ঢাকা: ‘কাঁকড়াবিছে’--- কথাটা বলার সাথে সাথে আপনার পর্দায় ভেসে ওঠে যে ছবি, তা এক পুঁচকে প্রাণির। কিন্তু সেটা ভাবলে তা হবে মহা ভুল! আমরা যার কথা বলছি, সে পুঁচকে নয় মোটে।
সুপ্রাচীনকালের এক সামুদ্রিক কাঁকড়াবিছের কথা বলছি আমরা। ওর বৈজ্ঞানিক নামটিও বেশ বাহারি--- ‘পেনতেকোপতেরুস দেকোরাহেনসিস’ (Pentecopterus decorahensis)। আজ থেকে প্রায় ৪৬ কোটি বছর আগে ওরা দাপিয়ে বেড়াতো উত্তর আমেরিকা মহাদেশের সমুদ্র তলদেশে। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের বেশিরভাগ এলাকাই তখন ছিল মহাসাগরের নিচে। এই অতিকায় কাঁকড়াবিছেরাই ছিল সমুদ্রের আদিতম শিকারি প্রাণি। ওদের ছিল প্রায় এক ডজন থাবাওয়ালা হাত। আর এসব হাত গজাতো ওদের মাথার দুই পাশে। ওদের লম্বা লেজের আগাটা ছিল চ্যাপ্টা আর সূঁচালো। অনেকটা বল্লমের মতো। ওরা যে যগের বাসিন্দা, সে যুগটাকে বলা হয় ‘ওর্দোভিসিয়ান যুগ’।
সে যুগে ওরাই ছিল ‘সাগর-ডাকাত’। সাগরতলের একমাত্র শিকারী । আর বাকি সব সামুদ্রিক প্রাণি ছিল ওদের শিকার।
মাত্র কিছুকাল আগে বিজ্ঞানীরা ওদের কথা জানতে পেরেছেন--- যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া নদীর তলদেশে পাওয়া ডজনখানেক ফসিল থেকে।
“This is the first real big predator,” –সম্প্রতি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞানের অধ্যাপক জেমস ল্যামসডেল এভাবেই তুলে ধরলেন ওদের পরিচয়।
আইওয়া জ্যুলজিক্যাল সার্ভের একদল গবেষক ওদের ফসিল আইওয়া নদীর উজানে; নদীতলের প্রায় ৬০ফুট নিচে।
ওদের নামটা কিন্তু অন্য কোনো সামুদ্রিক প্রাণির নামের সাথে মিল রেখে রাখা হয়নি; বরং আকৃতিগত সাদৃশ্যের কারণে প্রাচীন কালের গ্রিক জাহাজ পেনতেকোনতার্স-এর নামের সাথে মিল রেখে রাখা হয়েছে‘পেনতেকোপতেরুস দেকোরাহেনসিস’।
গবেষক ল্যামসডেল বলেন, ‘ওরা ছিল খুবই আগ্রাসী,বদরাগী স্বভাবের অতিকায় বপুধারী সাগর-পতঙ্গ। ভাগ্যিস, কয়েক কোটি বছর আগে ওরা মরেটরে গেছে!’
রসিকতা করে তিনি বলতে ছাড়েননি: ‘ওরা যদি আজ থাকতো আর আমাকে বলা হতো ওদের পাশাপাশি সাঁতার কাটতে, আমি কখনোই রাজি হতাম না!’
ঠিকই তো, কেইবা আর চাইবে দৈত্যাকায় কাঁকড়াবিছের কবলে পড়ে বেঘোরে পিতৃদত্ত প্রাণটা খোয়াতে!
বাংলাদেশ সময়: ২২২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৫
জেএম