা তিনটি হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপের নাম আইআইএন, জিম ও কাজল। এদের প্রত্যেকের শরীরেই যুক্ত ছিলো রেডিও ট্রান্সমিটার।
রেডিও ট্রান্সমিটারযুক্ত গোলাপির দৈর্ঘ্য প্রায় বারো ফুট। ওজন ১২ কেজি ৩৮০ গ্রাম। একে লাউয়াছড়ার পার্শ্ববর্তী এলাকা ফুলবাড়ি চা বাগানের শনখলা থেকে চলতি বছরের ১১ জুন উদ্ধার করা হয়। ২৩ জুন তার শরীরে ছোট একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপন করা হয়। যার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কয়েকদিন পর্যবেক্ষণের পর তাকে অবমুক্ত করা হলো।
অজগর গবেষণা প্রকল্পের মাঠকর্মী স্বপন রবিদাস বলেন, তিনটি কচ্ছপই ফুলবাড়ির শনখলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই রেডিও ট্রান্সমিটারের ফলে তাদের কাছ থেকে আমরা নানান তথ্য সংগ্রহ করতে পারবো।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. তৌফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রেডিও ট্রান্সমিটারবিহীন অজগরটি কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত ছিলো। সে দু’মাস আগে প্রেমনগর চা বাগানে এক শ্রমিকদের পুরো একটি ছাগল গিলে ফেলেছিল। সেই শ্রমিকটি তার গরু খুঁজতে গিয়ে দেখে যে অজগরের মুখে তার গৃহপালিত ছাগলটি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরে লোকজন নিয়ে জোর করে অজগরের মুখ থেকে মৃত ছাগলটিকে বের করতে গিয়ে অজগরটি মারাত্মক আহত হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে আমরা একে উদ্ধার করে আমাদের লাউয়াছড়া রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে আসি এবং ওর পরিচর্যা শুরু করি। অজগর সাপটি ওই মৃত ছাগলটিকে খেতে দিলে এমন কিছু ক্ষতি হতো না। সে নিজেও তার ছাগলটিকে জীবিত উদ্ধার করতে পারেনি। সচেতনতার অভাবে এমনটি হয়েছে।
বন্যপ্রাণি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘কারিনাম’ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও বন্যপ্রাণি গবেষক ড. এসএমএ রশিদ এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ৭টি অজগরের শরীরে রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপন করে বনে অবমুক্ত করেছি। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে রেডিও ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে বিপন্ন অজগর প্রজাতিটিকে আমাদের বনে বাঁচিয়ে রাখতে নানা তথ্যসংগ্রহসহ গবেষণা। বাংলাদেশ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বন বিভাগের সহযোগিতায় ‘কারিনাম’ এই অজগর গবেষণা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
বিবিবি/এএ