সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরে: গাছে গাছে কলস। একটি-দু’টি নয়।
শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের আগনুকালী গ্রাম। শনিবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে এ গ্রামে প্রবেশ করে বেশ কয়েকটি স্থানে গাছে বাঁধা কলসের দেখা মিলল। এক জোড়া খুঁড়লে পেঁচা কলসের মুখে বসে থাকতে দেখা গেলো। এছাড়া অন্যান্য গাছে শুধু কলসই দেখা গেলো। কলসের আশপাশে কোনো পাখির দেখা মিলল না।
বাংলানিউজের সিনিয়র ফটো সাংবাদিক নূর বললেন, পাখিরা হয়তো খাবার সন্ধানে বেরিয়েছে। খুব সকাল আর সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত ছাড়া বেশির ভাগ সময়ই তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
এ গ্রামের পাখিপ্রেমী যুবক মামুন বিশ্বাস। পাখির প্রতি তার গভীর ভালোবাসা। এমন ভালোবাসা থেকেই নিজের পকেটের টাকা খরচ করে পাখিদের প্রজনন রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তিনিই এ কলস বাসা কার্যক্রমের মূল উদ্যোক্তা।
চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি গাছে গাছে কলস বাঁধার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেন। তার সঙ্গে আছেন আরও চার/পাঁচজন সহযোগী।
মামুন বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, পাখিদের আমি খুব ভালোবাসি। আমাদের চারপাশের গাছপালা যেভাবে ধ্বংস হচ্ছে, তাতে পাখিদের বসবাসের জায়গা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাখিদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে গাছে গাছে কলস বাঁধার উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন গাছে প্রায় ৫৫টি কলস বাঁধা হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০৯টি কলস বাঁধা হয়েছে। আরও ৭০টি কলস রয়েছে, যা পরে বাঁধা হবে। শুধু আমাদের গ্রামেই নয়, পাশের গ্রামের গাছগুলোতেও এভাবে কলস বাঁধা হবে।
আটটি কলসে আট জোড়া ভাত শালিক বাচ্চা তুলেছে জানিয়ে মামুন বলেন, ত্রিশটা কলসের মধ্যে এখন পাখির বাসা রয়েছে। বাকিগুলো অবশ্য খালি।
প্রথম প্রথম এ ব্যাপারটিকে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ পাগলামি হিসেবে মূল্যায়ন করলেও এখন স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছেন বলে জানালেন এ কার্যক্রমের উদ্যোক্তারা।
আবদুল গফুর নামে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলাম, কিভাবে দেখছেন এ ব্যাপারটিকে? উত্তরে তিনি বললেন, উদ্যোগটি অবশ্যই ভালো। এ গ্রামে আগের মতো পাখি নেই, গাছগাছালিও নেই। সারাদেশে একই অবস্থা। গাছ কেটে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। পাখিগুলো যাবে কোথায়, বলেন?
পাখি বিষয়ক লেখক, গবেষক এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, যে সব পাখি আমাদের চারপাশের গর্তে বাসা করে কেবল তারাই এখানে বাসা বাধবে। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে ভাত শালিক (Common Myna), ঝুঁটি শালিক (Jangle Myna), খয়রালেজ কাঠশালিক (Chestnut-tailed Starling), খুঁড়লে পেঁচা (Spotted Owlet) । অন্যপাখিদের বাসা বাধার সম্ভাবনা খুবই কম।
তিনি আরও বলেন, বড় আকারের কলস বেঁধে দিলে হয়তো বিলুপ্ত লক্ষ্মীপেঁচা (Bran Owl) বাসা বাধতে পারে। এ পাখিটি প্রজনন সংকটের কারণে দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি আশাব্যঞ্জক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের পরিচিত পাখিরাও তো বাসা বাধছে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের পরামর্শ নিলে মামুনের এ উদ্যোগ হয়তো আরও সফলতার মুখ দেখবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ‘দ্য বার্ড সেইফটি হাউজ’ (The Bird Safety House) নামে একটি পেইজ খোলা হয়েছে। তবে এ মহৎ কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই পাখি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৫
বিবিবি/আরএম