ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

শহুরে আবর্জনা থেকে যোগ হচ্ছে বিষাক্ত নাইট্রোজেন

পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৫
শহুরে আবর্জনা থেকে যোগ হচ্ছে বিষাক্ত নাইট্রোজেন

ঢাকা: নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ছাদের উপর জমে থাকা ময়লার আস্তরণ ও শহুরে ময়লার স্তূপ থেকে বিষাক্ত নাইট্রোজেন যোগ হচ্ছে পরিবেশে।

জমে থাকা ময়লার স্তূপে সূর্যের আলো পড়লে নাইট্রোজেন গ্যাস নিঃসরণ হয়।

গবেষকদের মতে, সূর্যের আলোয় নাইট্রোজেন যৌগ হয়ে দু’টি ভিন্ন আকারে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। একটি হলো বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও২) এবং নাইট্রাস অ্যাসিড।

সম্প্রতি বোস্টনে অনুষ্ঠিত দ্য আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির কনফারেন্সে বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য তুলে ধরেন।

তাদের মতে, লন্ডনের আকাশ ধোঁয়াটে হয়ে থাকার কারণ, এই ধোঁয়া সৃষ্টিকারী গ্যাস হতে পারে।

অতীতে ধারণা করা হতো, অন্ধকারের এ ধরনের গ্যাস শোষিত হলেও নাইট্রেজেনের ক্ষেত্রে তা কর্যকর নয়। গবেষকরা জার্মানে পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, সেখানে ছাদের ওপর জমে থাকা ময়লা সূর্যের আলো ও ছায়া- উভয় অবস্থায় নাইট্রোজেন গ্যাস নিঃসরণ করে।

শহর ও আবর্জনা
কানাডার দ্য ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো’র রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক জেমস ডোনাল্ডসন গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দেন। অতীতে গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট সূর্যের আলো তৈরি করে ময়লার ওপর ফেলে জেমস দেখেছেন, তা থেকে নাইট্রোজেন উপাদান তৈরি হয়। যা শহরের বাতাসের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

তার এ গবেষণা ছড়িয়ে দিতে এবার জার্মানের লাইপ্‌ৎসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেন জেমস।

তারা একটি টাওয়ারে দু’টি তাক তৈরি করেন, যেখানে সমপরিমাণ বাতাস যাবে, তবে একটি তাকে সূর্যের আলো পৌঁছাবে-অন্যটিতে পৌঁছাবে না।

সেখানে নাইট্রোজেনের আলোকরাসায়নিক ক্রিয়া পরীক্ষায় দেখা যায়, ছায়ার তুলনায় সূর্যালোকে ১০ শতাংশ কম নাইট্রেট নিঃসরণ হয়। এর কারণ, সূর্যের আলো নাইট্রেট শোষণ করে।

টরেন্টো ফিরে গবেষকরা অনুসন্ধান করেন-সূর্যের আলোতে নাইট্রোজেন নিঃসরণ হওয়ার পরে কোথায় যায়। এতে দেখা যায়, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রাস অ্যাসিড (এইচওএনও বা এইচএনও২) একই সঙ্গে পরিবেশে মিশে যায়।

একদিকে যেমন এনও২ বিষাক্ত, অন্যদিকে এইচওএনও ওজন স্তরের জন্য ক্ষতিকর। আর এই গ্যাসের কারণেই শহরের আকাশে আলোকরাসায়নিক ধোঁয়া সৃষ্টি হয়।

শহুরে আকাশ ও ধোঁয়া
দ্য ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্ক-এর উলফসন অ্যাটমোসফেয়ারিক কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরির গবেষক ডা. জেমস লি বলেন, একটি শহরের বিভিন্ন উপাদান থেকে যে পরিমাণ নাইট্রোজেন অক্সাইড (এনওএক্স) ময়লা শোষণ করে বলে মনে করা হতো, নতুন এ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে তার অনেকটাই সূর্যের আলোয় যৌগ করে দু’ভাবে বাতাসে ছেড়ে দেয় ময়লা ও ময়লার স্তূপ।

লন্ডনের বাতাস সম্পর্কে ডা. লি বলেন, হিসাব অনুযায়ী যে পরিমাণ এইচওএনও লন্ডনের বাতাসে থাকার কথা, দেখা গেছে তার চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি থাকে। যে কারণে লন্ডনের আকাশে ধোঁয়াশা দেখা যায়। কিন্তু এতদিন এ উৎস গবেষকদের অজানা ছিল। এই অজানা বিষয়টি ওজনস্তরের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পেতে এবং বাতাসের অবস্থা পর্যবেক্ষণেও আবহাওয়া অধিদফতরের সহায়ক হবে।

‘ক্লিন এয়ার ইন লন্ডন’ ক্যাম্পেইন গ্রুপের প্রতিনিধি সায়মন বিরকেট বলেন, লন্ডনের বাতাস দূষণ মুক্ত করতে ও স্বাস্থ্য সচেতনতায় এ গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে কি কি করা উচিত বিজ্ঞানীদের কাছে থেকে এখন সে পরামর্শ পাওয়া দরকার, যোগ করেন সায়মন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৫
এটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।