ব্রাহ্মণবাড়িয়া: পুলিশি প্রহরা আর শিকারীমুক্ত নিরাপদ পরিবেশ পেয়ে হাওর বেষ্টিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানা কম্পাউন্ড বিভিন্ন দেশীয় পাখির কলতানে মুখর হয়ে উঠে প্রতিদিন।
চলতি বর্ষা মৌসুমে পানকৌড়ি, বালি হাঁস, পান্তামুখি, ডাহুক, মাছরাঙ্গা ও বিভিন্ন প্রজাতির বকসহ অসংখ্য পাখি আবাসস্থল গেড়েছে থানা কম্পাউন্ডের অন্তত ২০টি গাছে।
হাওর চষে আহার করা শেষে থানার ভেতরের গাছগুলোকেই আশ্রয়স্থল মনে করেছে পাখিরা। এ অবস্থায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বর্ষার এই পাখিদের রেখেছেন অতিথির মর্যাদায়!
কেউ যাতে পাখিদের ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনের সমন্বয়ে পাখি সুরক্ষায় একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
নাসিরনগর উপজেলায় তিতাস, লঙ্গন, বেমালিয়া, খরাতি ও ধলেশ্বরীসহ পাঁচটি নদী এবং শাপলা, আকাশি, মেদীর হাওড়সহ অন্তত ১৯টি বিল রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এসব মুক্ত জলমহালে মাছ, ব্যাঙ এবং শামুকসহ নানা প্রাকৃতিক খাবার অঢেল পরিমাণে থাকে। ফলে এসব জলাশয়ে অবাধ বিচরণ করে বর্ষার পাখিরা।
গত এক দশক ধরে পাখিরা নাসিরনগর থানা প্রাঙ্গণের গাছগুলোতে আবাসস্থল তৈরি করছে। সম্প্রতি নবনির্মিত থানা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কারণে বেশ কিছু বড় গাছ কেটে ফেলায় তাদের আবাসস্থল কিছুটা সংকুচিত হয়।
থানা কম্পাউন্ডে গিয়ে দেখা যায়, থানার পূর্ব দিকের কড়ই, মেহগনিসহ বিভিন্ন গাছ পানকৌড়ি পাখিতে ছেয়ে গেছে। কালো পাখির কারণে ঢেকে গেছে গাছের সবুজ পাতা। এছাড়াও কিছু সাদা বক এবং বালি হাঁস দেখা গেছে।
নাসিরনগর থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম, জুয়েল রানা ও রাখাল চন্দ্র দাস বলেন, প্রতিদিন ডিউটির পাশাপাশি পাখিদের যাতে কেউ ক্ষতি না করতে পারে, সেজন্য ওসি তাদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। যদি কেউ ঢিল অথবা গুলতি ছোড়ে, তাদের ধরে আনারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, একবার ঢিল দেওয়ার অপরাধে এলাকার কয়েক যুবককে ধরে এনে ভবিষ্যতে পাখি শিকার করবে না মর্মে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা।
পাখি সুরক্ষা কমিটির সদস্য আব্দুল হান্নান বাংলানিউজকে জানান, পাখি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই পাখি সুরক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
নাসিরনগর উপজেলা সদরের বাসিন্দা শামসুজ্জামান চৌধুরী সুমন ও মুরাদ মৃধা জানান, থানার গাছে আশ্রয় নেওয়া এই পাখিগুলোকে দেখতে নানা বয়সী মানুষ ভীড় করে। আগন্তুকরা এক সঙ্গে এতো পাখি দেখে মুগ্ধ হয়।
নাসিরনগর থানার ওসি আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, বর্ষার এ সময়ে পানকৌড়ি, বালি হাঁস, পান্তামুখি, ডাহুক, মাছরাঙ্গা ও বিভিন্ন প্রজাতির বক হাওরে চষে বেড়ায়। এসব পাখিদেরই একটি অংশ নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে থানার ভেতরের গাছগুলোকে বেছে নিয়েছে।
ওসি আরও জানান, একসময় এলাকার বিভিন্ন বাড়ির গাছে পাখি বসা করতো। স্থানীয়রা পাখি শিকারে নেমে পড়ে। শিকারীর ভয়ে পাখিগুলো থানার ভেতরের গাছগুলোতে বসতে শুরু করে।
পাখিগুলোকে কেউ যাতে আক্রমণ না করে সেজন্য থানার পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হয়। কেউ বিরক্ত করে না বলে পাখিগুলো নিরাপদ একটা পরিবেশ পায়। ফলে থানা কম্পাউন্ডটি এখন পাখির অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।
ওসি বলেন, প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাখিগুলো খাবারের সন্ধানে বিল, হাওড়ে চলে যায়। আবার সন্ধ্যার আগ মুহূর্তেই থানা প্রাঙ্গণের গাছগুলোতে ফিরে আসে। পাখিদের সুরক্ষা এবং অভয়ারণ্য সৃষ্টির জন্য থানা প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণসহ নানা পরিকল্পনা থানার পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. বজলুর রশীদ বলেন, হাওর বেষ্টিত নাসিরনগরে অসংখ্য জলাশয় রয়েছে। এসব জলাশয় প্রাকৃতিকভাবে পাখিদের খাবারের বিশাল ভাণ্ডার। তাই এ এলাকায় পাখির অভয়ারণ্য সৃষ্টি হয়েছে। পাখিদের সু-রক্ষার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৫
এমজেড/এসএইচ