শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): ‘আমার বেশ মনে পড়ছে, একদিন আমার জীবনের মহা অনুভূতির কথা- আমার ছেলে মারা গেছে, আমার মন তীব্র পুত্রশোকে যখন ভেঙে পড়ছে ঠিক সেই দিনই সেই সময়ে আমার বাড়িতে হাস্নাহেনা ফুটেছে। আমি প্রাণভরে সেই হাস্নাহেনার গন্ধ উপভোগ করেছিলাম...’
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এভাবেই তার জীবনের মহা অনুভূতির সঙ্গে এই ফুলটিকে ভালোবেসে গেঁথেছিলেন।
হাসনাহেনা ফুটলে সে জানান দেবেই তার উপস্থিতি। যতবার পথ ধরে এগিয়েছি কোথাও কোনো গন্তব্যের পানে, ততবারই উপলব্ধি করেছি, পথের আশেপাশে কোনো হাসনাহেনার ঝোপ থেকে সে তার তীব্র সুঘ্রাণ চারপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কী অপূর্ব সেই সুগন্ধ!
কিছুদিন আগে তথ্য সংগ্রহের কাজে ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিক লাইন ধরে হাঁটছিলাম। তখন সকাল আটটার কাছাকাছি। হঠাৎ হাসনাহেনার সুমিষ্ট গন্ধ তাড়া করলো আমাকে। সিদ্ধান্ত নিলাম– হাসনাহেনার কাছে গিয়ে দাঁড়াবো। তাকে শুভেচ্ছা জানাবো মনে মনে- সুঘ্রাণ ছড়িয়ে চারদিক মুখরিত করার জন্যে।
কাছে গিয়ে দেখি একি! এত্তো ফুল! পাতাই তো দেখা যাচ্ছে না! আর কী ঘ্রাণ! ছোট্ট ছোট্ট গুচ্ছফুলে যার শোভা প্রকাশিত। মুহূর্তেই চোখ জুড়ালো। মন জুড়ালো। জুড়ালো নাশিকতন্ত্রও। চা শ্রমিকদের একটি পরিত্যক্ত ঘরের পাশে ক সৌন্দর্য-সুঘ্রাণ নিয়ে পৃথিবীকে জানান দিচ্ছে তার নিজস্ব গৌরব।
হাসনাহেনার রাজত্ব শুরু হয় রাতে। সন্ধ্যা হতে না হতেই ওরা হাত ধরাধরি করি মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। মাতাল করা তীব্র গন্ধে সবাইকে সে পাগল করে তোলে। মুগ্ধতা তার এখানেই।
এমনই তীব্র সৌরভময় হাসনাহেনা। এর ইংরেজি নাম একাধিক। Night-blooming Cestrum, Lady of the Night, Queen of the Night, Night-blooming Jasmine। বৈজ্ঞানিক নাম Cestrum nocturnum। সম্ভবত এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে আমাদের দেশে এসেছে। গাছ ঝোপ আকারের হয়।
ফুলের দলদণ্ড সরু ও দীর্ঘ। তার প্রান্তে ছোট পাঁচটি পাপড়ি। ফোটে থোকায় থোকায়।
ডালের আগায় ছোট ছোট অসংখ্য থোকা। হালকা সবুজ আর হালকা হলুদের মিলিত সাদা রং। প্রতিটি ফুল লম্বাটে ধরনের। ২ সেমি লম্বা ও ৫ পাপড়ি। কলম করে এ ফুলটি চাষ করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫
বিবিবি/এএ